বিশেষ সংবাদ:
পুলিশের বাধার মুখে বিশ্ব নারী দিবসের শোভাযাত্রা করতে পারেনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দল। শুক্রবার সকালে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। এরপর তারা শোভাযাত্রা বের করলে পুলিশ বাধা দেয়।
এসময় নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিয়ে পুলিশের বাধার প্রতিবাদ জানায়। পরে পুলিশ তাদেরকে ঘিরে ফেললে এক পর্যায় নারী কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে চলে যায়।
মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস বলেন, “এটা দুর্ভাগ্যজনক। নারী দিবসেও নারীদের একটা শান্তিপূর্ণ মিছিল করতে দিল না পুলিশ। দেশের নারী সমাজ কেমন আছে এটাই তার প্রমাণ। এভাবে আমাদের শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা পণ্ড করে দেয়ায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”
তবে যতটুকু করার অনুমতি ছিল ততটা করতে দেওয়া হয়েছে বলে জানান পুলিশের মহিলা শাখার এডিসি ফারজানা ইয়াসমিন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “পারমিশন ছিল সমাবেশের। তারা বক্তব্য দিয়েছেন সেখানে আমরা বাধা দেয়নি। যতটুকু পারমিশন ছিল তা আমরা করতে দিয়েছি।”
শোভাযাত্রা কেন করতে দেওয়া হলো না প্রশ্নে তিনি বলেন, “আজ জুম্মার সময় গাড়ি চলাচল করছে। এই শোভাযাত্রা করতে দিলে যানবাহন চলাচলের সমস্যা সৃষ্টি হবে। সেজন্য করতে দেওয়া হয়নি। যতটুকু পারমিশন ছিল ততটুকু করতে দেওয়া হয়েছে।”
বিশ্ব নারী দিবসে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দেশের নারী সমাজকে অভিনন্দন জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, “আজ দেশের নারীরা অবহেলিত, নির্যাতিত। আজকে তাদের দুরাবস্থার কথা বলতে হয়… বাংলাদেশ আজকে একটা ধর্ষণের দেশে পরিণত হয়েছে… এমন কোনও দিন নাই, মাস নাই, সপ্তাহ নাই যখন দেশের নারীদের ওপর নির্যাতন চলছে না, ধর্ষণ চলছে না।”
‘‘তার চেয়ে বড় কষ্টের বিষয়, এসব ধর্ষণের ব্যাপারে কোনও বিচারের প্রয়োগ আমরা দেখতে পারছি না। কারণ এই ধর্ষণের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের অনেকে জড়িত, তাদের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা জড়িত। আরও দুঃখের বিষয় যারা নিজেদের নারীবাদী হিসেবে পরিচয় দেন, যারা নারীদের পক্ষে কাজ করে বলেন, তারাও কিন্তু খুব একটা সোচ্চার হচ্ছেন না। কারণ তারাও ভয়ভীতির মধ্যে আছে।”
আইনজীবীদের ভোটের প্রসঙ্গ টেনে আমীর খসরু বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এখন দখলের রাজনীতি চলছে, সিলেকশনে রাজনীতি চলছে। হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ পর্যন্ত দখল করার প্রক্রিয়া চলেছে তা দেখেছেন। আইনজীবীদের ভোট হচ্ছে … ওখানে দখল করার কি আছে? সারা দেশে জনগণের ভোট তো দখল হয়ে গেছে… এখন আইনজীবীদের ভোটও দখল করতে হবে, ব্যবসায়ীদের ভোটও দখল করতে হবে।”
“প্রতিটি ক্ষেত্রে এই যে দখলের প্রতিক্রিয়া এটা শুধু নারী নয়, বাংলাদেশের নাগরিকরা বঞ্চিত হচ্ছে, তাদের সব অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে।”
এই অবস্থা থেকে উত্তোরণে নারী সমাজকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘‘আগামী দিনের বাংলাদেশ যদি আমরা নারীদের ক্ষমতায়ন করতে চাই প্রথমে বাংলাদেশের নাগরিকদের ক্ষমতায়ন করতে হবে। দেশের নাগরিকরা যদি অধিকারহীন হয়ে যায়, ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয় তাহলে নারীদের ক্ষমতায়নের সুযোগ থাকবে না, কারও ক্ষমতায়নের সুযোগ থাকবে না।”
বাংলাদেশে নারীদের ক্ষমতায়নে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সমাবেশে আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘‘আমরা চাই, আমরা নারী সমাজ মিলে যেন দেশটা, সমাজটাকে বদলে দিতে পারি। যে সমাজে আমরা রুখে দাঁড়াতে পারব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারব, সবাই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব এবং নারীদের পক্ষে দাঁড়াতে পারব সেই সমাজ চাই আমরা।”
দেশের বর্তমান অবস্থা পরিবর্তনে মহিলা দলের কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান রেখে মহিলা দলের প্রধান বলেন, ‘‘আজকে আমরা শপথ নিতে চাই, আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, নারীর অধিকার ফিরিয়ে আনব, দেশ বাঁচাব, মানুষ বাঁচাব, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।”
নারী দিবসে মহিলা দলের সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আজকের এই দিনে আমরা যত নারী এখানে উপস্থিত হয়েছি তার চেয়ে দেখুন কত বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কতখানি ভয় পায় ওরা! আমরা যদি পাঁচ জন নারী থাকতাম সেখানে পাঁচশ পুলিশ মোতায়েন থাকত। এখানেই আমাদের বিজয়। কেন ভয় পায়? কারণ আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করি, সত্য কথা বলি।”
বিশ্ব নারী দিবসে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের র্যালিকে কেন্দ্র করে ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন গলিতে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এসময় রায়ট কার, জলকামানের গাড়িও ছিল সেখানে।
Leave a Reply