মতামত:
সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়ে জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান অবৈধ মাফিয়া সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ভারতের সাথে যে ১০টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে তা গোলামির নবতর সংস্করণ মাত্র। কানেক্টিভিটির নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের এক অংশ থেকে আরেক অংশ পর্যন্ত রেল যোগাযোগের নামে করিডোর প্রদানের মাধ্যমে যা করা হয়েছে তাতে আমাদের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। আমাদের নিশ্চয়ই ১৯৭২ সালে ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত ২৫ বছরের গোলামি চুক্তির কথা স্মরণ আছে। ৫২ বছর পর সে ধারাবাহিকতায় গত ২২ জুন ২০২৪, ভারতের সাথে সমঝোতার আড়ালে যেসকল চুক্তি করা হলো তা বাংলাদেশকে আজীবনের জন্য ভারতের গোলামে পরিণত করবে। এর ফলে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এসব চুক্তি-স্মারকের মাধ্যমে আমাদের দেশের প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে ভারতের জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার অংশে পরিণত করা হয়েছে, যা খুবই বিপজ্জনক এবং দেশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি। এটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও জোটনিরপেক্ষ নীতির পরিপন্থী। বস্তুত, এ সকল সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে নিরাপত্তা কৌশলগত “বাফার স্টেট” হিসেবে ভারতকে ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে চায়। এর ফলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জটিলতার মধ্যে জড়িয়ে পড়বে। যে সাতটি সমঝোতা স্মারক নতুন করে সই করা হয়েছে, সেগুলোর প্রায় সবগুলোই বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল কেন্দ্রিক। প্রয়োজনের সময় বাংলাদেশ ভূখণ্ডকে ভারতের সামরিক ও বেসামরিক পণ্য পরিবহনের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘চিকেন নেক’কে বাই-পাস করে ব্যবহার করার সুদূরপ্রসারী মহাপরিকল্পনা থেকেই এসব সমঝোতা চুক্তি করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে জলাঞ্জলি দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদে ভারতের গোলামি চুক্তির গভীর ফাঁদে ফেলার সেই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। জাতীয় স্বার্থ-বিরোধী এহেন চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না।
শাসক গোষ্ঠী দাবি করে যে, গত দেড় দশকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ‘অনন্য উচ্চতায়’ পৌঁছেছে। কিন্তু সম্পর্কের তথাকথিত “সোনালি অধ্যায়”-এর সময়কালে বাংলাদেশের জনগণের তরফে প্রাপ্তি শূন্যের কোঠায়। এ সময়ে দুই দেশের মধ্যকার লেনদেনের প্রধান অংশজুড়ে রয়েছে কানেক্টিভিটির নামে একের পর এক ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর সুবিধা প্রদান। ট্রানজিট-করিডোর দেয়ার রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও কৌশলগত ঝুঁকি সত্ত্বেও সবকিছুই একতরফাভাবে করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বার্থকে কোন গুরুত্বই দেয়া হয়নি। একদিকে ভারত পেয়েছে অবাধ স্থল ও নৌ ট্রানজিট যা ভারতের অবশিষ্ট অংশের সাথে উত্তর পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার্স এর যোগাযোগের সময় ও দৈর্ঘ্য কমিয়েছে সর্বনিম্ন প্রায় তিন চতুর্থাংশ। কলকাতা আগরতলার ১৭০০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে দাড়িয়েছে ৩৫০ কিলোমিটারে। ভারত পেয়েছে বাংলাদেশের পায়রা, মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের অগ্রাধিকার সুবিধা। অন্যদিকে বাংলাদেশ নেপালের মাত্র ২১/২২ কিলোমিটারের ট্রানজিট সুবিধা ভারতের কাছে থেকে আদায় করতে পারেনি। একতরফা আগ্রাসী বাণিজ্যে বাংলাদেশকে ভারতের