বিশেষ সংবাদ :
জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বে আসার পর এটা জাতির উদ্দেশে তার দ্বিতীয় ভাষণ। এর আগে গত ২৫ আগস্ট প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি।
আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ভাষণ শুরু করেন ড. ইউনূস। শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী, বয়স্ক, বৃদ্ধ, পুরুষ, নারী সবাইকে সালাম জানিয়ে ভাষণ শুরু করেন তিনি। ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বিটিভি ওয়ার্ল্ড ও বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে একযোগে সম্প্রচার করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বক্তব্যের শুরুতে আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সব শহীদের প্রতি। আমি আরও স্মরণ করছি তাদের— যারা ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রাণঘাতী অস্ত্রের সামনে হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে, আহত হয়েছে, পঙ্গুত্ববরণ করেছে, হারিয়েছে তাদের চোখের দৃষ্টি। সেসব বীরদের স্মরণ করছি— যারা মিথ্যাচার, লুটপাট, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক দফা দাবি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি— আপনাদের ভাইবোনদের, আপনাদের সন্তানদের, যারা এই বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, আমি আগেও জানিয়েছি, আবারও জানাচ্ছি, গণ-অভ্যুত্থানে সব শহীদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। সব আহত শিক্ষার্থী শ্রমিক -জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। আহতদের দীর্ঘমেয়াদি এবং ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখা শোনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন নতুন তথ্য পাওয়ার ভিত্তিতে এই তালিকা হালনাগাদ করা হতে থাকবে।
তিনি বলেন, এই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার তার যাত্রালগ্নে ‘জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। এখন সে ফাউন্ডেশন তৈরি হয়েছে। সব শহীদ পরিবার এবং আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসাসহ তাদের পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব এই ফাউন্ডেশন গ্রহণ করছে। এই ফাউন্ডেশনে দান করার জন্য দেশের সব মানুষ এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।
গত মাসে (আগস্ট) কুমিল্লা-নোয়াখালী সিলেট অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা এসব এলাকার মানুষকে হতভম্ব করে দিয়েছে। এখানে বেশিরভাগ এলাকায় কোনও দিন বন্যা হয়নি। তারা বন্যা মোকাবিলা করায় অভ্যস্ত নন। দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে বন্যা আক্রান্ত সবাইকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসে। সেনা, নৌ এবং বিমানবাহিনী পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় করে একযোগে কাজে নেমে পড়ার ফলে মানুষের দুর্ভোগ কম হয়েছে। এর পরপরই এনজিও এবং সাধারণ মানুষ দেশের সব অঞ্চল থেকে দলে দলে এগিয়ে এসেছে। আমি বিশেষ করে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দেশের সব দুর্যোগকালে তারা সবসময় আন্তরিকভাবে এগিয়ে এসেছে। বিশেষ করে বন্যা ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে তাদের সৈনিক এবং অফিসাররা দিনের পর দিন যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছে, তার কোনও তুলনা হয় না। জনজীবনে স্বস্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তাদের ভূমিকা অনন্য।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সব সদস্যকে আমি ধন্যবাদ জানাই— তাদের সততা, ত্যাগ ও অসীম দেশপ্রেমের জন্য। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বন্যা, খরা, ঝড়, বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়সহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে আপনারা সবার শেষ ভরসার স্থান। দেশের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে আপনারা দেশের মানুষের পাশে থেকেছেন। দেশের স্বাধীনতার পক্ষে, সার্বভৌমত্বের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। দেশ গঠনেও আপনারা সবার আগে এগিয়ে এসেছেন। বিগত জুলাই হতে শুরু হওয়া গণ-অভ্যুত্থান, বন্যা, নিরাপত্তা প্রদান, অস্ত্র উদ্ধারসহ সব কার্যক্রমে আপনারা সফলভাবে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, বন্যা আমাদের জনজীবনে আরেকটি দিক উন্মোচন করলো। দেশের সব জায়গায় মানুষের সক্রিয় সহানুভূতির জোয়ার উঠেছিল অবিশ্বাস্য মাত্রায়। ব্যবসায়ী, অর্থবান ব্যক্তিরা যেমন তাদের অর্থ নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছিল, তেমনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ মানুষ, স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা জোয়ারের ঢলের মতো যার যার সামর্থ্য নিয়ে এগিয়ে এসেছে। অনেকেই ছুটে গেছে বন্যার্তদের সহযোগিতা করার জন্য। এনজিওরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে গেছে তাদের সহায়তা নিয়ে। তাদের কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি এনজিও নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি, কীভাবে সরকার তাদের কাজের সঙ্গে সরকারের উদ্যোগকে সমন্বিত করতে পারে, সেটার কাঠামো তৈরি করে দেওয়ার জন্য। বন্যা এখন চলে গেছে। কিন্তু পুনর্বাসনের কঠিন কাজ আমাদের সামনে রয়ে গেছে। সবার সহযোগিতায় আমরা পুনর্বাসনের কাজটি সফলভাবে সমাধান করতে চাই।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। যেসব ভাইবোনেরা তাদের গত ১৬ বছরের বেদনা জানিয়ে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য আমার অফিস এবং সচিবালয়ের অফিসগুলোর সামনে প্রতিদিন ঘেরাও কর্মসূচি দিয়ে আমাদের কাজকর্ম ব্যাহত করছিলেন তারা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঘেরাও কর্মসূচি থেকে বিরত হয়েছেন বটে, তবে অন্যত্র আবার তারা তাদের কর্মসূচি দিয়ে যাতায়াতে ব্যাঘাতও সৃষ্টি করেছেন। আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের ন্যায্য আবেদনের কথা ভুলে যাবো না। আমরা সব অন্যায়ের প্রতিকারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আমাদের দায়িত্বকালে যথাসম্ভব সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। আমি আবারও অনুরোধ করছি— আপনার যাতায়াতে ব্যাঘাত সৃষ্টি থেকে বিরত থাকুন। জাতি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।
তিনি বলেন, তৈরি পোশাক, ওষুধ শিল্প এসব এলাকায় শ্রমিক ভাইবোনেরা তাদের অভিযোগ জানানোর জন্য ক্রমাগতভাবে এই শিল্পের কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ রাখতে বাধ্য করছেন। এটা আমাদের অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে সেটা মোটেই কাম্য নয়। এমনিতেই ছাত্র-শ্রমিক-জনতার বিপ্লবের পর যে অর্থনীতি আমরা পেয়েছি, সেটা নিয়ম-নীতিবিহীন দ্রুত ক্ষীয়মাণ একটা অর্থনীতি। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আমরা এই অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা করছি। আমাদের উদ্যোগে সাড়াও পাচ্ছি। ঠিক এই সময়ে আমাদের শিল্প-কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে, অকার্যকর হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট আঘাত পড়বে। সেটা কিছুতেই কারও কাম্য হতে পারে না।
ইউনূস বলেন, শ্রমিক ভাইবোনদের অনেক দুঃখ আছে। কিন্তু সেই দুঃখ প্রকাশ করতে গিয়ে আপনাদের মূল জীবিকাই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে সেটা ঠিক হবে না। দেশের অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে সেটা ঠিক হবে না। মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এসব সমস্যার সমাধান আমরা অবশ্যই বের করবো। আপনারা কারখানা খোলা রাখুন। অর্থনীতির চাকা সচল রাখুন। দেশের অর্থনীতিকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে দিন। আমরা আপনাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান বের করার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করবো। মালিকপক্ষের কাছে আমাদের আবেদন, আপনারা শ্রমিকদের সঙ্গে বোঝাপড়া করুন। কারখানা সচল রাখুন। অর্থনীতির দুর্বল স্বাস্থ্যকে সবল করে তুলুন।
তিনি বলেন, ওষুধ শিল্প এবং তৈরি পোশাক শিল্প দেশের গৗরব। এর মাধ্যমে আমাদের শ্রমিক ভাইবোনেরা ও তাদের কর্মকুশলতা বিশ্বকে মুগ্ধ করেছে। এর সাফল্য এখন থমকে আছে। আমরা এই দুই শিল্পকে তাদের সম্ভাব্য শীর্ষে নিয়ে যেতে চাই। দুর্বল করার তো প্রশ্ন উঠেই না। এই দুই শিল্পের কোথায় কোথায় বাধা আছে, সমস্যা আছে সেগুলো চিহ্নিত করে তাকে বাধামুক্ত করতে চাই। আমরা বিদেশি ক্রেতাদের একত্রিত করে তাদের সহযোগিতা চাইবো— যেন বাংলাদেশের এই শিল্প দুটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি আস্থাযোগ্য হয়ে গড়ে উঠতে পারে। সব কিছুই সম্ভব যদি আমরা শ্রমিক মালিক সম্পর্কটা একটা নির্ভরযোগ্য, আনন্দদায়ক করে গড়ে তুলতে পারি। আমাদের সরকারের প্রথম মাস কাটলো। দ্বিতীয় মাস থেকে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি হিসেবে নতুন শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের সূচনা করতে চাই। এটা দেশের সবার কাম্য। দেশের নতুন প্রজন্ম নির্ভয়ে যেন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে, আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আমাদের দায়িত্ব অনেক। ন্যায়ভিত্তিক একটি সমাজ গড়ে তোলার জন্য একসঙ্গে অনেকগুলো কাজে আমাদের হাত দিতে হবে। পহেলা জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনকে দমন করতে যেসব ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছিল, এর মধ্যে হত্যা মামলা ছাড়া বাকি প্রায় সকল মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতারকৃত সকলে মুক্তি পেয়েছেন।
