বিশেষ সংবাদ:
এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেছেন, ‘বিভিন্ন ধরনের পন্য আমদানির জন্য ইতিমধ্যে সরকার শুল্ক ছাড় দিয়েছে। মাননীয় অবৈধ প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, এর ফলে দ্রব্যমূল্য কি কমেছে, বরং দিন দিন দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলেছে। কারণ আপনার দলীয় ও সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা এর সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও ফুটপাত, রাস্তা, বাস, ট্রাক, মিনিবাস-সহ বিভিন্ন অফিসে অহরহ দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি হচ্ছে। ফলে বুঝা যাচ্ছে, সরিষার মধ্যেই ভুত, এই ভূত তাড়াবে কে?’
শুক্রবার বিকাল ৩টায় মগবাজারে এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্নেল অলি বলেন, ‘এখন আবার মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে অনেকে অর্ধাহারে অতিকষ্টে জীবিকা নির্বাহ করছে। যেখানে নুন আনতে পান্থা ফুরায়। সেখানে তার ওপর যোগ হচ্ছে বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং জ্বালানী তেলের বর্ধিত মূল্য। নির্দিষ্ট আয়ের বা গরীব মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকবে, কে শুনবে তাদের নীরব কান্না? এর জবাব কি অবৈধ সরকার দিতে পারবে? এছাড়াও বর্তমান সরকার শুধু অবৈধই নয় বরং ভুয়া ভোটে নির্বাচিত। তাই জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। অন্যদিকে ডলার ও দেশীয় মুদ্রার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে, ফলে সময়মত এল.সি. খোলা যাচ্ছে না।’
যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এদেশ কখনো গরীব ছিল না এবং গরীব নয়। এদেশ অনেক সম্পদশালী, প্রচুর সম্ভাবনাময়, উর্বর মাটি, পানি, খনিজ ও সমুদ্র সম্পদে ভরপুর, কঠোর পরিশ্রমী জনশক্তি। শুধু দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, টাকা পাচারকারী এবং ক্ষমতালোভীদের কারণে আজ দেশের এই দুরাবস্থা। এর জন্য প্রধানত দায়ী রাজনীতিবিদরাই।
‘তাহলে, এই অসহনীয় অবস্থা থেকে পরিত্রানের উপায় কি’ এমন প্রশ্ন ছুড়ে কর্ণেল অলি বলেন, ‘আত্মনির্ভরশীল হতে হবে, শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় নেমে সকল প্রকার অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। নিজের ভবিষ্যত নিশ্চিত করণের জন্য অবৈধ সরকার পতনের আন্দোলনে শরীক হতে হবে। তোমাদের মতো বয়সে আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই দেশ স্বাধীন করেছি। এখন তোমাদের দায়িত্ব, রক্ষা কর গণতন্ত্র, কায়েম কর সমাজে ন্যায় বিচার ও জবাবদিহিতা। দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ এবং সমাজে অন্যায়কারীদের প্রতিহত কর। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে আমূল পরিবর্তন আনার পথ সুগম কর। তাহলেই তোমরা এই দেশ নিয়ে গর্ব করতে পারবে। চাকুরির জন্য বিদেশে যেতে হবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সব সম্পদ দান করেছেন, প্রয়োজন শুধু সৎ রাজনীতিবিদ ও দক্ষ প্রশাসন। ঘরে বসে থাক না, সকলকে নিজ নিজ জায়গা থেকে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে হবে, আমাদের সকলকে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুষ্ঠু এবং সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোনো বিকল্প নাই। একগুঁয়েমি করে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া ঠিক হবে না। অবৈধ সরকারের উচিত হবে, সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার পন্থায় পুনঃনির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এতেই আসবে মুক্তি। সমগ্র দেশবাসী জানে, বর্তমান সরকার একটি দুর্নীতিগ্রস্ত, চাঁদাবাজ এবং ভোট চুরির সরকার। বিগত ১৫ বৎসর কোনো নির্বাচনে জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল না। এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনো বিচারও হচ্ছে না। কারণ নির্বাচন কমিশন আজ্ঞাবহ সেবাদাস হিসাবে কাজ করেছে।’
