বিশেষ সংবাদ:
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো কাপ্তাই সড়ক অবরোধ এবং ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করছে।
শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৯ দফা দাবি দিয়ে মঙ্গলবার ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। দাবি পুরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ, সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কর্মসূচি ঘোষণার সময় সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি, ছাত্র কল্যাণ পরিচালক, শিক্ষক ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সোমবার বিকেল তিনটার দিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার জিয়ানগর সড়কে মোটর সাইকেল আরোহী চুয়েটের তিন শিক্ষার্থীকে পেছন থেকে শাহ আমানত পরিবহনের একটি বাস ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা এবং গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌফিক হোসাইন। এছাড়া গুরুতর আহত পুরকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাকারিয়া হিমু চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাসটি আটক করলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়।
নিহত শান্ত সাহা নরসিংদী জেলা সদরের চার নাম্বার ওয়ার্ডের কাজল সাহার ছেলে এবং তৌফিক হোসেন নোয়াখালী সদর উপজেলার সুধারাম থানার নিউ কলেজ রোডের দুই নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় চুয়েট ক্যাম্পাসে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তৌফিক হোসেনের লাশ তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সুধারামে দাফন করা হয়েছে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সে ছিলো সবার বড়। তারা বাবা দেলোয়ার হেসেন নোয়াখালী পৌরসভার প্রকৌশলী বলে জানান তৌফিকের বন্ধু নাফিজ হাসান নাফি।
আর শান্ত সাহার মরদেহ নরসিংদীতে তার গ্রামের বাড়িতে সৎকার করা হয়েছে বলে তার ভাই পার্থ সাহা জানান।
সোমবার সন্ধ্যার দিকে ক্যাম্পাসে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর পৌঁছলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। তারা ক্যাম্পাসের সামনে গাছের গুড়ি ফেলে কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে এবং শাহ আমানত পরিবহনের চারটি বাস আটক করে। এর মধ্যে একটি বাস তারা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা আবার কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করলে মহাসড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করছে। তারা দিনভর ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে। কাপ্তাই সড়কে তারা টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে।
শিক্ষার্থীরা বিকেলে ১০ দফা দাবি জানান সংবাদ সম্মেলন করে। দাবিগুলোর মধ্যে আছে : পলাতক চালক ও তার সহযোগীকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, সুযোগ সুবিধা সংবলিত আধুনিক চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন, হাসপাতালে আধুনিক সরঞ্জামসহ অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা দেয়া, রাস্তার মাথা (কাপ্তাই) এলাকা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত চার লেন মহাসড়ক করা, প্রতিটি বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার কাগজপত্র ও চালকদের লাইসেন্স নিয়মিত যাচাই করা, শাহ আমানত ও এবি পরিবহন এই সড়কে নিষিদ্ধ করা, শিক্ষার্থী অনুপাতে ছাত্র বাস বাড়ানো, ছাত্রকল্যাণ পরিষদকে জবাবদিহির আওতায় আনা, ছাত্র প্রতিনিধিদল গঠন করা, নিহত ও আহতদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার সব ব্যয়ভার বহন করা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন অণুরাগ নন্দি অভিযোগ করেন, “দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর আমরা অনুরোধ করেও বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের অ্যাম্বুলেন্স পাইনি। পেলে হয়তো আরো একজনকে বাঁচানো যেত। ঘটনার দুই ঘন্টা পর তাদের হসাপাতালে নেয়া হয়। প্রথমে অটোরিকশা ও পরে অ্যাম্বুলেন্সের সহায়তায়। আর মেডিকেল সেন্টারেও এই ধরনের আহতদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নাই।”
তিন জানান, “কয়েক মাস আগেও এই সড়কে এবি ট্রাভেলস নামে আরেকটি পরিবহনের একটি বাস মোটরসাইকেলকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়ায় দুই জন ছাত্র আহত হয়েছিলেন। তখনো আমরা ওই পরিবহনের বাস আটকে সড়কের নিরাত্তার প্রতিশ্রুতি চেয়েছিলাম। তখন আমাদের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ”
“আমরা এখন যে ১০ দফা দাবি দিয়েছি তা পুরণের জন্য ৭২ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত প্রতিশ্রুতি চাই। কোন দাবি কত দিনে পূরণ করা হবে তাও লিখিত দিতে হবে। তার আগ পর্যন্ত আমাদের সব ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আর ৭২ ঘন্টার মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আরো কঠোর আন্দোলনে যাবো আমরা,” বলেন তিনি।
আরেক জন ছাত্র নাজমুল হাসান বলেন, “কর্মসূচি ঘোষণার সময় ভিসি, প্রোভিসিসহ প্রশাসনের লোকজন ছিলেন। তারা দাবি মেনে নেয়ার তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিশ্রুতি না দিয়ে সময় নিয়েছেন। তবে তারা দাবির সঙ্গে একমত হয়েছেন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন,”দুইজন ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। ছাত্রদের দাবির সবগুলো আমাদের পক্ষ পুরণ করা সম্ভব নয়। এর জন্য নানা কর্তৃপক্ষ আছে। আর কিছু দাবি আছে যা পুরণ করতে সময় লাগবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বসে দাবিগুলো নিয়ে কথা বলব। কীভাবে পুরণ করা যায় দেখব। যেমন চার বা ছয় লেনের মহাসড়ক তো আমরা করতে পারবনা। দায়ীদের আটক করবে পুলিশ। আমরা সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আর আমরা যেগুলো সম্ভব সেগুলো পুরণ করব।”
Leave a Reply