অবাধ বিপনি কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। দু দেশের সামগ্রিক ২৬ বিলিয়ন বাৎসরিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের হিস্যা মাত্র দুই বিলিয়ন। এর মাঝেও রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। তীব্র বেকারত্বের বাংলাদেশে কাজ করছে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় যুবক। ভারতের রেমিট্যান্স আহরণের প্রধান উৎসের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৪ নম্বরে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী সংসদে জানিয়েছেন, গত ১০ মাসে ভারতীয়রা নিয়ে গেছে ৫০.৬০ মিলিয়ন ডলার। আমরা জানি, এর বাইরেও অবৈধ পন্থায় নিয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ ডলার।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
বর্তমান অবৈধ সরকার যেহেতু বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে প্রতিনিধিত্ব করে না এবং তাদের জনগণের কাছে কোন জবাবদিহিতা নেই, তাই দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্যও তারা সচেষ্ট নয়। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেল করিডোর দেওয়ার চুক্তি, তিস্তা প্রকল্পে ভারতের সহযোগিতা গ্রহণ, প্রতিরক্ষা ও সামরিক সহযোগিতা, ঔষধ সংক্রান্ত সমঝোতা, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতের অবাধ বিচরণ, ভারতের ইনস্পেস এবং বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের যৌথ স্যাটেলাইট সমঝোতা, ডিজিটাল পার্টনারশিপ, গ্রিন পার্টনারশিপ, সমুদ্র সহযোগিতা ও সুনীল অর্থনীতি ইত্যাদি নানা নাম দিয়ে যে দশটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলো তাতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি শূন্য। বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণের চাইতে ভারতের কাছে শেখ হাসিনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দায়বদ্ধতা থেকে এসব সমঝোতা সই হয়েছে, তা জনগণের কাছে স্পষ্ট। এসকল চুক্তির সাথে বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্খা পূরণের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা নেই। সে কারণেই বহু পূর্বে ভারত ঘোষিত সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলারের ভারতীয় ঋণ চুক্তির (লাইন অব ক্রেডিট-এলওসি) বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া তরান্বিত করার বিষয়ে এ সফর ছিল নীরব। ডলারকে পাশ কাটিয়ে ভারতীয় মুদ্রায় বাণিজ্য পরিচালনার বিষয়টি উঠে এসেছে আলোচনায়, অথচ বাংলাদেশের রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের অন্যতম প্রধান মুদ্রাই হচ্ছে মার্কিন ডলার। এভাবে একতরফা আগ্রাসী বাণিজ্যে বাংলাদেশকে ভারতের বাজারে পরিণত করা হয়েছে। ট্যারিফ, নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার পরিহার করে বিপুল বাণিজ্যিক ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার কিছুই এসব সমঝোতায় স্থান পায়নি।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
ভারত সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ভারত যদি আমাদের তিস্তা প্রজেক্টটা করে দেয়, তাহলে আমাদের সব সমস্যাই তো সমাধান হয়ে গেল’। শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে সাধারণ কূটনৈতিক দরকষাকষির ন্যূনতম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। সংবাদ সম্মেলনে তিস্তার পানির অভাবে পর্যুদস্ত অসহায় মানুষের আর্তনাদকে শেখ হাসিনা ‘প্যাঁ প্যাঁ’ করা বলে আখ্যায়িত করেছেন যা সমগ্র জাতির সাথে তামাশা ও হাস্য রসিকতার শামিল। আমরা সকলেই জানি, কেউ কেবলমাত্র বিরক্ত হলেই ‘প্যাঁ প্যাঁ’ না করতে বলে। একদিকে ভারত থেকে তিস্তার পানি আদায়ে ব্যর্থতা, অপরদিকে অসহায় মানুষের সাথে এ নিয়ে তামাশা- এটি জাতির জন্য নিতান্তই দুঃখজনক। শেখ হাসিনা তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তিকে পুরোপুরি অবজ্ঞা করেছে। তিস্তা চুক্তি তাদের এজেন্ডাতেই স্থান পায়নি। এদিকে অনেকে মনে করেন, পানি মানুষের জীবন জীবিকা ও জলবায়ুর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং পানি নিয়ে ভবিষ্যতে বিভিন্ন দেশের মধ্যে যুদ্ধ পর্যন্ত গড়াতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতীয় রেল ট্রানজিটের ফলে বাংলাদেশের জনগণ উপকৃত হবে। অথচ বিশেষজ্ঞরা রেল করিডোরের ফলে বাংলাদেশের লাভ নিয়ে দারুন সংশয় প্রকাশ করেছেন। জানা যায়, এ ট্রেন বাংলাদেশের কোনো মানুষ ব্যবহার করতে পারবে না। একতরফাভাবে ভারতকে করিডোর সুবিধা দেয়ার জন্য এ চুক্তি করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে না। তাহলে শেখ হাসিনা কিভাবে দাবি করেন এ রেল ট্রানজিট বাংলাদেশের মানুষের উপকারে আসবে? অপরদিকে এ রেল ট্রানজিটের কোন সমীক্ষা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের কারগরি ও অর্থনৈতিক মূল্যায়ন এবং সামরিক বিশেষজ্ঞদের ইতিবাচক বিশ্লেষণ ছাড়া এ ধরনের রেল-করিডোর প্রদান আত্মঘাতী ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী হবে মর্মে মন্তব্য করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা রেল-করিডোরকে ইউরোপের সাথে তুলনা করে বলেছেন, তারা পারলে আমরা পারবো না কেন। কথা হলো ইউরোপের ক্ষেত্রে বিষয়টি বহুদেশীয়, আমাদের ক্ষেত্রে যা কেবলই দ্বিপাক্ষিক। তাছাড়া ইউরোপের সকল দেশে সুশাসন ও ন্যায়নীতি বিরাজমান, যা আমাদের দেশে অনুপস্থিত। ইউরোপের সীমান্তগুলোতে আমাদের মত কাঁটাতারের বেড়া নেই, ঝুলন্ত ফেলানিও নেই। অতএব আমাদের বিষয়টি ইউরোপের সাথে তুলনীয় নয়।
একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় রাখার জন্য উচ্চ মূল্য নির্ধারিত হবে সেটাই স্বাভাবিক, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও আমরা তার ব্যতিক্রম দেখি না, বিশেষ করে যখন খোদ প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেন, “আমরা কোন প্রতিদান চাই না। আমরা ভারতকে যা দিয়েছি সেটা তারা সারা জীবন মনে রাখবে।” সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “তলে তলে আপোষ হয়ে গেছে। ভারত আছে আমরা আছি।” সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছিলেন, “ভারতে গিয়ে বলেছি, এই সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে।” ফলে এদেশে একের পর এক প্রহসনের নির্বাচন হয়, ২০১৪ তে ভোটারবিহীন, ২০১৮ তে নৈশ, আর ২০২৪ এ ডামি।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
এ সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে দশটি চুক্তি-সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, বরাবরের মতো এবারও এসবের বিশদ বিবরণ প্রকাশিত হয়নি। তবে ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়, দেশি ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এবং বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে যতটুকু জানা গেছে তাতে –
• “গ্রীন পাওয়ার” বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা সমঝোতা স্মারকের প্রত্যাশার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ভারতীয় সহায়তার রামপাল ও জাপানী সহায়তার মাতারবাড়ী কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা ইতোমধ্যেই সুন্দরবন ও উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছি। ক্রমবর্ধমান কয়লা নির্ভর প্রকল্প সামনে রেখে গ্রীন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ কতটা আছে সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