এলডিপির প্রেসিডেন্ট বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বে যে সমস্ত প্রার্থীরা তাদের সম্পদের হিসাব দিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির স্পষ্ট প্রমাণ দেখা যায়। কিন্তু কি কারণে দুদক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা আজ জনগণের মনে প্রশ্ন।
বিদেশীদের পরামর্শে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভবে ধ্বংস করা হয়েছে। আমাদের শিক্ষিত যুবকেরা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। দেশকে মেধা শূন্য করার পরিকল্পনা সুপরিকল্পিতভাবে সরকার বাস্তবায়ন করছে। নিজেদের শিক্ষিত যুবকেরা চাকুরি পাচ্ছে না, অথচ বিদেশীরা অবৈধভাবে চাকুরী নিয়ে বাংলাদেশে শ্বশুর বাড়ীতে জামাই আদরে বসবাস করছে।
তিনি বলেন, প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। যার কারণে সর্বত্র দুর্নীতি, চাঁদাবাজ, দখলবাজি ও মাদক বিনা বাধায় বিস্তার লাভ করেছে। ভোট চুরির মাধ্যমে বিগত ১৫ বছর যাবত দেশে গণতন্ত্র নাই। ফলে সরকারের উপর জনগণের আস্থাও নাই এবং ফিরেও আসবে না। ভোট চুরির জন্য বা দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য আওয়ামী লীগকে কারা সাহায্য করেছে, তা আজ কারো অজানা নাই। আপনাদের নিশ্চয় স্মরণ আছে ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে মিসেস সুজাতা সিং ঢাকায় কী বলেছিলেন। তিনি ভারত সরকারের একজন দায়িত্ববান কর্মকর্তাও ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনে কেউ অংশ গ্রহণ করুক বা না করুক নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি কীভাবে এ ধরণের বক্তব্য দিলেন। কেইবা তাকে এই ক্ষমতা দিয়েছিল। এটা আমাদের স্বাধীন দেশের রাজনীতিতে ভারত সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপ। এদেশের জনগণ মনে করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র হত্যা ও একদলীয় শাসন কায়েমের জন্য ভারত সরকারই দায়ী, ভারতের জনগণ নয়। ভারতের ভ্রান্ত পররাষ্ট্রনীতির কারণে আজ প্রত্যেকটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। কেন এমন হল, একবার ভেবে দেখুন। আমরা আপনাদের বন্ধু, শত্রু নই। দুই দেশের সম্পর্ক হবে জনগণের মধ্যে, যা হবে স্থায়ী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রীও বলেছিলেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতো। তিনি একজন নির্লজ্জ, বেহায়া। বলা উচিত ছিল, সম্পর্ক হবে বন্ধু সুলভ।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম প্রথম বুঝতে কষ্ট হলেও এখন পরিস্কারভাবে বুঝতে পেরেছি, কেন জনগণ ভারতের পণ্য বর্জনের কথা বলছে। অবৈধভাবে চাকুরিরত ভারতীয়দের দেশ ছাড়ার বিষয়ে জনগণ কেন সোচ্চার হয়েছে। মানুষ মনে করে, এদেশে গণতন্ত্র ধ্বংস ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য ভারত সরকার দায়ী। ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নাই। অতি সম্প্রতি আমি সৌদি আরব গিয়েছিলাম। প্রবাসীরা কেন দেশে ডলার পাঠাচ্ছে না, তা জানার চেষ্টা করি। তাদের কাছে জানতে পারলাম, প্রবাসীরা মনে করে, দেশে ডলার পাঠানোর অর্থই হচ্ছে, শিয়ালকে দিয়ে মুরগি পাহারা দেওয়ার মতো। তারা আরও বলেছে, আমরা কষ্ট করে ডলার রোজগার করি, অন্যদিকে ক্ষমতাশীনেরা তা বিদেশে পাচার করে। এতে জনগণ উপকৃত হয় না, বরং একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত হচ্ছে, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হচ্ছে। সুতরাং আমরা দেশে ডলার পাঠিয়ে গণতন্ত্র হত্যাকারীদের সাহায্য করতে পারি না।’
(ঢাকাটাইমস/০১মার্চ/জেবি/এসআইএস)
Leave a Reply