তিনি বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচার বিভাগের বড় সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। যোগ্যতম ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়াতে মানুষের মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ, অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগসহ অনেকগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ এবং অন্যান্য নিয়োগ সবকটাই সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাস দমন আইন ও ডিজিটাল বা সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ বাংলাদেশে বিদ্যমান সকল কালো আইনের তালিকা করা হয়েছে। অতি সত্বর এ সব কালো আইন বাতিল ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন করা হবে। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ বহুল আলোচিত ৫টি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তির জন্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
ড. ইউনূস বলেন, সম্প্রতি আমরা বলপূর্বক গুম থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশন সনদে স্বাক্ষর করেছি। ফলে স্বৈরাচার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ‘গুম সংস্কৃতি’র সমাপ্তি ঘটানোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম। এছাড়া আমরা ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৫ বছরে গুমের প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করার জন্য পৃথক একটি কমিশন গঠন করছি। যেসব পরিবার তাদের নিখোঁজ পিতা, স্বামী, পুত্র এবং ভাইদের পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে যন্ত্রণার সঙ্গে অপেক্ষা করছেন, আমরা আপনাদের বেদনায় সমব্যথী। আয়নাঘরগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এবং সেই সঙ্গে বের হয়ে আসছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের গুমের শিকার ভাইবোনদের কষ্ট ও যন্ত্রণাগাঁথা।
আমাদের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ যেন উজ্জ্বল হয় সেটা নিশ্চিত করতে শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে আমাদের পূর্ণ নজর রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে। বই সংশোধন এবং পরিমার্জনের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। এ সংস্কারের কাজ অব্যাহত থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উচ্চ প্রশাসনিক পদগুলো পূরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা বোর্ডে দখলদারিত্বের রাজনীতি বন্ধ করার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন আমাদের প্রথম মাসে দেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য মহোদয়গণ পদত্যাগ করেছেন। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এটা বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। প্রথম মাসে আমরা ক্রমাগতভাবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এমন উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার কাজ শুরু করেছি। এর ফলে সকল সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, সংবাদমাধ্যম ও মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ইতোমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা সবাইকে বলে দিয়েছি, আপনারা মন খুলে আমাদের সমালোচনা করেন। আমরা সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মিডিয়া যাতে কোনও রকম বাধাবিপত্তি ছাড়া নির্বিঘ্নে তাদের কাজ করতে পারে সেজন্য একটি মিডিয়া কমিশন গঠন করা সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন। আরও যেসব কমিশন সরকারসহ অন্য সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারে, আমরা তাদের পুনর্গঠন ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে তারা আরও শক্তিশালী হয়, জনকল্যাণে কাজ করে।