• ভারতে চিকিৎসা প্রার্থীদের ভিসা সহজীকরণে ই-ভিসা, চিকিৎসা সেবায় আমাদের আরো বেশী পরনির্ভর করবে। প্রয়োজন ছিল আমাদের দেশেই চিকিৎসা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তার কার্যকর চুক্তি। দেশের স্বাস্থ্য অবকাঠামো ও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরীর অতি প্রয়োজনীয় অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব না দিয়ে ভারতীয় হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীর ভিড় বৃদ্ধির উদ্যোগ নিশ্চয়ই জনবান্ধব নয়। কোনো দেশের সরকারপ্রধান নিজ থেকে দেশের মানুষকে অন্য দেশে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করে- এটি বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।
• এ সফরে আইসিটি নিয়ে সহযোগিতার বিষয়টি স্পষ্ট নয়। ভবিষ্যত অর্থনীতিতে অপার সম্ভাবনার আইসিটি সেক্টরে সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা ও জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে কি না সে আশঙ্কা সাধারণ জনগণের মতো আমাদেরও।
• পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ স্থল-সীমান্ত ভারত বাংলাদেশ। একটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা সে দেশের প্রতিরক্ষা নীতির প্রথম ও প্রধান অগ্রাধিকার। সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন ও প্রশিক্ষণ সহয়তা বৃদ্ধির সহযোগিতার বিষয় ভবিষ্যতে আমাদের নিরাপত্তা সুসংহতকরণে বিরূপ প্রভাব ফেলবে মর্মে সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। পশ্চিমা গণমাধ্যম “India Bangladesh boost defence ties to counterweigh China” এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে।
• রাডার পরিচালনার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ যদি প্রতিবেশীর হাতে থাকে, তাহলে তা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য যে মারাত্মক হুমকির কারণ হবে, তা বোঝার জন্য সামরিক বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।
• এদিকে ২০২২ সালের এক MoU তে উল্লিখিত ভারতীয় রোড ইনিশিয়েটিভ এর অংশ হিসাবে হিলি
মেঘালয় প্রশস্থ সড়ক সংযোগ ও ১১ কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র সেতু বিশেষ সামরিক পরিস্থিতিতে সমগ্র রংপুর বিভাগকেই বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে বলে সামরিক বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।
ভারত কেবল আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই নয়, সরকারি প্রশাসনযন্ত্র, জাতিগঠনমূলক নানাবিধ কর্মকান্ড ও বিভিন্ন স্পর্শকাতর অর্থনৈতিক প্রকল্প যেমন- রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রাডার স্থাপন ইত্যাদি ক্ষেত্রেও হস্তক্ষেপ করছে। এক্ষণে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়ও ভারতীয় হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি হলে আমাদের সার্বভৌমত্ব মারাত্বত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
• যে সমুদ্র সম্পদের জন্য বাংলাদেশকে ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হয়েছে, বাংলাদেশের সেই সমুদ্র সম্পদকেই ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
• আকাশ সীমান্ত ভারতের হাতে তুলে দিতেই যৌথ স্যাটেলাইট নির্মাণের চুক্তি করা হয়েছে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আমাদের জন্য সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গ। আগেই বলেছি, এবারের সফরে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি এজেন্ডাতেই ছিল না, অথচ এটাই হওয়া উচিত ছিল সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। দীর্ঘ দিন ধরে আমরা লক্ষ করছিলাম এই অনির্বাচিত সরকার তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ভারত ও চীন উভয়ের সাথেই লুকোচুরি খেলছিল। সাম্প্রতিক কালের ডামী নির্বাচনে সমর্থন আদায়ের দূরভিসন্ধি থেকে সরকার তিস্তা প্রকল্পকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করেছে। এ প্রকল্পে চীনের আগ্রহের কথা আমরা জানি। অপরদিকে ভারত নির্বাচনের পরপরই তার পররাষ্ট্র সচিবকে পাঠিয়ে জানিয়ে দেয় ভারত তিস্তা প্রকল্পে অংশ গ্রহণ করতে চায়। প্রায় দেড় দশক ধরে নানা অহেতুক অযুহাতে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর হচ্ছে না, অপরদিকে উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার উপক্রম। