বিশেষ সংবাদ:
ডলি কনস্ট্রাকশনের মালিক নাসিরউদ্দিনকে তলব করেছে দুদক । কার্যাদেশ বন্ধক রেখে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব রূপালী ব্যাংক থেকে ঋণের নামে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ৪শ’ ৪৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ব্যাংকের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ অর্থ হাতিয়ে নেয় মেসার্স ডলি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’ নামক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মালিক, ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থার সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলীয় বাদী হয়ে গত ৩ এপ্রিল ২০২৪ মঙ্গলবার এ মামলা করেন। মামলায় দ- বিধির ৪০৯, ৪০৬, ৪২০, ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে।
এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন, ডলি কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন, প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী ডলি আক্তার, রূপালী ব্যাংকের সাবেক উপ-মহা ব্যবস্থাপক খালেদ হোসেন মল্লিক, ব্যাংকটির সাবেক সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক মো. সোলায়মান, রূপালী ব্যাংক স্থানীয় কার্যালয়ের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. গোলাম সারোয়ার, বর্তমান পল্টন করর্পোরেট শাখার উপ-মহা ব্যবস্থাপক এএসএম মোরশেদ আলী, সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, জিওগ্রাফ সার্ভে করর্পোরেশন লি:র মালিক মো. পারভেজ বিন কামাল। এর আগে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেয় কমিশন।
প্রসঙ্গত, গতবছর ৪ আগস্ট ‘দুদকের দায়মুক্তি ব্যাংক কর্মকর্তাসহ তিনজনকে/শত শত কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শত শত কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অগ্রণী ব্যাংকের মহা-ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম মোল্লাসহ তিন জনকে দায়মুক্তি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ‘জাবের অ্যান্ড জোবায়ের’, ‘ডলি কনস্ট্রাকশন’, ‘সোনালী টেক্সটাইল’ এবং ‘জজ ভুইয়া (জেবি) গ্রুপকে নামমাত্র জামানতের বিপরীতে ঋণ প্রদানের অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু পরিপূর্ণ অনুসন্ধান না করেই সংশ্লিষ্টদের দায়মুক্তি দেন তৎকালীন চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ নেতৃত্বাধীন কমিশন। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ অভিযোগগুলো পুনঃঅনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে পূর্বতন অনুসন্ধানের রেকর্ডপত্র তলব করেন। এ নির্দেশনার প্রেক্ষিতে দুদক অভিযোগগুলো পুনঃঅনুসন্ধানে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। এর মধ্যে ডলি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’র বিরুদ্ধে কোনো ধরণের জামানত ছাড়াই ৭কষ্ফ ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পুনঃঅনুসন্ধানে সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলীকে কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। গভীর অনুসন্ধানে তিনি অভিযোগের সত্যতা পান। পুনঃঅনুসন্ধানে উদঘাটিত হয় বিপুল অর্থ আত্মসাতের পূর্ণাঙ্গ চিত্র। এ প্রেক্ষাপটে তিনি পুনঃঅনুসন্ধান প্রতিবেদনে মামলা রুজুর সুপারিশ করেন। কমিশন মামলাটির অনুমোদন দেন। অনুসন্ধান চলাকালে গতবছর ১৯ সেপ্টেম্বর আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব। তাতে উল্লেখ করা হয়, ডলি কনস্ট্রাকশনের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা যথাযথভাবেই অনুসন্ধান না করেই ইকবাল মাহমুদের কমিশন আত্মসাতকারীদের দায়মুক্তি দেয়। পুনঃঅনুসন্ধানের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর মধ্য দিয়ে ইনকিলাব প্রতিবেদনের বস্তুনিষ্ঠতাই প্রমাণিত হলো।
এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরষ্পর যোগসাজশে রূপালী ব্যাংকের মতিঝিল করর্পোরেট শাখা থেকে ৭৫১ কোটি ৯৯ লাখ ৮৬ হাজার ১০৬ টাকা উত্তোলন করেন। এ অর্থ থেকে ডলি কনস্ট্রাকশন সুদাসল বাবদ ৩০৮ কোটি ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে। অবশিষ্ট ৪৪৩ কোটি ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার কোটি আত্মাসাৎ করে।
মামলার তদন্তকালে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিললে তাদেরকেও আসামি করা হবে-মর্মে উল্লেখ করা হয় এজাহারে।
Leave a Reply