তিনি বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান টেলিফোনে এবং শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনারবৃন্দ আমার সাথে সাক্ষাৎ করে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আশ্বাস দিয়েছেন। আমার অনুরোধে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫৭ জন বাংলাদেশি, যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন সে দেশের সরকার। ইতোমধ্যে তাদের কয়েকজন দেশে ফিরে এসেছেন। এই ক্ষমা প্রদর্শন ছিল অতি বিরল একটি ঘটনা। এজন্য আমি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি আপনাদের সবার পক্ষ থেকে।
যে সব সরকার প্রধানের সঙ্গে আমার টেলিফোনে যোগাযোগ হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। আমরা ভারত এবং অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। তবে সেই সম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতা এবং সমতার ভিত্তিতে। ভারতের সাথে আমরা ইতিমধ্যে বন্যা মোকাবিলায় উচ্চপর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার আলোচনা শুরু করেছি । দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমি সার্ক (এসএএআরসি) রাষ্ট্রগোষ্ঠী পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা চাই, আমাদের দেশ যেন একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে সম্মানের সঙ্গে পরিচিত হয়। দেশের পরিকল্পনা যেন দেশের মানুষকেন্দ্রিক হয়, কোনও নেতা বা দলকেন্দ্রিক নয়। আমরা স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের অহেতুক কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে দেখেছি, যেগুলো কখনোই দেশের মানুষের জন্য ছিল না, বরং এর সঙ্গে জড়িত ছিল কুৎসিত আমিত্ব এবং বিশাল আকারের চুরি। চলমান এবং প্রস্তাবিত সকল উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর যাচাই বাছাই করার কাজ এরইমধ্যে আমরা শুরু করেছি। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর্যায় বিবেচনা করে বাকি কাজে ব্যয়ের সাশ্রয়, এমনকি প্রয়োজনবোধে তা বাতিল করার কথা বিবেচনা করা হবে। দেশের মানুষকে আর ফাঁকি দেওয়া চলবে না। কর্মসংস্থান তৈরি করবে এমন প্রকল্পগুলোকে আমরা অগ্রাধিকার দেবো।
ড. ইউনূস বলেন, লুটপাট ও পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একটা ব্যাংকিং কমিশনও গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে এই একমাসে বিরাট পরিবর্তন এসেছে। আপনারা নিশ্চয় সেটা লক্ষ করেছেন। আমরা এই খাতে নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আরও অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। প্রথম মাসের কাজ হিসেবে শুধু প্রধান কাজগুলো করেছি। তার সঙ্গে রয়েছে আরও অনেক পরবর্তী কাজ।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার লুটপাট করার জন্য নতুন করে ষাট হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ার কারণে মুদ্রাস্ফীতির শিকার হয়েছে দেশের মানুষ। এই অতুলনীয় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পলিসি সুদের হার বৃদ্ধি করে ৯ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিসহ সুলভ মূল্যে প্রান্তিক মানুষের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ চলমান রাখা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় চলতি অর্থবছরে চাল ও গম আমদানির জন্য ৫,৮০০ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের জন্য ৮,৯০০ কোটি টাকা এবং খাদ্য ভর্তুকির তিনটি প্রোগ্রামের জন্য ৭,৩৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সাথে সভা করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে করণীয়সমূহ চিহ্নিত করা হচ্ছে।
পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় যৌক্তিক পরিমাণে হ্রাস করার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য সার আমদানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রকৃত চাষিগণ যাতে কৃষিঋণ পেয়ে থাকেন তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি কৃষিঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারকে বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। কালো টাকা সাদা করার অনৈতিক অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সাপোর্ট চাওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বিশ্বব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, জাইকা থেকে অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রিমের অর্থ পরিশোধ এবং বকেয়া পাওনা নিয়ে রাশিয়ান ফেডারেশনের সাথে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আলোচনা চলছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, পাইপলাইনে থাকা ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক সহায়তা ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেগা প্রকল্পের নামে লুটপাট বন্ধের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোর লক্ষ্যে রাশিয়া এবং চীন থেকে প্রাপ্ত ঋণের সুদের হার কমানো এবং ঋণের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। সকল উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে সম্পর্ক আরও নিবিড় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সকল অর্থনৈতিক সূচক এবং পরিসংখ্যানের প্রকৃত মান বা সংখ্যা প্রকাশের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। জিডিপি, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদির সঠিক উপাত্ত সংগ্রহ, প্রাক্কলন এবং প্রকাশের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং অর্থ বিভাগের রাজস্ব আয় সম্পর্কিত উপাত্তের মধ্যে পার্থক্য নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকৃত রফতানি আয় নিরূপণ এবং প্রকাশের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অটোমাইজেশনের লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন পুনর্গঠন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার নিমিত্ত ব্যবসায়ী, শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সাথে সভা করা হয়েছে এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বিদ্যমান মজুত ও ঘাটতি মূল্যায়ন করে ও ভবিষ্যৎ চাহিদা পর্যালোচনা করে স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি পর্যায়ে বিভিন্ন জটিলতা দূরীকরণ, বন্দর ও বড় মোকামসহ পরিবহন ব্যবস্থার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, দফতর, বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এজন্য তেল, চিনি, ডিম ও মাংস উৎপাদনকারী বৃহৎ প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে সভা ও মতবিনিময় করা হয়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্যাদি, যেমন পেঁয়াজ, আলু এসবের দাম আরও কমানোর জন্য বিদ্যমান শুল্কহার হ্রাসের বিষয়ে এনবিআরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এনবিআর পেঁয়াজ, আলু ও কতিপয় কীটনাশকের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক হ্রাস ও ক্ষেত্রবিশেষে রেগুলেটরি শুল্ক প্রত্যাহার করে এসআরও জারি করেছে। নিম্ন আয়ের এক কোটি পরিবারকে টিসিবির মাধ্যমে হ্রাসকৃত মূল্যে কিছু পণ্য, যেমন পরিবারপ্রতি চাল মাসে ৫ কেজি, সয়াবিন তেল মাসে ২ কেজি ও মসুর ডাল মাসে ২ কেজি দেওয়া হচ্ছে। এটি সামনের দিনগুলোতে অব্যাহত রাখা হবে।
ইউনূস বলেন, সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় হতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের অধীন চলমান সকল প্রকার নেগোসিয়েশন, প্রকল্প বাছাই এবং ক্রয় প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। গত দেড় দশকে এই আইন ব্যবহার করে লক্ষ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কোম্পানিসমূহে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনার লক্ষ্যে কোম্পানিসমূহের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। প্রকৌশল, ভূতত্ত্ব ও খনিজ এবং হিসাব বিষয়ে অধ্যয়ন করেছে এমন ছাত্র প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ খাতে অধিকতর সক্ষমতা, গতিশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞগণের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী সহনশীল রাখতে অকটেন ও পেট্রোলের দাম ৬ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১.২৫ টাকা কমানো হয়েছে। ৩৭ দিন বন্ধ থাকার পর গত ২৫ আগস্ট হতে মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন ছাড়া বাকি সব স্টেশনে মেট্রোরেল পুনরায় চালু করা হয়েছে।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করার লক্ষ্যে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের বয়স সাড়ে বারো বছরের কম ছিল, তাদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকা হতে বাতিলের জন্য সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিলের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের আওতাধীন বেদখলকৃত স্থাবর সম্পত্তি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া তৈরির কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প ও ঢাকার আশপাশে স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণের রোডম্যাপ চূড়ান্তকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিধিবহির্ভূত প্রদত্ত প্লট ও ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আপনাদের আমাদের