বিশেষ প্রতিবেদন :
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর প্রবাসী নেছার আহমেদ তোতা হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামি জংগু’কে দীর্ঘ ২১ বছর পর গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭।
নিহত ভিকটিম নেছার আহমেদ তোতা গত ২০০৩ সালে দুবাই থেকে দেশে ফেরত আসেন। নেছার আহমেদ তোতা এর নিকট থেকে একই এলাকার বাসিন্দা এজাহার মিয়া অনেক দিন পূর্বে পাঁচ হাজার টাকা ধার নেয়। নেছার আহমেদ তোতা দেশে ফেরত আসার পর তার পাওনা টাকা ফেরত চেয়ে এজাহার মিয়াকে একাধিকবার চাপ প্রয়োগ করলে এজাহার মিয়া তাকে টাকা প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। নেছার আহমেদ তোতা এবং এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ল্যাডা নাছির এর মধ্যে পূর্ব থেকে শত্রুতা চলে আসছিল। একপর্যায়ে সন্ত্রাসী নাছির এজাহার মিয়ার কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করে দিবে বলে ভিকটিম নেছার আহমেদ তোতাকে আশ্বস্ত করে কৌশলে ভিকটিমের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ তৈরি করে। পরবর্তীতে টাকা উদ্ধারের জন্য গত ০১ নভেম্বর ২০০৩ ইং তারিখে ল্যাডা নাছির এবং তার অন্যান্য সহযোগীরা ভিকটিমকে তার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। ভিকটিম বাড়িতে ফিরে না আসায় তার স্ত্রী সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন এবং পর দিন ০২ নভেম্বর ২০০৩ ইং তারিখে লোক মারফত জানতে পারেন যে, দক্ষিণ রাঙ্গামাটিয়া এলাকায় একটি পাহাড়ের পাদদেশে সড়কের উপর অজ্ঞাতনামা একটি মৃতদেহ পড়ে আছে। পরবর্তীতে ভিকটিমের স্ত্রী বর্ণিত স্থানে উপস্থিত হয়ে অজ্ঞাতনামা গলাকাটা লাশটি তার স্বামীর মৃতদেহ মর্মে সনাক্ত করেন।
উক্ত ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মোর্শেদা আক্তার বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানায় ১০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০২ তারিখ- ০২ নভেম্বর ২০০৩ ইং, ধারা- ৩০২/৩৪, দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০। উক্ত ঘটনায় ফটিকছড়ি থানা পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ১৪ মে ২০০৪ ইং তারিখে বিজ্ঞ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পুলিশ প্রতিবেদন এবং মামলার সাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিজ্ঞ আদালত গত ০৮ মার্চ ২০২১ইং তারিখে মামলার ৯ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড সহ ২০ হাজার টাকা অর্থ দন্ড প্রদান করেন।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, সূত্রে বর্ণিত মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি জংগু চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া থানাধীন রানীরহাট অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল গত ২৩ ডিসেম্বার ২০২৪ ইং তারিখে আনুমানিক ১৯৫০ ঘটিকায় বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামি জংগু (৪০), পিতা-খায়ের আহমদ. সাং-শাহনগর, থানা-ফটিকছড়ি, জেলা- চট্টগ্রাম’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে উপরোক্ত নাম ঠিকানা প্রকাশ করতঃ বর্ণিত মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামি মর্মে স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, সে এবং তার অন্যান্য সহযোগীরা পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রবাস ফেরত নেছার আহমেদ তোতা’কে হত্যা করে এবং মামলা রুজু হওয়ার পর হতে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট থেকে গ্রেফতার এড়াতে সে নিজ এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম জেলা এবং মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে আসছিল।
গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে তাকে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
Leave a Reply