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর গত ১৪ বছরে তিস্তা শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হলেও এই সংকটের সমাধান হয়নি। আশ্চর্যের বিষয় এখনও এটি রয়ে গেছে রুদ্ধকক্ষের দ্বিপাক্ষিক একান্ত আলোচনার স্তরে। এহেন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার লক্ষ্যে তিস্তা পানি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রশ্ন হল, যাদের বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে তিস্তার ন্যায্য পানি থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে, সেই তাদেরকেই তিস্তার পানি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত করলে তা যে স্বার্থ সাংঘর্ষিক ও আত্মঘাতী- সেটা বাংলাদেশের মানুষ বোঝে। শেখ হাসিনা অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ভারতের একতরফা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই উঠে পড়ে লেগেছে। “তিস্তা প্রকল্পটি ভারত করে দিলে সব সমস্যারই সমাধান হয়ে যায়”- শেখ হাসিনার সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্যের মাধ্যমে তার উদগ্র ভারততোষণ নীতি দেশবাসীর সামনে পুনরায় উন্মোচিত হয়েছে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার বর্তমান অবৈধ সরকার প্রকারান্তরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের উপর অর্পন করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। যা বর্তমান গণবিচ্ছিন্ন সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বহিঃপ্রকাশ।
বিশ্লেষকরা অবশ্য এধরনের সাদা হাতি প্রকল্প গ্রহণ বিলিয়ন ডলার লুট করে বিদেশে পাচারের ফন্দি হিসেবে মনে করেন। মূলত জনগণের কাঁধে লক্ষ কোটি টাকার ঋণের বোঝা চাপিয়ে টাকা পাচারের মাধ্যমে বে-নজির লুটপাটই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। অবৈধভাবে নির্বাচনী বৈতরণি পার হবার মাশুল হিসাবে বাংলাদেশ এখন একটি জটিল আন্তর্জাতিক ইস্যুতে নিজেদের জড়িয়ে ফেলতে যাচ্ছে বলে আমাদের আশঙ্কা, আমাদের নিরাপত্তার জন্য যেটা হতে পারে এক চরম হুমকি। এই সফরে তিস্তার পানি বণ্টন তথা তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের কোন কথা হয়নি, আছে ভারতীয় বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে তিস্তার পানি সংরক্ষণের বিষয়ে কী করা যায়। তিস্তায় পানিই না থাকলে পানি ব্যবস্থাপনার বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক নয় কি? এটি সময়ক্ষেপণের একটি কৌশল বলে অনেকে মনে করেন।
প্রশ্ন হলো তিস্তা প্রকল্প বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ প্রকল্প নিয়ে ভারত কিংবা অন্য কোনো দেশের সাথে আলোচনা করার কোন প্রয়োজনীয়তা আছে বলেই মনে হয় না।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
জাতিসংঘে গৃহীত কনভেনশনে পানিসম্পদ ব্যবহার বিষয়ক ‘আর্টিকেল ৫’ এবং আন্তর্জাতিক পানিসম্পদ আইনে অভিন্ন নদী বা সীমান্তবর্তী জলাধারের যৌথ ব্যবস্থাপনা ও ন্যায্য পানি বণ্টনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে বিভিন্ন দেশ অভিন্ন নদীর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করছে। অথচ, অভিন্ন নদীর পানি বন্টন সমস্যা সমাধানে ভারতের ওপর নির্ভরতা আমাদের নদীগুলোকে একে একে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আমরা স্মরণ করতে চাই, ফারাক্কা সমস্যা সমাধানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব ও পদক্ষেপের কথা। ভারতের একরোখা মনোভাবের কারণে ফারাক্কা সমস্যা যখন কিছুতেই সমাধান হচ্ছিল