নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নে বালু নদী থেকে উদ্ধার করা শিশু ওসমান গণি স্বাধীনকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ করা হয়। এ সময় শিশুর বাবা শাহিনুর রহমান, মা উম্মেহানি মুন্নি ও দাদা রেজাউল আলম উপস্থিত ছিলেন।
পরিবারের অভিযোগ, নামমাত্র মূল্যে বসতভিটা লিখে না দেওয়ায় একই ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও রংধনু গ্রুপের মালিক রফিকুল ইসলাম এবং তাঁর ভাই মিজানুর রহমানসহ তাঁদের লোকজন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার দাবি করেন তাঁরা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিশু স্বাধীনের পরিবারের ভাষ্য, হত্যার পর শিশুটির মরদেহ যাতে শনাক্ত করা না যায়, এ জন্য তার মুখ থেঁতলে অ্যাসিডে শরীর ঝলসে দেওয়া হয়। গুম করতে লাশ ফেলে দেওয়া হয় বালু নদীতে। পরে পরনের প্যান্ট দেখে স্বজনরা লাশটি স্বাধীনের বলে শনাক্ত করে।
গত ১ ডিসেম্বর নিজবাড়ি থেকে স্বাধীন নিখোঁজ হয়। ৪ ডিসেম্বর নৌ পুলিশের সদস্যরা ইউনিয়নের নাওড়া বাজারের পাশে সেতুর নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করেন।
স্বাধীনের বাবা শাহিনুর বলেন, ‘আমার সন্তানের হত্যাকারী আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও রংধনু গ্রুপের মালিক রফিকুল ইসলাম ও তার ভাই মিজানুর রহমান। তারা এত প্রভাবশালী যে সন্তানকে কবর দেওয়ার পর থেকে আমরা বাড়িতে থাকতে পারি না।
’
শাহিনুর বলেন, ‘রফিক এলাকায় প্রভাবশালী। এ ঘটনায় হত্যার বদলে অপমৃত্যুর মামলা নিতে রূপগঞ্জ থানা পুলিশকে তিনি প্রভাবিত করেন। হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
শাহিনুরের ভাষ্য, সন্তানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বললে মেরে ফেলা হবে বলে রফিক হুমকি দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে তারা পাহারা বসিয়েছে।
জীবন বাঁচাতে বাড়ি থেকে আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি। সন্তান হত্যার বিচার পেতে আমরা মামলাও করতে পারিনি। থানা পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা না দিয়ে অপমৃত্যুর মামলা করার পরামর্শ দিয়েছে।’
হত্যার কারণ প্রসঙ্গে শাহিনুর বলেন, ‘রফিকুল ইসলাম দুই মাস আগে আমাদের বাড়ি নামমাত্র দামে কিনতে তাঁর বোনকে পাঠান। সঙ্গে আরেকজন মহিলাও ছিলেন। বাড়িটি রফিকুল কিনতে চান বলে তাঁরা জানালে আমার বাবা রেজাউল করিম বাধা দেন। বাড়ি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় একাধিকবার আমাদের বাড়িতে তাঁরা হামলা চালিয়েছেন। একটি মুদি দোকানও বন্ধ করে দিয়েছেন। এর পরও আমরা বাড়িটি বিক্রি করতে রাজি হইনি।’
শাহিনুর বলেন, ‘আমার সন্তানকে হত্যার এক সপ্তাহ আগে রফিকুলের ভাই মিজানুর রহমান উচিত শিক্ষা দেবেন বলে বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে যান। ঠিক এক সপ্তাহ পর আমার সন্তানটি নিখোঁজ হয়। এরপর আমরা স্বাধীনের বীভৎস লাশ পাই। রফিকুল ইসলাম আমার এই জায়গার জন্য এমন জঘন্য কাজ করবেন, সেটা বুঝতে পারলে অনেক আগেই বাড়িটা দিয়ে দিতাম।’
স্বাধীনের বাবা বলেন, “ময়নাতদন্ত শেষে সন্তানের লাশ বাড়ি নিয়ে এসে দেখি রফিকুলের লোকজন ‘হুজুর’ নিয়ে অপেক্ষা করছে। বাড়িতে গাড়ি আসার পর তারা স্বাধীনের কাছে আর আমাদের যেতে দেয়নি। আমার সন্তানের মরদেহটাও শেষবারের মতো কাউকে দেখতে দেয়নি। রফিকুল ইসলামের নির্দেশে পরিবারের অনুমতি না নিয়েই তারা রাতের অন্ধকারে আমার শিশুটিকে কবর দেয়।”
শিশুটির দাদা রেজাউল করিমও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। উপস্থিত স্বজনরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে গত ১৫ ই ডিসেম্বার । আজ আদালত ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দেন পি.বি. আইকে।
Leave a Reply