বিশেষ সংবাদ:
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে বুধবার (২৭ মার্চ) মধ্যরাতে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাকর্মীসহ বহিরাগতদের প্রবেশের প্রতিবাদে শুক্রবার (২৯ মার্চ) দিনভর বিক্ষোভ করছে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার দুপুর আড়াইটা থেকে বুয়েট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হতে শুরু করে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘ছাত্র রাজনীতির ঠিকানা, এই বুয়েটে হবে না’, ‘আবরার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘পলিটিক্সে যুক্ত যারা, হল থেকে করব ছাড়া’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এ সময় তারা সংবাদ সম্মেলন করে পাঁচ দাবি ঘোষণা করেন।
সাথে নিরাপত্তা বিষয়ক শঙ্কা প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা আগামী শনিবার ও রোববারের সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন ঘোষণা করেছেন। প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত (শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা) বুয়েট শিক্ষার্থীরা ডিএসডব্লিউ কার্যালয়ের সামনে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। উপাচার্য ও ছাত্র কল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক শিক্ষার্থীদের সাথে এসে কথা বলে দাবি আদায়ের আশ্বাস না দেওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলনের করে যাবেন বলে জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বুয়েট শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পাঁচ দাবি তুলে ধরা হয়।
এগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে বুধবার (২৭ মার্চ) মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ রাব্বিকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হলের আসন বাতিল; ওই ঘটনায় ইমতিয়াজ রাব্বির সঙ্গে বুয়েটের বাকি যেসব শিক্ষার্থী জড়িত ছিলেন, তাদের বিভিন্ন মেয়াদে হল এবং টার্ম বহিষ্কার; যেসব বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না ও তারা কেন কীভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেলেন, সে ব্যাপারে বুয়েট প্রশাসনের সুস্পষ্ট সদুত্তর ও জবাবদিহি; প্রথম দুটি দাবি দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন না হলে ডিএসডব্লিউর পদত্যাগ; আন্দোলনরত বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো রকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, গত বুধবার রাত ১টার দিকে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানতে পারি, বুয়েটে একটি বিশেষ রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ এসেছেন এবং তারা ক্যাম্পাসের মেইন গেইট দিয়েই প্রবেশ করে ভেতরে ঢুকেছেন। রাত সাড়ে ১০টার পরে যেখানে নিরাপত্তাজনিত কারণে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদেরই ক্যাম্পাসে ঢোকার অনুমতি নেই সেখানে রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট বহিরাগত ব্যক্তিদের মধ্যরাতেই আমাদের প্রাণের ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশ ঘটে। ঘটনার তীব্রতা বাড়তে থাকে রাত বাড়ার সাথে সাথে, একের পর এক বহিরাগত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ক্যাম্পাসের মেইন গেইটের সামনে আসতে থাকে।
বিপুল সংখ্যক বহিরাগত ক্যাম্পাসে অনায়াসে প্রবেশ করতে থাকে এবং একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেখতে পায়, মিছিলের মতো করে বিশাল একটি জনবহর হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে আমাদের ক্যাম্পাসে রাত ২টার পর প্রবেশ করতে থাকে। দুঃখজনকভাবে, এই বিশাল জনবহর এর সকলেই বহিরাগত ছিল এবং তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভেতরে প্রবেশ করে মধ্যরাতের সেই সময়টাই বিশেষ ওই ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দদের চিনতে পারে যা সুস্পষ্ট জানান দেয় এত বিপুল জনসমাগম রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ এমন একটি ক্যাম্পাসে রাতের আঁধারে ঘটে যাওয়া এত বড় একটি রাজনৈতিক সমাগম এবং বহিরাগতদের আগমন ক্যাম্পাসের মর্যাদার প্রতি তীব্র অপমানজনক। একই সাথে এটি একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু স্বাভাবিক শিক্ষা পরিবেশের নিরাপত্তার ব্যাপারকে গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তর কোনোরুপেই উক্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়ার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না।
তারা আরও বলেন, মধ্যরাতে বহিরাগত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের এমন দাপটসহ প্রবেশ কর্তৃপক্ষ এবং ডিএসডাব্লিউ এর দৃষ্টির অগোচরে হওয়া অসম্ভব। ঘটনা ঘটে যাওয়ার দেড় দিন পার হয়ে গেলেও ডিএসডাব্লিউ থেকে উক্ত ঘটনার সাথে সম্পর্কিত কোনো প্রকার সদুত্তর এবং জবাবদিহিতা এখন পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আসেনি। ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে তারা প্রবেশের অনুমতি কিভাবে কর্তৃপক্ষ থেকে পেয়েছিল এই সম্পূর্ণ ব্যাপারটি এখনো ধোঁয়াশাপূর্ণ এবং সন্দেহের সঞ্চার করে যে কিভাবে এবং কোন মদদে তারা প্রবেশ করতে পারল? এর সমস্তই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটে বর্তমানে চলমান পাঁচটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিপুল সমালোচনার ঝড় ওঠে, তারা তাদের নিন্দা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রতিটি আলাদা আলাদা ব্যাচ নিজেদের মধ্যে দীর্ঘ সময়ব্যাপী আলোচনা করে, তা অন্য ব্যাচদের সামনে তুলে ধরে এবং পরিশেষে সকল ব্যাচ কিছু সম্মিলিত সিদ্ধান্ত এবং দাবি দাওয়ায় উপনীত হয়। ক্যাম্পাসের সবচেয়ে অগ্রজ ব্যাচ ইন্টার্ভাল প্রতিটি ব্যাচের ঐক্যবদ্ধ দাবিগুলোকে সুসংগঠিত করে পেশ করে।
Leave a Reply