সন্তানদের জন্য একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রূপরেখা তৈরি করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আর যেন আমাদের কোনও স্বৈরাচারের হাতে পড়তে না হয়, আমরা যাতে বলতে পারি আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করি, আমরা যাতে সকলেই দাবি করতে পারি যে এই দেশটি আমাদের- আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কেউ সমাজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করলে আমরা তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবো। আমরা একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন কোন কাজ কেউ কোনোভাবেই করবেন না।
অতীতে শুধুমাত্র আওয়ামী মতাদর্শী না হওয়ার কারণে ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত বিপিএসসি কর্তৃক সুপারিশকৃত অনেক প্রার্থী নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছেন। ৮ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এর মধ্যে ২৫৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মাঠ প্রশাসনকে জনবান্ধব, দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলকভাবে গড়ে তোলার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের বাধ্যতামূলকভাবে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবং এটা প্রতি বছর তাদের করতে হবে।
তিনি বলেন, ধ্বংস হয়ে পড়া একটা জনপ্রশাসনকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছি। মন্ত্রণালয়গুলোর উচ্চতম পদে যারা নিয়োজিত ছিলেন তারা অনেকে দায়িত্ব ছেড়ে চলে গেছেন কিংবা পদে থাকলেও সহকর্মীদের চাপের মুখে কাজ করতে পারছিলেন না। বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেছেন। আর যারা ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের আমলে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন কিংবা দায়িত্ববিহীন অবস্থায় একই পদে থেকে যেতে বাধ্য হয়েছেন তাদের সবার কথা বিবেচনায় নিয়ে জনপ্রশাসনকে নতুন করে দাঁড় করানোই ছিল আমাদের কঠিনতম সময়। আবার সকল সমস্যা সমাধান করে একটি নতুন জনপ্রশাসন কাঠামো দাঁড় করাতে পেরেছি, এটাই আমাদের প্রথম মাসের সবচাইতে বড় অর্জন। আমার বিশ্বাস এই জনপ্রশাসন জনগণের ইচ্ছা পূরণে সর্বোচ্চ অবদান রাখতে পারবে।
তিনি বলেন, অতি স্বল্প জনবল নিয়ে দাফতরিক কার্যক্রম শুরু করা হলেও প্রথম দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে পাঠানো বিবিধ প্রস্তাব বিষয়ে দ্রুত গতিতে এবং আইনগত সমস্ত বাধ্যবাধকতা মেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত একমাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ১৯৮টি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জন প্রশাসনের ১৩৫ জন অতিরিক্ত সচিব, ২২৭ জন যুগ্ম সচিব ও ১২০ জন উপসচিবকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। ৫৯টি জেলার জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং নতুন ৫৯ জন জেলা প্রশাসককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৬৭ জন কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। ১০ জন যুগ্ম সচিব, ৮ জন অতিরিক্ত সচিব ও ৬জন সচিবকে ওএসডি করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের ৮০ জন ডিআইজি, ৩০ জন পুলিশ সুপারসহ ১১০ জনকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। ১ জন ডিআইজি, ১ এডিশনাল ডিআইজি এবং ৪ জন পুলিশ সুপারকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়েছে। আইজিপিসহ ১০ জন অতিরিক্ত আইজি, ৮৮ জন ডিআইজি, ২১ জন এডিশনাল ডিআইজি এবং ১৭৭ জন পুলিশ সুপারসহ মোট ২৯৭ জন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, ছাত্র, শ্রমিক, জনতার বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ছিল গণভবন। এটা ছিল স্বৈরাচারের কেন্দ্রবিন্দু। এই সরকার বিপ্লবের প্রতি সম্মান দেখিয়ে গণভবনকে বিপ্লবের জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। ছাত্র-জনতার ক্ষোভকে স্থায়ীভাবে তুলে ধরার জন্য গণভবনের আর কোনও সংস্কার করা হবে না। ছাত্র-জনতার ক্ষোভের মুখে তা যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিল সে অবস্থায় তাকে রাখা হবে। যেসব মূল্যবান সামগ্রী জনতা নিয়ে গিয়েছিল সেগুলো অনেকে ফেরত দিয়ে গেছে। যারা নিয়ে গিয়েছিল তারা নিজেরাই ফেরত দিয়ে গেছে। তাদের আমরা দেশবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আরও কিছু জিনিস পাওয়া যায়নি। যার নিয়ে গিয়েছেন তাদের কাছে অনুরোধ করবো তারা যেন এসব সামগ্রী ফেরত দিয়ে যান। আমার উল্লেখ করবো যে এসব বিক্ষুব্ধ জনতা নিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু বিজয়ের পর তারা আবার জাদুঘরের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এগুলো ফেরত দিয়ে গিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা নতুন বাংলাদেশকে একটি পরিবেশবান্ধব এবং জীব বৈচিত্র্যময় দেশ হিসাবে গড়ে তলার উদ্যোগ নিয়েছি। এটি তরুণদের আকাঙ্ক্ষা। আমাদের সবারই আকাঙ্ক্ষা। সেই লক্ষ্যে আমি প্রথমেই একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ নিয়েছি। আমার বাসভবন ও সমগ্র সচিবালয়ে প্লাস্টিকের পানির বোতল ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছি। ইতিমধ্যে সুপার শপগুলোতে পলিথিনের শপিং ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত কয়েক দশকে যে পরিমাণ নদীদূষণ হয়েছে, আমরা তা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছি ।
তিনি বলেন, আমরা সংস্কার চাই। আমাদের একান্ত অনুরোধ, আমাদের উপর যে সংস্কারের গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন, সেই দায়িত্ব দিয়ে আপনারা দর্শকের গ্যালারিতে চলে যাবেন না। আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমরা একসঙ্গে সংস্কার করবো। এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। আপনারা নিজ নিজ জগতে সংস্কার আনুন। একটা জাতির সংস্কার শুধুমাত্র সরকারের সংস্কার হলে হয় না। আপনি ব্যবসায়ী হলে আপনার ব্যবসায় সংস্কার আনুন। ব্যবসায়ী গোষ্ঠীরা তাদের নিজ নিজ সমিতির মাধ্যমে সংস্কার আনুন। সমিতিতে সংস্কার আনুন। নতুন করে সমিতির গঠনতন্ত্র সংশোধন করুন। আপনি শ্রমিক হলে আপনার ক্ষেত্রে আপনি সংস্কার করুন। আপনি রাজনৈতিক নেতা-কর্মী হলে আপনার ক্ষেত্রে সংস্কার করুন। আপনি প্রতিষ্ঠান প্রধান হলে আপনার প্রতিষ্ঠানে সংস্কার আনুন। আমি এটাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। এই সংস্কারের মাধ্যমে আমরা জাতি হিসেবে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে চাই। আমাদের এই যাত্রা আমাদের পৃথিবীর একটি সম্মানিত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করুক এটাই আমাদের সবার কাম্য।
সরকার প্রধান বলেন, বিগত মাসে আমি বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথকভাবে বসেছি। তাঁদের সঙ্গে মতামত বিনিময় করেছি। তারা আমাদের উৎসাহিত করেছেন। ছাত্র, শ্রমিক জনতার বিপ্লবের লক্ষ্যের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। সংস্কারের কাজে পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমি দেশের বিশিষ্ট সম্পাদকবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। তারাও সংস্কারের কাজে পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তারা বিভিন্ন বিষয়ে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন। সবার পরামর্শ নিয়ে এখন আমাদের অগ্রসর হওয়ার পালা। আমি বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের কাছে আমাদের সরকারের লক্ষ্যগুলি ব্যাখ্যা করেছি। তারাও আমাদের লক্ষের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, আপনার জানেন ছাত্র শ্রমিক জনতার ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুখে এবং হাজারো মানুষের আত্মদানের বিনিময়ে বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। এই গণঅভ্যুত্থানের বার্তা ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য একটি অভূতপূর্ব সময় ও সুযোগ আমরা এর মধ্য দিয়ে অর্জন করেছি। এর বাস্তবায়ন তথা বাংলাদেশে ফ্যাসিজম বা স্বৈরতান্ত্রিক শাসন পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা রোধ এবং জনমালিকানাভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে কিছু জাতীয়ভিত্তিক সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। উক্ত সংস্কার ভাবনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
আমরা যেহেতু জনগণের ভোটাধিকার ও জনগণের মালিকানায় বিশ্বাস করি, সেহেতু নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়নে আমাদের সংস্কার ভাবনায় গুরুত্ব পেয়েছে। আমরা মনে করি নির্বাচনের নামে সংখ্যাগরিষ্ঠতার একাধিপত্য ও দুঃশাসন মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বা এর মাধ্যমে এক ব্যক্তি বা পরিবার বা কোনও গোষ্ঠীর কাছে সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব আশঙ্কা রোধ করার জন্য নির্বাচনের সাথে সম্পর্কিত নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের কথা আমরা ভাবছি। নির্বাচনব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, বিচার প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। এসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার জনমালিকানা ভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায়ও অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
