বিশেষ সংবাদ:
ইতিমধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩ আসনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কোন দলই। সরকার গঠন করতে ২৭২ আসনে জয় পেতে হত।
বিজেপি নাকি কংগ্রেস কার নেতৃত্বে ভাবতের নতুন সরকার গঠিত হবে কিংবা নরেন্দ্র মোদিই কি তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন সে নিশ্চয়তা পেতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
এনডিটিভি সূত্র বলছে, এবারের লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ পেয়েছে ২৯৩ টি আসন। এর মধ্যে বিজেপি ২৪০ টি আসনে জয়ী হয়েছে। কংগ্রেস পেয়েছে ৯৯ টি আসন। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ২৩২ টি আসনে জয় পেয়েছে। অন্যান্য দল পেয়েছে ১৮ টি আসন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নীতিশ-নাইডুর হাতে বিজেপির বাঁচা মরা নির্ভর করছে। কেননা লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একক ভাবে ২৪০ টি আসন পেলেও সরকার গঠন করতে বিজেপির আরও ৩২ টি আসন লাগবে। এনডিএ জোটের শরিকদের প্রধান অন্ধ্র প্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি ১৬ আসন পেয়েছে এবং বিহারে মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের জনতা দল-ইউনাইটেড (জেডি–ইউ) জয় পেয়েছে ১২ আসনে। নীতিশ ও নাইড়ু কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিলে বিজেপির সরকার গঠনের হিসেবে পাল্টে যেতে পারে মুহুর্তে।
এদিকে ৯৯ আসন পেয়ে সরকার গঠন করতে চায় কংগ্রেস। তাদের জোট ‘ইন্ডিয়া’ পেয়েছে ২৩২টি আসন। যেহেতু কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তাই এবার সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে নীতিশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডুর দল। তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে কংগ্রেসের যোগাযোগের খবর পাওয়া গেছে। যদি তারা বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙে কংগ্রেসে যোগ দেয় তাহলে কংগ্রেসেরও সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে।
যদি বিজেপি সরকার গঠন করেও সে সরকার পূর্ণ মেয়াদ পার করতে না পারার একটা ঝুঁকি রয়ে যাবে। এক্ষেত্রে উত্তরাধিকার নিয়ে বিজেপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে কাজে লাগাতে পারে কংগ্রেস। ইতিমধ্যে সেরকম একটা খেলা কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচনে দেখা গিয়েছিল।
ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যেখানে এরকম ঝুলন্ত সরকার হয়েছে, নাজুক সরকার গঠিত হয়েছে, দুর্বল সরকার গঠিত হয়েছে সেখানেই মেয়াদপূর্ণ করতে পারেনি বরং মধ্যবর্তী নির্বাচন অবধারিতভাবে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এবার ভারতের লোকসভা নির্বাচনের পর ভবিষ্যত কি হবে সেটার জন্য আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু ভারতে যে একটি দুর্বল সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে সেটি নিশ্চিত।
এদিকে জয়ের পর নরেন্দ্র মোদি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “টানা তৃতীয়বারের মতো এনডিএ’র উপর আস্থা দেখিয়েছে দেশের মানুষ। ভারতের ইতিহাসে এটি এক নজিরবিহীন মুহূর্ত। আমি আমার পরিবারকে এই ভালবাসা এবং আশীর্বাদের জন্য অভিবাদন জানাই।
আমি দেশবাসীকে আশ্বাস দিচ্ছি যে, তাদের আকাঙ্খা পূরণের লক্ষ্যে আমরা নতুন শক্তি, নতুন উদ্যম, নতুন সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাবো। সকল কর্মিদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাই।”
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই নির্বাচনের ফলাফল জনগণের ফলাফল। এটি জনগণ ও গণতন্ত্রের জয়। আমরা বলছিলাম যে লড়াই মোদি বনাম জনগণের। ১৮ তম লোকসভা নির্বাচনের ফল আমরা বিনীতভাবে মেনে নিচ্ছি। জনগণ কোনো দলকে এককভাবে ভোট দেয়নি। বিজেপি শুধু একজনকে ভোট দিতে বলেছিল, কিন্তু ফল মোদির বিরুদ্ধে গেছে। এটা তার রাজনৈতিক ও নৈতিক পরাজয়। যে ব্যক্তি তার নামে ভোট চেয়েছে, এটা তার জন্য বিরাট পরাজয়।’
রাহুল গান্ধী উত্তরপ্রদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ‘ইউপির জনগণ দেশের রাজনীতি এবং সংবিধানের বিপদ বুঝতে পেরেছে, তারা সংবিধানকে রক্ষা করেছে। আমি সব রাজ্যকে ধন্যবাদ জানাতে চাই তবে আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাব উত্তরপ্রদেশকে। কংগ্রেস দল ও ইন্ডিয়া জোটকে সমর্থন করার জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।’
Leave a Reply