বিশেষ প্রতিবেদন :
প্রথমবারের মতো ড্রেজিংয়ের আওতায় এসেছে খাগড়াছড়ির পাহাড়ি নদী মাইনী ও চেঙ্গী। এতে নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততা বাড়ায় পানির প্রবাহ স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি নদী খননের সুফল পাচ্ছে স্থানীয়রাও। নদী খননের মাটিতে অনাবাদী কৃষি ভরাট হওয়ায় তা সারা বছরই চাষের উপযোগী হয়ে উঠছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কমে আসবে বন্যার প্রকোপ।
খাগড়াছড়ির মাইনী নদী। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে উৎপত্তি হয়ে ৯৬ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে মিশেছে কাপ্তাই লেকে। নদীর গভীরতা কম থাকায় চলতি মৌসুমে মাইনী ও চেঙ্গী নদীর তীরবর্তী অধিকাংশ এলাকা চার দফা বন্যায় প্লাবিত হয়। নদীর গভীর ও প্রশস্ততা বৃদ্ধি, মৎস্য আহরণ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে নদী দুইটি ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এর ফলে নদী যেমন প্রাণ ফিরে পাচ্ছে, তেমনি নদী খননের মাটিতে অনাবাদী জমি ভরাট হওয়ায় তা চাষের উপযোগী হয়ে উঠেছে। অনাবাদী এসব জমিতে রবিশস্যসহ অর্থকরী ফসলের চাষ হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর অনাবাদী জমি চাষের আওতায় আসায় খুশি স্থানীয় কৃষক। অনাবাদী জমিতে নতুন ফসলের স্বপ্ন বুনছেন তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দা মজলিস খান বলেন, ‘আমরা খুব কষ্টে ছিলাম, নদীটা খুব সরু ছিল। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে চর জেগে উঠতো। নৌকা চলাচল করতে পারত না। খননের পর থেকে নদীতে পানি বেড়েছে এখন মাছও পাওয়া যাচ্ছে। নৌকা চলাচল করতে পারছে। আমরা যারা কৃষক আছি তারায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছি। শত শত একর জমিতে নদী খননের মাটি ফেলায় জমিগুলো চাষ উপযোগী হয়েছে। অধিকাংশ জমিতে এবার চাষ হয়েছে। স্বাধীনতার এতগুলো বছর পর অনেক জমি প্রথমবাবের মতো এবার চাষের উপযোগী হয়েছে।’
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে মাইনী নদীতে প্রায় ২৩ এবং চেঙ্গী প্রায় ৩৫ কিলোমিটার অংশে খনন কাজ শুরু হয়। এরইমধ্যে পুরোদমে মাইনী নদীর ইয়ারাংছড়ি, ভাঙামুড়া ও মাইনীমুখ অংশ খনন কাজ চলছে। ২০২৫ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় কথা রয়েছে। তবে পাহাড়ি নদীর মাটিতে ঢলে ভেসে আসা গাছ, পাথরের কারণে ড্রেজিং কাজ ব্যাহত হচ্ছে ।
খনন কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান নবারুণ ট্রেডার্সের তত্ত্বাবধায়ক মো. মনির হোসেন বলেন, ‘খনন করতে গিয়ে আমরা দেখছি নদীর মাটির নিচে প্রচুর গাছ পড়ে আছে। পাহাড়ি ঢলে এসব গাছ এসেছে। এ ছাড়া নদীর পাশে পাহাড় আছে, সেখানে প্রচুর পাথর হয়। এতে আমাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। অনেক সময় ড্রেজিং মেশিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
খনন কাজ সমাপ্ত হলে নদীতে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি বর্ষায় বন্যার প্রকোপ কমে আসবে। এরইমধ্যে প্রকল্পের ২৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
নদী খননের পাশাপাশি প্রায় ৭০ কিলোমিটার চর অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পাউবো এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, ‘বাস্তবায়ন কাজ শেষ হলে নৌচলাচল স্বাভাবিক হবে। স্থানীয় কৃষকও সুবিধা পাবে। এ ছাড়া নদীর বুকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার চর অপসারণ করা হবে। চেঙ্গী ও মাইনী নদীতে বন্যার মূল কারণ পাহাড়ি ঢল। নদীর ধারণ ক্ষমতার তুলনায় পানি বেশি হলে এবং তা দ্রুত নেমে না গেলে বন্যা হয়। নদীতে ড্রেজিং হওয়ায় পানিধারণ ক্ষমতা বাড়বে এবং ঢলের পানি দ্রুত কমে যাবে।
Leave a Reply