এর পাশাপাশি করে সমাজের সকল স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব ও স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্তাকে প্রতিফলিত করার জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের প্রয়োজন আমরা অনুভব করছি।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এসব বিষয়ে সংস্কার করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে আমরা প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এসব কমিশনের কাজ পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে এই কমিশনগুলো পরিচালনা করার দায়িত্ব দিয়েছি। এর পর আরও বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়া আমরা অব্যাহত রাখবো।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন জনাব সরফরাজ চৌধুরী, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে জনাব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. শাহদীন মালিক দায়িত্ব পালন করবেন।
এসব কমিশনের অন্য সদস্যদের নাম কমিশন প্রধানদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। কমিশনগুলোর আলোচনা ও পরামর্শসভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ছাত্র, শ্রমিক, জনতা আন্দোলনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজ আগামী পহেলা অক্টোবর থেকে শুরু করতে পারবে বলে আশা করছি এবং এটি পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আমরা ধারণা করছি। কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে পরামর্শসভার আয়োজন করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্র সমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শসভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এতে এই রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার একটি ধারণাও দেওয়া হবে।
প্রধান উপদেষ্টা আর বলেন, এই আয়োজন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্তা বাস্তবায়ন এবং রাষ্ট্র পুনর্নির্মাণ তাগিদের ঐক্যবন্ধনে গোটা জাতিকে শক্তিশালী ও আশাবাদী করে তুলবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
তিনি বলেন, আমাদের সামনে অনেক কাজ। সবাই মিলে একই লক্ষ্যে আমরা অগ্রসর হতে চাই। আমাদের মধ্যে, বিশেষ করে আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে যে সুপ্ত প্রতিভা লুকিয়ে আছে সেটা যেন বিনা বাধায়, রাষ্ট্রের এবং সমাজের সহযোগিতায় প্রকাশ করতে পারি সেই সুযোগের কাঠামো তৈরি করতে চাই। সকলে মিলে আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে, সে ঝাড়ুদার হোক, ছাত্র হোক, শিক্ষক হোক, যেকোনো ধর্মের হোক, সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। এই হলো আমাদের সংস্কারের মূল লক্ষ্য। আসুন ছাত্র, শ্রমিক, জনতার এই বিপ্লবের লক্ষ্যকে আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন করি।
আমাদের প্রথম মাসে আমরা যে গতিতে, যে উদ্যম নিয়ে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করেছিলাম হয়তো সেটা করতে পারিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা গেলে আশা করি আমরা আমাদের গতি অনেক বাড়াতে পারবো। এজন্য দেশের সকল মানুষের কাছে- শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবী, বড় ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর, গৃহিণী সকলের সহযোগিতা চাইছি।
ড. ইউনূস বলেন, আমাদের কাজ বড় কঠিন, কিন্তু জাতি হিসেবে এবার ব্যর্থ হওয়ার কোনও অবকাশ আমাদের নেই। আমাদের সফল হতেই হবে। এই সাফল্য আপনাদের কারণেই আসবে। আপনার সহযোগিতার কারণে আসবে। আমাদের কাজ হবে আপনার, আমার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করা। এখন আমরা দ্বিতীয় মাস শুরু করছি। আমাদের দ্বিতীয় মাসে যেন আপনাদের মনে দৃঢ় আস্থার সৃষ্টি করতে পারি সে চেষ্টা করে যাবো।
তিনি আরও বলেন, ধৈর্য ধরুন, এই কথাটি আমি মোটেই আপনাদের বলবো না। আমরা সবাই অধৈর্য হয়ে পড়েছি, এতসব কাজ কখন যে শেষ হবে, এটা চিন্তা করে। কিন্তু সঠিকভাবে কাজ করবো। কাজে কোনও অধৈর্যের চিহ্ন রাখবো না।
ড. ইউনূস বলেন, দেশের শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী বয়স্ক, বৃদ্ধ, পুরুষ, মহিলা সবাইকে আবারও আমার সালাম জানাচ্ছি।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। মহান আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হোন।
তথ্য সূত্র -বাংলা ট্রিবিউন
Leave a Reply