বিশেষ সংবাদ:
গেল কয়েকদিন ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মাঝে তুমুলভাবে গোলাগুলি চালাচ্ছিল। গত ২ দিন ধরে সে দুই পক্ষের গোলাগুলি এখন থেমেছে। বান্দরবানের ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
গতকাল বুধবার থেকে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোন সীমান্তবর্তী এলাকায় গোলাগুলি কিংবা মর্টার শেলের কোন শব্দ শোনা যায়নি। যার ফলে স্থানীয়দের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও এখনো আতঙ্ক কাটেনি।
গেল কয়েকদিন আগে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মাঝে ব্যাপক সংঘর্ষকালে প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বিজিপি বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশে অভ্যন্তরে আশ্রয় নিয়েছেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বিজিপি সদস্য ৩৩০ জন। পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের নিরস্ত্রীকরণ করে খাবার ও আশ্রয় দেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি।
এদিকে আজ দুপুর বেলা সাড়ে তিনটায় আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ১০০ জন বিজিপির সদস্যকে প্রশাসনিক সুবিধা বিবেচনা করে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে টেকনাফের হ্নীলাতে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে এখনো ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বিজিপি এখনো স্থানান্তর করা হয়নি।
অপরদিকে সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত হয়ে উঠায় উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া ঘুমধুম-তুমব্রু, জলপাইতলী সীমান্তের ২৪৩ জন বাসিন্দা গতকাল ঘরে ফিরেছেন। তবে সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মাঝে এখনো আতঙ্কের রেশ কাটেনি। এই ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৬ জন ও নিহত হয়েছে ২ জন।
স্থানীয়রা জানান, গত ৩ দিন ধরে সীমান্ত থেকে কোন গোলাগুলি শব্দ শোনা যায়ানি। সীমান্ত পরিস্থিতি অবনতির হওয়ার পর সবাই বাড়িতে ফিরেছেন। বাজারগুলোতে বেড়েছে সাধারণ মানুষের আনাগোনা। দোকানপাট গুলো খুলতে শুরু করেছে। কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও এখনো আতঙ্কে রয়েছে সীমান্ত বাসিন্দারা।
তুমব্রু এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন আগে যে গোলাগুলি শুরু হয়েছিল ভয়ে সবাই পালিয়ে গেছে। এখন পরিস্থিতি অবনতির হওয়ার পর সবাই বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে।
ঘুমধুম বাসিন্দা জহির বলেন, সীমান্তে গোলাগুলি কারণে চাষবাস কিছুই করতে পারেনি। সবকিছু ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে আত্মীয় বাসায় আশ্রয় নিয়েছি। এখন স্বাভাবিক হওয়াতেই স্বস্তিতে ফিরেছে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ বলেন, বুধবার দুপুরের পর থেকে আজকে সকাল পর্যন্ত কোনো গুলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। পরিস্থিতি শান্ত হয়ে উঠায় আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া লোকজন ঘরে ফিরে গেছে।
তিনি বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠায় ভয়ে ও আতঙ্কে দূরদূরান্তে আত্মীয় স্বজনের বাসাবাড়িতে চলে যাওয়া লোকজনও ফিরতে শুরু করেছে। সীমান্তবর্তী তুমব্রু বাজারে দোকান খুলেছে ব্যবসায়ীরা। বাজারগুলোতে লোকজনের আনাগোনাও বেড়েছে।
বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজ দুপুরে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বিজিপি ১০০ জন সদস্যকে টেকনাফ দিকে স্থানান্তর করা হয়েছে।
আজ তাদেরকে ফেরৎ পাঠানো হবে । এ জন্য মিয়ানমার হতে নৌ বাহীনির একটি জাহাজ কক্সবাজার এর পেকুয়ার নিকটবর্তী সাগরে অবস্থান করবে ।
Leave a Reply