না, তখন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক নানা প্লাটফর্মে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৭৬ সনের ১৬ই মে ফারাক্কা অভিমূখে লং মার্চ কর্মসূচীকে নিরবচ্ছিন্ন করতে সরকারের পক্ষ থেকে কৌশলগত সহায়তা প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালের মে মাসে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ‘৪২ জাতি ইসলামিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন’, একই বছর আগস্ট মাসে কলম্বোতে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলন এবং সর্বশেষ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৩১ তম অধিবেশনে (২৬ নভেম্বর, ১৯৭৬) বাংলাদেশ কর্তৃক উত্থাপিত ফারাক্কা সমস্যা সমাধান প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণের মধ্যে দিয়ে ফারাক্কা সমস্যা সমাধান ত্বরান্বিত হয়। ৫ নভেম্বর ১৯৭৭ গ্যারান্টি ক্লজসহ বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারতের সাথে পানি সমস্যা সমাধানে এটাই ছিল বাস্তবিক অর্থে কোনো কার্যকরী দ্বিপাক্ষিক চুক্তি। তাই আমরা মনে করি, ভারতের সাথে অভিন্ন পানি সমস্যা নিরসনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান অনুসৃত নীতিই হতে পারে সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের তরফে কার্যকরী পদক্ষেপ। বাংলাদেশের জন্য পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়া অত্যন্ত জরুরি। এ সফরে লোকদেখানো মৃতপ্রায় যৌথ নদী কমিশনের রুটিন সভা ডাকার কথা ছাড়া ফারাক্কার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এটা জনগণের সাথে প্রতারণার শামিল। মূলত পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা বেসিন (river system) ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ৫৪ টি অভিন্ন নদীর পানি সমস্যা সমাধান করতে হবে। অথচ এবারের আলোচনায় বেসিন ভিত্তিক সমাধানের বিষয়টি কোন স্থান পায়নি।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোকে রেল-ট্রানজিটের মাধ্যমে সংযুক্ত করতে চায়। এ জন্য তারা শিলিগুড়ি করিডোর (যা “চিকেনস নেক” নামে পরিচিত) বাইপাস করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ভারতের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৮৬১ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৪টি নতুন সংযোগ সড়ক বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলকে যুক্ত করবে। একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আখাউড়া-আগরতলার মাঝে এরই মধ্যে রেল সংযোগ শুরু হয়ে গেছে; খুলনার মোংলা থেকে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে কার্গো সুবিধা প্রদান এবং মোংলা বন্দরকে রেল সংযোগ দ্বারা যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী ভারতের ট্রেন বাংলাদেশের দর্শর্না দিয়ে প্রবেশ করে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি সীমান্ত দিয়ে পুনরায় ভারত প্রবেশ করবে। এর ফলে সময়, দূরত্ব, ব্যয় কমবে।
পরীক্ষামূলকভাবে আগামী মাসেই বাংলাদেশ দিয়ে ভারতের রেল চলবে। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব কর্তৃক চুক্তি সই করার পরের মাসেই ট্রায়াল রান দেওয়ার ঘোষণাতেই বোঝা যায় এসব ঢাকা-দিল্লীর অনেক পূর্ব-পরিকল্পনা মাফিকই হচ্ছে। ভারতের এই ‘পরীক্ষামূলক’ প্রস্তাবের কথা শুনে ১৯৭৫ সালে ‘পরীক্ষামূলক ফারাক্কা বাঁধ’ চালুর কথা মনে পড়ে গেল। ভারত সেই যে পরীক্ষামূলক ফারাক্কা বাঁধ চালু করেছিল, তাতে বাংলাদেশ আজও কষ্ট ভোগ করছে, দেশের শতাধিক ছোট-বড় নদী শুকিয়ে বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বার্থ সুনিশ্চিত না করে ভারতকে রেল করিডোর সুবিধাপ্রদান বস্তুত ইতোপূর্বে রেল, স্থল, নৌ করিডোর ও সামুদ্রিক বন্দর ব্যবহারের চেয়ে আরো বিপজ্জনক আত্মসমর্পণ। এতে বাংলাদেশের কতটুকু