বিশেষ সংবাদ:
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই ম্যাচের আগে ভারতের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কা ছিল সেই ২০০৭ সালে। টস, একাদশ নির্বাচন ও বোলিং পরিকল্পনায় চমক দেখানো বাংলাদেশের নির্বিষ বোলিংয়ে ১৭ বছর আগের রেকর্ড টপকে গেল ভারত। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে প্রতিপক্ষ যে টার্গেট দিয়েছিল, তা তাড়া করতে যে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলা প্রয়োজন, বাংলাদেশের ব্যাটারদর যে সেটারই বড্ড ঘাটটি। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে, একপেশে ম্যাচে কোনো লড়াই জমাতে ব্যর্থ হয়ে বড় হারের স্বাদ পেল নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে সুপার এইটের ম্যাচে বাংলাদেশের পরাজয় ৫০ রানে। ভারতের ৬ উইকেটে ১৯৫ রানের জবাবে শান্তদের ইনিংস থেমেছে ৮ উইকেটে ১৪৬ রানে। এই নিয়ে সুপার এইটে টানা দ্বিতীয় ম্যাচ হারল বাংলাদেশ।
টসে জিতে আগে বোলিং নেওয়া বাংলাদেশ দল একাদশ সাজায় চমক দেখিয়েই। বাদ পড়েন সহ-অধিনায়ক ও অভিজ্ঞ পেসার তাসকিন আহমেদ, তার জায়গায় দলে আসেন ব্যাটার জাকের আলি। এরপর বোলিং আক্রমণেই অব্যাহত থাকে চমক।
দুই প্রান্ত থেকে স্পিন আক্রমণ শানান সাকিব আল হাসান ও মাহেদি হাসান। তবে কেউই সুবিধা করতে পারেননি। মাহেদি কিছুটা হিসেবী হলেও সাকিব শুরু থেকেই ছিলেন খরুচে। তিন ওভারেই ভারত করে ফেলে ২৯ রান। সাকিবের ওপর চড়াও হয়ে চার ও ছক্কা মেরে ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠা রোহিত একই ওভারে টাইমিংয়ের গড়বড় করে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন ১১ বলে ২৩ রানে।
মাহেদি একপ্রান্তে রানের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখলেও অন্যপ্রান্তে যথাযথ সঙ্গ পাননি। সেটা কাজে লাগিয়ে পুরো আসরে রানের জন্য সংগ্রাম করা কোহলি দারুণ কিছু শটে সচল রাখেন রানের চাকা। ৮ ওভারেই ৭১ রান করে ফেলা ভারতকে চাপে ফেলেন তানজিম হাসান সাকিব।
দুর্দান্ত এক কাটারে পরাস্ত করেন কোহলি। এগিয়ে এসে বড় শট খেলতে গিয়ে ক্লিন বোল্ড হন এই তারকা ব্যাটার। তার আগে করেন ৩ ছক্কা ও এক চারে ৩৭। ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে পাল্টা আক্রমণের আভাস দিয়েছিলেন সুরিয়াকুমার যাদব। তবে আগ্রাসী তানজিমই হাসেন শেষ হাসি। নিজের দ্বিতীয় বলেই বাউন্সার ধরতে না পেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন এই ডানহাতি ব্যাটার।
এরপর আবার ধীরগতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল ভারতের ইনিংসের। তবে মুস্তাফিজুর রহমানের এক ওভারে দুটি চার ও এক ছক্কা মেরে বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দেন রিশাভ পান্ত। রিশাদকেও একটি করে চার ও ছক্কা মারার পর অতি আগ্রাসী হতে গিয়েই শেষ পর্যন্ত বিপদ ডেকে আনেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন ২৪ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলার পর।
মাঝে দুই ওভার মাহমুদউল্লাহ ও মুস্তাফিজুর টাইট বোলিং করলেও এরপরই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে ঝড় তুলেন হার্দিক ও শিভাম দুবে। তাতে শেষ তিন ওভারে আসে ৪০ রান। এর মধ্যে ইনিংসের শেষ ওভারে মুস্তাফিজুর দিয়ে বসেন ১৮ রান, ওয়াইড ও নো বল সহ ওভারে বল করেন আটটি।
ইনিংসের শেষ বলে তিন চার মেরে মাত্র ২৭ বলে ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন হার্দিক। আসরে ভারত অলরাউন্ডারের এটিই সর্বোচ্চ স্কোর। বোলারদের কঠিন দিনে ৩২ রানে দুই উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার ছিলেন তানজিম।
বিশাল রান তাড়ায় বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ভালো একটা শুরু। পুরো আসর জুড়েই হতাশ করা ওপেনিং জুটি এদিন শুরুটা মন্দ করেনি। তবে প্রতিপক্ষের শক্তিশালী বোলিং লাইনআপকে চাপে রাখতে যেমন আগ্রাসী ব্যাটিং প্রয়োজন, সেটা আর হয়নি।
ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী লিটন দাস হার্দিককে ছক্কা মেরের পরের বলে আউট হন বোলারের বুদ্ধিমত্তায়। আগের বলে ছয় হজম করের পরের ডেলিভারি একটু স্লো করে দেন হার্দিক, লেগ সাইডে একই শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৩-তে।
২৫ রানে থাকা অবস্থায় জাসপ্রিত বুমরাহর বলে উইকেটেত পেছনে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন তানজিদ। তবে তা তালুবন্দি করতে পারেননি পান্ত। তবে সেটা তিনি কাজে লাগাতে পারেননি। উল্টো বেশ কিছু ডট বল খেলে চাপ বাড়ান।
সেটা আলগা হয় শান্তর ব্যাটে। প্রথম ১২ বলে ৭ রান করার পর হার্দিকের এক ওভারে দুই ছক্কা মারেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। আক্রমণে এসেই তানজিদকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন কুলদীপ যাদব। শেষ হয় তরুণ ওপেনারের ৩১ বলে ২৯ রানের ইনিংস, যা দলের জন্য খুব একটা কাজে আসেনি।
ক্রমশ বল ও রানের ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় ব্যাটারদের এরপর চাপ যায় বেড়ে। তা কাটাতে গিয়ে দুর্দান্ত বোলিং করা কুলদীপকে স্লগ করতে গিয়ে অল্পেই ফেরেন তাওহীদ হৃদয়। এক চার ও ছক্কায় ১৩ রান করে সাকিবও ধরেন সাজঘরের পথ।
ফিরতি স্পেলে এসে এই ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার শান্তকে থামান বুমরাহ। স্লো কাটারে বিভ্রান্ত হয়ে ক্যাচ তুলে দেন থার্ড ম্যানে। তার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৪০ রান। ৩২ বলের ইনিংস সাজান তিন ছক্কা ও ১ চারে। এক রানেই আউট হন জাকের আলি, ততক্ষণে অবশ্য বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে।
মাঠে আসা বাংলাদেশের ভক্তদের এরপর কিছুটা বিনোদনের খোরাক যোগান রিশাদ। বিগ হিটের জন্য আলাদা সুনাম থাকা এই লেগি প্রথমে আর্শদীপকে মারেন এক ওভারে চার ও ছক্কা। এরপর স্পিনার আকসার প্যাটেল ছক্কায় ওড়ান দুই বার।
শেষ পর্যন্ত বুমরাহকে সীমামা ছাড়া করতে গিয়ে শেষ হয় রিশাদের ১০ বলে ২৪ রানের ক্যামিও। এতে কেবল পরাজয়ের ব্যবধানটাই যা একটু কমেছে। মাত্র ১৯ রানে তিন উইকেট শিকার করেন কুলদীপ।
Leave a Reply