বিশেষ প্রতিবেদন :
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, আপনারা কাজের সমালোচনা করবেন, সেটা ঠিক আছে। বলতে পারেন, কিছুই করতে পারছি না। কিন্তু যখন সম্পূর্ণ মিথ্যা-আজগুবি-ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করা হয়, তখন মনে হয় সমালোচনাটা অসৎ উদ্দেশ্যে করা। আজগুবির একটা সীমা থাকা দরকার।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) আয়োজনে ‘স্মৃতির মিনার, গণঅভ্যুত্থান ২০২৪’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, একটি ভিডিওতে নাকি বলা হয়েছে, ৩-৪ আগস্ট আমি ক্যান্টনমেন্টে (সেনানিবাসে) ছিলাম এবং সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভারতের দালালদের নিয়ে মিটিং করেছি। অবাক হই যে, কল্পনারও তো একটা সীমা থাকা উচিত।
তিনি বলেন, ৩ আগস্ট রাতে মাহবুব মোর্শেদসহ (বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক) অন্যদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে রাত ৯টা পর্যন্ত সেখানেই ছিলাম। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডের ১৯ নম্বর ভবনে ট্রিপল-ই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোস্তফা মামুনের বাসায় থেকেছি। ৪ তারিখ রাতে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে একটা মিটিংয়ে ছিলাম, ওই রাতেও মোস্তফা মামুনের বাসায় ছিলাম।
আইন উপদেষ্টা বলেন, এই সরকারকে শক্তিহীন করতে, দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে, পরাজিত শক্তির হাতে অস্ত্র তুলে দিতে প্রতিবেশী দেশের একটা চিত্রনাট্য আছে- শেখ হাসিনা চলে গেলে আর কেউ এই দেশ চালাতে পারবে না অথবা দেশ উগ্রবাদীদের খপ্পরে পড়বে, তার কোনো বিকল্প নেই। এ রকম ভারতীয় চিত্রনাট্য রূপায়িত করার কাজে নেমেছে কিছু মানুষ।
তিনি আরও বলেন, ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ কী করেছে, আপনি সেগুলো অনুসন্ধান করে দেখান। গঠনমূলক উপায়ে এগুলো মানুষকে বলেন। আমাকে বলা হচ্ছে, আইন করে আমি যেন পিএসসির মাধ্যমে আইনজীবী নিয়োগ করি। তাহলে কি আদালত খালি থাকবে? আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত সাড়ে চার হাজার আইনজীবীর মধ্যে সোয়া চার হাজার পালিয়েছে। বাকিরা যারা আছে তারা বলছে, আওয়ামী লীগ না। অনেকে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগের কথা বলছেন। কিন্তু এত সংখ্যক নিয়োগ পিএসসির মাধ্যমে করলে এক বছর লেগে যাবে। তাহলে এই এক বছর কি আওয়ামী লীগের বিচার থেমে থাকবে?
আসিফ নজরুল আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদি সফল হয়, তাহলে আমরা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা রেজিমের প্রত্যাবর্তনের স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করতে পারব। জুলাই-আগস্টে যারা প্রাণ দিয়েছে, যাদের অঙ্গহানি হয়েছে তাদের আত্মদানের ন্যূনতম একটা মূল্যায়ন করতে পারব। আমরা যদি নিজেরা নিজেরা ঝগড়াঝাঁটি করি, নিজেরা কুৎসা রটাই, চরিত্র হনন করি, মিথ্যা তথ্য দেই, তাহলে ছাত্র-জনতার আত্মবলিদানের প্রতি অশ্রদ্ধা জানানো হয়। কারও প্রতি অভিযোগ নয় সবার কাছে অনুরোধ, দয়া করে সত্য জানার চেষ্টা করেন। মিথ্যা, অত্যাচার, নিপীড়ন, দোষারোপ এগুলো পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তির অস্ত্র ছিল। সেই অস্ত্র আমি কেন বহন করব।
এ সময় আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সরকার যখন দেশ চালায়, তার পেছনে একটা বিরাট শক্তি থাকে, একটা রাজনৈতিক দলের লোকজন থাকে। কিন্তু আমরা কয়েকজন দায়িত্ব নিলাম, অনেকে কেউ কাউকে তেমন চিনি না। বিপ্লব পরবর্তী সময়ে মানুষের অনেক প্রত্যাশা, রাগ, ক্ষোভ, হিংসা, অবিশ্বাস ও স্বপ্ন থাকে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যেটি অনেকগুণ বেশি। এগুলো ম্যানেজ করা সহজ না, সহজ হলে আরব দেশগুলোতে বিপ্লবের পরে এরকম হতো না। মিশর ও তিউনিসিয়ায় বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছে, আমরা দেখেছি সেখানে কী অবস্থা দাঁড়িয়েছে। এবার ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ কাশ্মীরে পরিণত হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, অ্যাক্টিভিস্ট রাখল রাহা, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাশেদ খাঁন, বাসসের পরিচালনা বোর্ডের সদস্য নূরে আলম মাসুদ ও কবি ফেরদৌস আরা রুমী। সভাপতিত্ব করেন বাসসের প্রধান সম্পাদক ও এমডি মাহবুব মোর্শেদ। বিশেষ প্রতিনিধি দিদারুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশেষ প্রতিনিধি ও পরিচালনা বোর্ডের সদস্য ড. ফজলুল হক। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
Leave a Reply