লাভ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের নিজস্ব স্বার্থ সুরক্ষার ওপর সর্বোচ্চ জোর দিতে হবে। ভারতকে রেল ট্রানজিট সুবিধা দিতে হলে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে। বস্তুত দেশের জনগণের অর্থেই রেলের উন্নয়ন হয়েছে। জনগণের করের অর্থ দিয়ে রেলে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় ইউএন-এসকাপ (এশিয়া ও প্যাসিফিকের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন) থেকে ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্টের একটা প্রাক্কলন করে রাখা আছে। অর্থাৎ ট্রানজিটের বিনিময়ে বাংলাদেশ কী পাবে, তা প্রাক্কলন করে দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের এ মানদণ্ড মেনেই চুক্তিতে যাওয়া
উচিত। এই রেল-করিডোর বাংলাদেশের বাণিজ্য বৃদ্ধিতে কোনো সহায়তা করবে না। ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক
রেল যোগাযোগের বদলে নেপাল-ভুটান-বাংলাদেশ-ভারত চতুর্দেশীয় কানেক্টিভিটি সৃষ্টি করা গেলে তা বাংলাদেশের trade creation এ অবদান রাখতে পারে। উল্লেখযোগ্য যে, আঞ্চলিক বাণিজ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ‘সার্ক’ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
বিদ্যমান অবকাঠামোর উন্নতি না করে ভারতের ট্রেন চলাচল শুরু হলে তা বাংলাদেশের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি ট্রেন চলাচল রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাড়তি চাপ তৈরির আশঙ্কা করছেন যোগাযোগ অবকাঠামো বিশেষজ্ঞরা। একজন সামরিক বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি লিখেছেন, সর্বত্র বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে ভারতকে ট্রেন চলাচলের সুযোগ করে দিলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে। এতে নাগরিক হিসেবে সকলের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। করিডোরের আড়ালে সীলগালা করা ভারতীয় রেল-বগিতে সশস্ত্র সামরিক লোক ও অস্ত্র সরঞ্জাম ঢুকলে অনেকেই এসব ভারতীয় রেল-বগিগুলোকে গ্রীক মহাকাব্যের ট্রোজান হর্সের সাথে তুলনা করেন, যে কাঠের হর্সের পেটে গ্রীক সৈন্যরা লুকিয়ে ছিল, আর নিশিরাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ট্রয় নগরীকে ধ্বংস করেছিল।
উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ,
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর গুলিতে প্রতিবছর রেকর্ড পরিমাণ সীমান্ত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবার পরেও এ সফরে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার চূড়ান্তভাবে নির্লিপ্ত থেকেছে। এমনকি ভারত-নেপাল, ভারত-চীন ও ভারত-পাকিস্তান সীমান্তেও এ পরিমাণ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়না। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত অন্তত ১১ জন বাংলাদেশি সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৯ জন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের মতে, ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ১২৩৬ বাংলাদেশি নিহত এবং ১১৪৫ জন আহত হয়েছেন। এমনকি, বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিবি’র সদস্যরাও রেহাই পায়নি। শেখ হাসিনার সফরের মাত্র তিন দিনের মাথায় লালমনিরহাট সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নুরুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তাছাড়া সীমান্তে সংগঠিত ঘটনায় বুকে ও মাথায় গুলি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, অথচ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সীমান্তে একান্তই গুলি করতে হলে বুকে নয়, পায়ে গুলি করার নজীর রয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, ‘বিএসএফকে নাকি আত্মরক্ষার জন্য গুলি করতে হয়’, যা নিতান্তই হাস্যকর। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যা বন্ধে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে একটি শব্দও উচ্চারণ করার কথা শোনা যায়নি। অপরদিকে ভারতের পক্ষ থেকে সেই রুটিন আশ্বাস; আর সেটাই এই তাঁবেদার সরকারকে মেনে নিতে হয়েছে।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
