বিশেষ সংবাদ:
অনির্দিষ্টকালের জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। প্রশাসনের হল ছাড়ার নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করে মধ্যরাতেও শিক্ষার্থী বিক্ষোভে প্রকম্পিত হয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। রাতভর ক্ষোভ প্রদর্শদের পর বুধবার (০১ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্ত্বরে মানববন্ধন আহ্বান করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার শিক্ষার্থীরা। তাই আমরা বর্তমান পরিস্থতিতে নিজেদের জায়গা থেকে প্রতিবাদ না করলে আমাদের ভোগান্তি এবং সেশনজট বাড়বে। আমরা সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় চাই।
তারা বলেন, হল-ক্যাম্পাস বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে ফেলার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বুধবারের মধ্যে হল ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়াও সম্ভব নয়। বর্তমান পরিস্থিতি এড়াতে অনতিবিলম্বে সমস্যাগুলোর সমাধানে আমরা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করবো। আমাদের অধিকারের প্রশ্নে দাবি তুলে ধরবো।
সঙ্কট মোকাবিলায় শিক্ষার্থীরা বেশকিছু দাবি জানিয়েছেন। এগুলো হলো- অবিলম্বে ক্যাম্পাস বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে, ক্যাম্পাস খুলে সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে হবে, ২৭ তারিখের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে, শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে হবে, প্রশাসনের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত অনলাইনে অনুষ্ঠিত ৯২তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। একইসঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও প্রশাসনের হল ছাড়ার নির্দেশনা শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অমিত সরকার বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ শিক্ষকদের সমস্যা। আগে থেকে বাস বন্ধ করার কারণে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি শেষ নেই। এখন আবার বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলো বন্ধ করে দিয়ে ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা এখন চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু এখন যদি এভাবে বাসায় চলে যেতে হয় তাহলে ধারাবাহিক পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটবে।’
মার্কেটিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই এসবের সাথে যুক্ত না। কোনো রাজনৈতিক সংগঠনও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সঙ্কটের সঙ্গে যুক্ত না। কিন্তু শিক্ষার্থীরাই এসব সঙ্কটের ভুক্তভোগী। আমরা হলে থাকতে চাই। আমরা শিক্ষার্থীদের এই অসুবিধার সমাধান চাই।’
ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন সিস্টেম (আইসিটি) ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী পারভেজ মোশারফ বলেন, ‘হল বন্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। সামনে আমাদের পরীক্ষা। এই সময় হলে থাকাটা জরুরি। কর্তৃপক্ষের দ্রুত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন চাই।’
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ১৪ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী রুবিনা আক্তার বলেন, এতদিন পর্যন্ত আমাদের ক্লাস পরীক্ষা বাতিল হয়েছে, আমরা কিছু বলি নাই এ আশায় যে, কয়েকদিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এখন হলো উল্টোটা। ক্লাস-পরীক্ষার পরে এবার হলগুলো বন্ধের ঘোষণা দিলো। এ অবস্থায় অবশ্যই শিক্ষার্থীদের এসব অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের অবস্থান নেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল বন্ধ রাখার বিষয়ে সিন্ডিকেট সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, উপাচার্য আশঙ্কা করছেন আবাসিক হলগুলোতে প্রচুর অস্ত্র ঢুকছে। শিক্ষার্থীদের টাকা দেওয়া হচ্ছে। এতে এখানে অন্য রকম ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি হলগুলোও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
Leave a Reply