সরেজমিন প্রতিবেদন :
জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল প্রাঙ্গণে আজ অনুষ্ঠিত হয় অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির বর্ধিত সভা। দীর্ঘ সাত বছর পর এই বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছে। সর্বশেষ বর্ধিক সভা হয় ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি।
এর আগে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলটির ষষ্ঠ কাউন্সিল হয়। কাউন্সিলের মধ্যমণি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওই কাউন্সিলে তিনি ‘ভিশন ৩০’ রূপরেখা তুলে ধরেছিলেন। সেই রূপরেখায় বিএনপি ক্ষমতায় এলে কী কী করা হবে, তা উল্লেখ করা হয়।
বিএনপির সর্বশেষ বর্ধিত সভার চারদিন পর ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকার ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মিথ্যা ও সাজানো মামলায় অন্যায় শাস্তির ব্যবস্থা করে খালেদা জিয়াকে জেলে নেয়। জেলেবন্দি অবস্থায় তিনি সীমাহীন নিপীড়নের শিকার হন। রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। চিকিৎসকরা বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার সুপারিশ করলেও তিনি সেই সুযোগ পাননি।
বিএনপির বর্ধিত সভায় আজ দলের স্থায়ী কমিটি, নির্বাহী কমিটি ছাড়াও সারাদেশের তৃণমূলের বিশেষ করে থানা, উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পর্যায়ের সাড়ে তিন হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
জুলাই বিপ্লবের পর রাজনীতির মাঠে বিএনপি জোরালো অবস্থান নিয়ে সভা-সমাবেশ ও দলীয় অন্যান্য কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের রোষানলের শিকার হয় বিএনপি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করতে গিয়ে চরম বাধার সম্মুখীন হয়। বিএনপির ওপর নেমে আসে অত্যাচারের স্টিম রোলার।
হামলা-মামলা, খুন, গুম, কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ ও তালাবদ্ধ রাখাসহ এমন নির্যাতন নেই, যা করা হয়নি। হাইকমান্ড থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৪৩ হাজার মামলায় ৫৯ লাখের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। বিএনপির চার হাজার ৭৭১ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। গুম করা হয় এক হাজার ২০৪ জনকে। জুলাই বিপ্লবে নিহত হয়েছেন ৪২২ নেতাকর্মী। খালেদা জিয়ার নামে মামলা ছিল ৩৭টি এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১৩৫টি।
গুমের শিকার
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুমের শিকার হয় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী, নির্বাহী কমিটির সদস্য চৌধুরী আলম, সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম হীরু, বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির পারভেজ, তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল সভাপতি আমিনুল ইসলাম জাকির, তেজগাঁও থানা বিএনপির নেতা সাজেদুল হক সুমন, সাজেদুলের খালাতো ভাই জাহিদুল করিমসহ বিভিন্ন দলের এক হাজার ২০৪ জনকে গুম করা হয়। তার মধ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজত থেকে ৭৮১ জন। অন্যদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় শুধু বিএনপির ৪২৩ জন গুমের শিকার হন। বর্তমানে গুমের শিকার ২৮ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
হাসিনার অবৈধ ক্ষমতাকে কেউ যাতে প্রশ্ন করতে না পারে, সে জন্য বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, জেল-জুলুম, ক্রসফায়ার ও আয়নাঘরে বন্দি করে নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ক্রসফায়ায়ের মতো বিচারবহির্ভূত হত্যার জঘন্য খেলায় মেতে ওঠে স্বৈরাচার সরকার।
ক্রসফায়ারে হত্যা
বিএনপির গুম, খুন ও মামলাসংক্রান্ত নথি নিয়ে কাজ করে বিশেষায়িত একটি সেল। এ সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবেক ওসি সালাহ উদ্দিন খান জানান, ২০০৭ থেকে ২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে কতিপয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের মাধ্যমে বিএনপির দুই হাজার ২৭৬ জন নেতাকর্মী ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে।
তার মধ্যে শুধু কক্সবাজার জেলায় ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে ২০০ বিএনপির নেতাকর্মী ও সর্মথক। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ১০৪, লক্ষ্মীপুরে ৮৮ জন, কুমিল্লায় ৭৩, যশোরে ৮৮ জন, ঢাকা মহানগরে ৫২, ময়মনসিংহে ৫৪, সাতক্ষীরা জেলায় ৫১, খুলনায় ৫৪, কুষ্টিয়া ৬২, ঝিনাইদহ ৫৯, ফেনী ৫৭ ও নোয়াখালীতে ৫৪। এ ছাড়া দেশের ৬৪ জেলায় শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যাকে হুমকি মনে করেছেন, তাকেই হয় বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে, না হয় পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের ক্রসফায়ারের বিষয়ে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, দেশের জনগণের অধিকার হরণ করে কর্তৃত্ববাদী শাসনকে সুবিন্যস্ত করতে গুম ও খুনের পথ বেছে নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। তারই অংশ হিসেবে ক্রসফায়ার নাটক শুরু করে। তার ধারাবাহিকতায় যাদের হুমকি মনে করা হতো, তাদের ক্রসফায়ার দিয়ে দিত তারা।
গুম-খুনের দায়ে শেখ হাসিনার বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতোমধ্য গুম ও ক্রসফায়ারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দিয়েছে। এ ছাড়া আমরা জনগণের কাছে কমিটমেন্ট করেছি, বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলে প্রতিটি গুম-খুনের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসবে।
বিএনপির দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণের মাধ্যমে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার বন্দোবস্ত করে হাসিনা। এ সময় মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। সেটিকে বানচাল করার জন্য কর্মসূচি আগে ও কর্মসূচির দিনে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ও আওয়ামী লীগের যুবলীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে হত্যার শিকার হন দলটির দুই হাজার ৭৩ নেতাকর্মী। এদের বেশির ভাগ পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে।
বিএনপির দপ্তর জানায়, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানে জাতিসংঘের তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, মারা গিয়েছে এক হাজার ৪০০ জন। তার মধ্যে বিএনপির ৪২২ জন নেতাকর্মী ও সমর্থক রয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। এ ছাড়া গুরুতর আহত হন কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক।
মামলায় পর্যুদস্ত বিএনপির শীর্ষনেতাসহ কর্মীরা
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের তথ্যমতে, ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেন ও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এক লাখ ৪২ হাজার ৯৮৩টি মামলায় আসামি করা হয়েছে ৫৯ লাখ ২৯ হাজার ৪৯২ জনকে। এসব মামলায় নেতাকর্মীরা জামিন ও হাজিরা নিয়ে আদালতপাড়ায় নিয়মিতই দৌড়াচ্ছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন মামলায় সাজা হয়েছে দেড় হাজারের মতো নেতাকর্মীর, যার ৯৯ ভাগই মিথ্যা ও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক।
এর মধ্যে দলটির প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা দেওয়া হয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয় ১৩৫টি। আর মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয় ৬৪টি।
বিএনপির দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব ছাড়াও অন্য নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে সাতটি, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের চারটি, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে তিনটি, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার ১৯টি, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ৪৮টি, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ৩২টি, ড. আব্দুল মঈন খানের একটি, নজরুল ইসলাম খানের ছয়টি, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছয়টি, সালাহউদ্দিন আহমেদের ৩৫টি, বেগম সেলিমা রহমানের চারটি ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা দেওয়া হয়।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে আমানউল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে ১৩৪টি, মিজানুর রহমান মিনুর ১৮টি, জয়নুল আবদিন ফারুকের ১২টি, প্রফেসর জয়নাল আবেদীনের (ভিপি) সাতটি, মনিরুল হক চৌধুরীর তিনটি, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর ১৪টি, হাবিবুর রহমান হাবিবের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা।
সদ্য মৃত্যুবরণ করা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে তিনটি, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বীরবিক্রম পাঁচটি, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী ১১টি, বরকত উল্লাহ বুলুর ১৩৫টি, মো. শাহজাহান ১৭টি, আব্দুস সালাম পিন্টুর ১৯টি, মোসাদ্দেক হোসেন ফালুর ৯টি, আব্দুল আউয়াল মিন্টুর চারটি, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ১৭টি, শামসুজ্জামান দুদুর ১১টি, অ্যাডভোকেট আহমদ আযম খানের ছয়টি, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ১৮টি, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৯টি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম ৪৯টি, এম কে আনোয়ার ১৯টি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ ৪১টি ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ২৮টি, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন চারটি ও সাদেক হোসেন খোকা ২৭টি মামলা নিয়েই মৃত্যুবরণ করেছেন।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে মামলা ১৮০টি, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শিমুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ১১৯টি, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের ১৫টি, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর বিরুদ্ধে ১০০, অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার ১৪টি, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে ২৫৪টি, খায়রুল কবির খোকনের ২১টি, হাবিব উন নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৪৫১টি মামলা, হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে ১৪টি, ফজলুল হক মিলনের বিরুদ্ধে ১৭টি।
যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদের বিরুদ্ধে ৪১টি, মাহবুবের রহমান শামীমের বিরুদ্ধে ৯টি, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর ৪৭টি, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ১৯টি, আসাদুল হাবিব দুলুর ১৪টি, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের তিনটি, অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিনের ১৭টি ও শামা ওবায়েদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা।
ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপনের বিরুদ্ধে দুটি, প্রচার সম্পাদক সাতটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদারের ১১টি, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালের চারটি, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালের ১৭টি, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হকের বিরুদ্ধে ১৫টি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন উজ্জ্বলের তিনটি, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেনের ৯টি, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক শামসুজ্জোহা খানের সাতটি, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপুর ৮৭টি, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়ার পাঁচটি, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবং বিএনপির বন ও পরিবেশ সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের ১৬টি, পল্লী উন্নয়ন সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তীর সাতটি, গ্রামসরকার সম্পাদক আনিসুজ্জামান খান বাবুর পাঁচটি, কারাবন্দি প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবের ৩৮টি, শিশু সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীর ছয়টি, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক আমজাদ হোসেনের চারটি, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসাইনের বিরুদ্ধে ২৫টি, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন শওকতের পাঁচটি, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিমের বিরুদ্ধে ২১টি, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নুর ৪০টি, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের বিরুদ্ধে ১২৬টি মামলা দেওয়া হয়।
অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সহসম্পাদক সাইফুল ইসলাম শিশিরের বিরুদ্ধে ৯টি, অ্যাডভোকেট সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়ার ১১টি, আবু সাঈদ চাঁদের ১৪টি, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের ২২টি, মেজর হানিফের পাঁচটি, আকবর আলীর ১০টি, এ কে এম সেলিম রেজা হাবিবের ছয়টি, মাহমুদুল হক রুবেলের ৯টি, অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলমের সাতটি, অ্যাডভোকেট খন্দকার আব্দুল হামিদ ডাবলুর তিনটি, হাসান উদ্দিন সরকারের ৯টি, আমিনুল ইসলামের ২৫টি, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টুর ১৪টি, তারিকুল আলম তেনজিংয়ের পাঁচটি, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারীর ১৩টি, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের ২১টি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা দায়ের করা হয়।
এর মধ্যে রাজশাহী বিভাগে ১১ হাজার ৪৬১টি মামলায় আসামি হয়েছেন সাত লাখ ৬৩ হাজার ৫৬৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩ হাজার ৪৮২টি মামলায় তিন লাখ ৭২ হাজার ৬৩৫ জন। কুমিল্লা বিভাগে ছয় হাজার ২৬৫টি মামলায় এক লাখ ১৫ হাজার ১৯৯ জন, রংপুর বিভাগে ৯ হাজার ৭০৪টি মামলায় তিন লাখ ৮১ হাজার ৪৭১ জন, ঢাকা বিভাগে ১৫ হাজার ৭৯টি মামলায় ছয় লাখ ৬১ হাজার ৫৫৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ছয় হাজার ৩৯৪টি মামলায় দুই লাখ ৫১ হাজার ১১৭ জন।
বরিশাল বিভাগে আট হাজার ৬৬২টি মামলায় তিন লাখ তিন হাজার ৫২১ জন, খুলনা বিভাগে ২৬ হাজার ৮৭১টি মামলায় ৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৭৩ জন, সিলেট বিভাগে আট হাজার ৪৩৪টি মামলায় দুই লাখ ২১ হাজার ৭৪৪ জন ও সব মহানগরে ৩৫ হাজার ২৮৪টি মামলায় আট লাখ ৯০ হাজার ৫১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আসামি করা হয়েছে খুলনা বিভাগে।
ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা ও নির্যাতনের বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী আমার দেশকে বলেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা তার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গুম-খুন ও মামলার রাস্তা খুঁজে নেয়। বিশেষ করে যেসব নেতাকে ফ্যাসিবাদী ক্ষমতায় টিকে থাকতে হুমকি হিসেবে মনে করতেন, তাকে সে মামলা দিয়ে বা গুম করে ফেলত, নয়তো ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যা করত। এরকম অমানবিক নির্যাতন, গুম-খুনের ভয়কে উপেক্ষা করে সাড়ে ১৫ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান হাসিনা।
শহীদ উদ্দিন চৌধুরী আরো বলেন, হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার দোসরা এখন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের লুট করা টাকা দিয়ে এখনো দেশকে অস্থিশীল করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের গুম-খুনের দায়ে গুরুত্ব বিবেচনায় হাসিনার বিচার করা ও দোসদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা।
জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন একটি ঐতিহাসিক দলিল এবং একে সংরক্ষণ করে পাঠ্যপুস্তকে এটা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে বলেও মনে করেন বিএনপির এই নেতা। পাশাপাশি গুম-খুন হওয়া নেতাকর্মীদের পরিবারের কাছে আর্থিক সহায়তা ও দলের হাইকমান্ড থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সবার মামলা প্রত্যাহারে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এবং বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। উনারা দুজনেই নেতা কর্মীদের আগামী নির্বাচন এর জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন।
Leave a Reply