শেখ হাসিনার সর্বশেষ দিল্লী সফরটি কার্যতই একপাক্ষিক। এ সফরে স্বাক্ষরিত সমঝোতা কিংবা চুক্তি বাংলাদেশের ন্যূনতম স্বার্থ সুনিশ্চিত করে না। তাছাড়া আলোচনায় এমন কিছু বিষয় এসেছে যাতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সামরিক সহযোগিতার নামে জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে আদানির সাথে বিদ্যুৎ আমদানির অন্যায্য চুক্তি, জ্বালানি ও বিদ্যুতের মতো অধিকতর কৌশলগত পণ্যের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল করে তোলার চলমান উদ্যোগ, দেশবাসী এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহল গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছে।
উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ,
বাংলাদেশের বর্তমান অবৈধ সরকার অনেক আগেই স্বাধীনভাবে পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কার্যত অক্ষম হয়ে পড়েছে। তারা রাষ্ট্রের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কেবলমাত্র ক্ষমতার দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখতে দেশি-বিদেশি সহযোগী গোষ্ঠী কিংবা প্রভুদের নিরন্তর আস্থা অর্জনে সচেষ্ট। “ঢাকা ও দিল্লী নতুন যাত্রা শুরু করেছে, উভয় দেশ রূপকল্প ২০৪১ ও বিকশিত ভারত ২০৪৭ অনুসরণ করে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ নিশ্চিত করার জন্য ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে”- শেখ হাসিনার এ বক্তব্যের মাধ্যমেই তার ভারত সফরের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। যা দেশবাসীও গভীরভাবে উপলব্ধি করেন বলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি বিশ্বাস করে। এবারের ভারত সফর ম্যান্ডেটবিহীন হাসিনা সরকারের ধারাবাহিক গোলামি চুক্তির সর্বশেষ সংস্করণ। এই চুক্তি দেশ তথা দেশের মানুষের কল্যাণে নয়, কেবলমাত্র আওয়ামী লীগের অবৈধ রাষ্ট্রক্ষমতার মেয়াদ বৃদ্ধির নজরানা মাত্র। এ সফরসহ ভারতের সাথে ইতোপূর্বে স্বাক্ষরিত সকল চুক্তি অবিলম্বে জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি। আমরা পুনর্ব্যক্ত করতে চাই, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তা বিরোধী এ সকল চুক্তি জনগণ কখনও মেনে নেবে না। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এই সকল দেশবিরোধী চুক্তি/সমঝোতা প্রত্যাখ্যান করছে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
সবশেষে, আপনাদের মাধ্যমে সমগ্র দেশবাসীর সামনে আবারও উল্লেখ করতে চাই, শেখ হাসিনার বর্তমান অবৈধ সরকার একটি অনির্বাচিত সরকার। রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের ন্যূনতম নৈতিক অধিকার নেই। আর এরকম একটি জনম্যান্ডেটবিহীন অনৈতিক সরকারের সাথে যেকোনো রাষ্ট্রীয় চুক্তি- তা সমঝোতা কিংবা অন্য যে নামেই হোক না কেন, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের সাথে প্রতারণার শামিল। বিশ্বায়ন ও মুক্ত বাজার অর্থনীতির এই যুগে সব বন্ধু রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অংশদারীত্ব বাড়াতে নানাভাবে “কানেক্টিভিটি” তৈরি করার পক্ষেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র অবস্থান। কিন্তু সড়কপথ, নৌপথ বা রেলপথে যেভাবেই কানেক্টিভিটি বাড়ানো হোক না কেন, তাতে জাতীয় স্বার্থকে বিবেচনা করতে হবে সর্বাগ্রে। কোনোভাবেই সার্বভৌমত্বের সাথে কম্প্রোমাইজ করা যাবে না। কিন্তু বর্তমান অবৈধ শেখ হাসিনা সরকার অবৈধ ক্ষমতা অটুট রাখার হীন স্বার্থে জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
Leave a Reply