বিশেষ সংবাদ:
রমজান মাসে গাজায় ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি’র আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাশ করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের সভায় প্রস্তাবটি পাশ করা হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ছাড়াও নিঃশর্তভাবে জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় ত্রাণ সরবরাহ ‘বাড়ানোর জরুরি প্রয়োজন’ উল্লেখ করে এ প্রস্তাব আনা হয়।
যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা, গাজায় ত্রাণ বাড়ানো-এই তিন দাবিতে মোজাম্বিক নিরাপত্তা পরিষদের সভায় প্রস্তাব উপস্থাপন করে। এ প্রস্তাবের ওপর ভেটো না দিলেও ভোটদানে বিরত ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
তবে এর সমর্থনে ভোট পড়েছে ১৪টি। প্রস্তাব পাশের পর জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড এ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশে বিলম্বের জন্য হামাসকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, এ প্রস্তাবের সব কিছুর সঙ্গে আমরা একমত নই। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভোটদানে বিরত ছিল বলে তিনি জানান।
প্রস্তাব পাশের পর প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে বলেন, দীর্ঘ প্রতিক্ষীত এ প্রস্তাব অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। নিরাপত্তা পরিষদের ব্যর্থতা ক্ষমা করা হবে না।
এদিকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশের পর হোয়াইট হাউজ এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র জরুরি বিবেচনা করে এ ভাষা চূড়ান্ত প্রস্তাবে ছিল না। এ প্রস্তাব পাশ যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করে না। তবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, এ প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়ার ব্যর্থতা এর আগের অবস্থান থেকে পিছু হটারই স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে। এর মাধ্যমে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তৎপরতা ব্যাহত হবে। সেসঙ্গে ১৩০ জিম্মির মুক্তির প্রচেষ্টাকেও ব্যাহত করবে। যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থানের কারণে নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনে উচ্চপর্যায়ের কোনো প্রতিনিধিকে পাঠাবেন না বলেও তার অফিস থেকে জানানো হয়।
ফিলিস্তিনের নেতাদের নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এবার সঠিক সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনতিবিলম্বে প্রস্তাব বাস্তবায়নে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোকে তাদের নৈতিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের আহ্বান জানিয়েছে।
অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনে অক্টোবরে হামলা শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির কারণে নিরাপত্তা পরিষদে অচলাবস্থা বিরাজ করছিল। তাই নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধবিরতির আহ্বানে সম্মত হতে পারছিল না। এখন গাজায় ইসরাইলের হামলা প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান থেকে সরে আসার বিষয়টি মিত্র ইসরাইলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মতবিরোধের ইঙ্গিত বহন করে।
ইতোমধ্যে গাজায় ইসরাইলের বোমাবর্ষণে ৩২,০০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ওয়াশিংটন ইসরাইলের সমালোচনা করেছে। পাশাপাশি তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা গাজায় ত্রাণ বিতরণের জন্য আরও তৎপর হতেও যুক্তরাষ্ট্র ইসারইলকে চাপ দিয়েছে।
এদিকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ত্রাণ সরবরাহে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ। আর ইসরাইল ত্রাণ বিতরণে ব্যর্থতার জন্য জাতিসংঘকে দায়ী করেছে।
ইসরাইলে ফিলিস্তিনের ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হামাসের হামলায় পর গাজায় ৭ অক্টোবর হামলা শুরু করে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। এ হামলায় এরই মধ্যে সেখানে মানবিক বিপর্যয়ের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
Leave a Reply