বিশেষ সংবাদ:
বিএনপির নেতা-কর্মীরা ক্লান্ত হলেও হতাশ নয় বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, ‘কেউ বলেন বিষণ্ন, কেউ বলেন হতাশা। আমি বলতে পারি ক্লান্ত। কর্মীরা ক্লান্ত, তাঁরা হতাশ নয়। আজকে দেশের স্বার্থে আমাদের লড়াই করতে হবে।’
গতকাল শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে একটি হোটেলে জিয়া মঞ্চের ঢাকা বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় সরকার পতনের চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নিজ দলের নেতৃত্ব নিয়েই প্রশ্ন তোলেন গয়েশ্বর। দলের মধ্যে কিছু চর আছে, যাদের ভূমিকায় আন্দোলন গতি হারাচ্ছে এমন অভিযোগ করে গয়েশ্বর বলেন, ‘সব দলের মধ্যেই বিভিন্ন চর থাকে। আমাদেরও সব যে একেবারে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন, ইমানদার, আমি বিশ্বাস করি না। কারও নাম বলতেও চাই না। আমি তাঁদের চিনি। যারা নাকি দলের নির্দেশনায় থাকে, যারা নাকি নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে থাকে, যারা আন্দোলন পরিচালনা করে, তাঁদের মধ্যে যদি এ রকম ভেজাল মাল থাকে, তাহলে আমাদের দুঃখ আছে কিনা জানি না। তবে পথটা আরও লম্বা হবে।’
ওয়ান ইলেভেনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনে যারা ষড়যন্ত্রের বিপক্ষে খালেদা জিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছিল, তাঁদের সংখ্যা খুব কম। সেদিন যারা ছোবল দিতে চেষ্টা করেছে, তারা যদি নেতৃত্বের অগ্রভাগে থাকে, তাহলে যারা আন্দোলন করে, তাদের উৎসাহটা কতটুকু থাকে।’
নেতা-কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে গয়েশ্বর বলেন, ‘সবার কাছে আমার অনুরোধ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আমরা যেন সঠিক কথাটা বলি। বেঠিক কোনো কথা বলে তাঁকে যেন বিভ্রান্ত না করি। তাহলে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত আসবে।’
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে গয়েশ্বর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক কী তাহলে নিষিদ্ধ পল্লি? সেখানে সাংবাদিকদের কেন প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ জন্য সাংবাদিকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে আমরাও তাঁদের (সাংবাদিকদের) জন্য রাজপথে নামব। কারণ সাংবাদিক কোনো দলের জন্য নয়।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক ও জিয়া মঞ্চের সভাপতি আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব মো. আব্দুর রহিম প্রমুখ।
এদিকে শিগগিরই বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি আসবে বলে জানিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ। এই আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অংশ নিতে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার রাজধানীর মগবাজারে এলডিপির সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানিয়ে কর্নেল অলি বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কৃষক-শ্রমিক-যুবক-ছাত্র সমাজ সকলে নিজ নিজ জায়গা থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব বিএনপির নেতৃত্বে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করব।’ তিনি বলেন, ‘সকলে ঐক্যবদ্ধ হোন, প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইনশা আল্লাহ এই বাকশালি সরকারের পতন হবে, দেশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।’
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে যুগপৎ আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ ও দলগুলোর কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলেন অলি। সরকার পতনের আন্দোলন সফল না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে অলি বলেন, ‘কী কারণে আমরা সফল হলাম না, এর উত্তর দিতে পারবেন বিএনপি মহাসচিব। আমার কাছে এর কোনো উত্তর নাই। কারণ আমি হলাম ঢাল নাই, তলোয়ার নাই, নিধিরাম সরদার, ছোট একটা পার্টি। আর আমার ওপরে কোনো দায়িত্ব পড়ে নাই।’ বিএনপিকে কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে অলি আহমেদ বলেন, ‘বিএনপিকে যা পরামর্শ দেওয়ার, তা মিটিংয়ে দেওয়া হয়েছে। সবার সামনে বলা সম্ভব হবে না।’
Leave a Reply