বিশেষ সংবাদ:
লঙ্কানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টি-২০ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন এবারও পূরণ হলো না। শনিবার ওপেনার কুশল মেন্ডিসের দুর্দান্ত ব্যাটিং এবং পরে পেসার নুয়ান থুশারার হ্যাটট্রিকে শ্রীলঙ্কার কাছে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজ ২-১এ হারলো স্বাগতিক বাংলাদেশ। সিলেটের মাঠে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ২৮ রানে হেরেছে টাইগাররা। ম্যাচ ও সিরিজ জয়ের জন্য ১৭৫ রান করতে নেমে থুশারার হ্যাটট্রিকে ৩২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। তারপরও রিশাদ হোসেনের ৩০ বলে ৫৩ রানের ইনিংসে শেষ পর্যন্ত ১৪৬ রানে তুলে বড় ব্যবধানে হারের লজ্জা থেকে রক্ষা পায় টাইগাররা। নির্ধারিত ৪ ওভারে ২০ রানে হ্যাটট্রিকসহ ৫ উইকেট নেন ম্যাচসেরা হনডান হাতি মিডিয়াম পেসার নুয়ান থুশারা।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। প্রথম ডেলিভারির পর ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন ম্যাথুজ। তার জায়গায় ওভারের বাকি পাঁচ বল করতে আক্রমণে আসেন স্পিনার ধনাঞ্জয়া। প্রথম ডেলিভারিতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ১টি চারে ৭ রান করা লিটন দাস। চতুর্থ ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসে হ্যাটট্রিক করে টাইগারদের ব্যাটিং ল-ভ- করে দেন পেসার থুশারা। দ্বিতীয় বলে অধিনায়ক নাজমুলকে ১ রানে বোল্ড, তৃতীয় বলে তাওহিদ হৃদয়কে শূন্যতে বোল্ড এবং চতুর্থ বলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে খালি হাতে লেগ বিফোর আউট করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন এই সিরিজে প্রথম খেলতে নামা থুশারা। পঞ্চম শ্রীলঙ্কান ও টি-২০ ইতিহাসে ৫৭তম হ্যাটট্রিকের নজির গড়েন ৭টি ম্যাচ খেলা থুশারা। এছাড়া বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-২০তে হ্যাটট্রিক করা ষষ্ঠ বোলার হলেন তিনি।
পরের ওভারে ১১ রানে সৌম্যকেও বোল্ড করেন থুশারা। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা পারফরমার জাকের আলীকে ৪ রানে বিদায় করে বাংলাদেশকে খাদের কিনারায় ঠেলে দেন হাসারাঙ্গা। ৩২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে টাইগাররা। টি-২০তে সবচেয়ে কম ৬ রানে উইকেট হারালো বাংলাদেশ। আগেরটি ২০১১ শেরেবাংলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়েছিল টাইগাররা।
হারের মুখে ছিটকে পড়া বাংলাদেশকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করেন রিশাদ। সপ্তম উইকেটে মাহেদিকে নিয়ে ৩১ বলে ৪৪ এবং অষ্টম উইকেটে তাসকিনের সঙ্গে ২১ বলে ৪১ রান যোগ করেন রিশাদ।
স্পিনার থিকশানার করা ইনিংসের ১৫তম ওভারে ৩টি ছক্কা মারা রিশাদ, ২৬ বলে টি-২০তে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি করেন। আফিফ হোসেনের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে আট বা এরপর নেমে হাফ-সেঞ্চুরি করলেন রিশাদ। ১৭তম ওভারে দলীয় ১১৭ রানে থিকশানার বলে ক্যাচ আউট হওয়ার আগে ৭টি ছক্কায় ৩০ বলে ৫৩ রান করেন রিশাদ। এরপর তাসকিনের ২১ বলে ৩১ রানের সুবাদে হারের ব্যবধান কমিয়ে ১৪৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ ইনংসের দুই বল বাকি থাকতে। থুশারা ৪ ওভার বোলিংয়ে ৫ উইকেট নেন। ৮ ম্যাচের টি-২০ ক্যারিয়ারে এই প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন থুশারা।
এর আগে ওপেনার কুশল মেন্ডিসের হাফ-সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৪ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পেয়েছে শ্রীলঙ্কা।
সিলেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের নেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। আগের দুই ম্যাচেও টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করেছিল টাইগাররা। মাশরাফি বিন মর্তুজা ও মাহমুদুল্লাহর পর বাংলাদেশের তৃতীয় অধিনায়ক হিসেবে তিন ম্যাচ সিরিজের সবগুলোতেই টস জিতলেন শান্ত। লঙ্কান ওপেনার ধনাঞ্জয়াকে ৮ রানে শিকার করে ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার তাসকিন। এরপর একই ওভারের শেষ চার বলে তিনটি চার আদায় করে নেন কামিন্দু মেন্ডিস। ১ উইকেটে ৪১ রান নিয়ে পাওয়ার প্লে শেষ করে সফরকারীরা।
স্বাগতিক বোলারদের সামাল দিয়ে বড় জুটির ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন আরেক ওপেনার কুশল ও কামিন্দু। তবে অষ্টম ওভারে কামিন্দুকে (১২) থামিয়ে ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার রিশাদ হোসেন।
কামিন্দু ফেরার পর বোলারদের ওপর চড়াও হন কুশল ও নতুন ব্যাটার শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক হাসারাঙ্গা। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৩১ বলে দ্রুত ৫৯ রান তুলেন তারা। এরই মধ্যে ২৫ বলে টি-২০তে ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন কুশল।
কুশলের হাফ-সেঞ্চুরিতে ১২তম ওভারে দলীয় ১শ’ রানের কোটা স্পর্শ করে। পরের ওভারে কুশল-হাসারাঙ্গার জমে যাওয়া জুটি ভাঙেন পেসার মোস্তাফিজ। ১টি করে চার-ছক্কায় ১৩ বলে ১৫ রান তুলে আউট হন হাসারাঙ্গা। অধিনায়ক ফেরার পর চারিথ আসালঙ্কা ব্যক্তিগত ৩ রানে ফিরলেও লঙ্কার রানের চাকা সচল রাখেন কুশল। টি-২০তে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে ১৭তম ওভারে তাসকিনের দ্বিতীয় শিকার হন ৬টি করে চার-ছক্কায় ৫৫ বলে ৮৬ রান করা কুশল।
দলীয় ১৪০ রানে কুশল ফেরার পর শেষ ১৯ বলে ৩৩ রানের সুবাদে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৪ করে শ্রীলঙ্কা। এরমধ্যে মোস্তাফিজের শেষ ওভার থেকে ১৪ রান করে।
শেষদিকে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ৭ বলে ১টি ছক্কায় ১০, দাসুন শানাকা ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯ বলে ১৯ এবং সাদিরা সামারাবিক্রমা অপরাজিত ৭ রান করেন। তাসকিন ২৫ রানে ও রিশাদ ৩৫ রানে ২টি করে এবং শরিফুল ২৮ রানে ও মোস্তাফিজ ৪৭ রানে ১টি করে উইকেট নেন
সিরিজের প্রথম ম্যাচ শ্রীলঙ্কা ৩ রানে এবং দ্বিতীয়টিতে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জিতেছিলো।
আগামী ১৩ মার্চ থেকে চট্টগ্রামে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা।
Leave a Reply