বিশেষ সংবাদ:
শুরুটা বাংলাদেশের আর শেষটা জিম্বাবুয়ের। ইনিংসের প্রথম ১১ ওভারে দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ও সৌম্য সরকার মিলে তোলেন ১০০ রান। প্রথম উইকেট জুটিতে ৬৮ বলে ১০১ রান তোলা সেই বাংলাদেশই ১৯.৫ ওভারে অলআউট ১৪৩ রানে। অর্থাৎ শেষ ৪২ রানে বাংলাদেশ হারিয়েছে ৯ উইকেট। তাতে চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে ১৪৪ রানের। দারুণভাবে ম্যাচে ফেরার কৃতিত্বটা পাবেন জিম্বাবুয়ের বোলাররা। পেসার জঙ্গুয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট, বেনেট ও এনগারাভা নিয়েছেন দুটি করে উইকেট।
জিম্বাবুয়ের ইনিংসে চতুর্থ বলেই উইকেট নিলেন পেসার তাসকিন আহমেদ। তাঁর শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দেন ওপেনার ব্রায়ান বেনেট। ৪ বলে ০ রানে আউট হলেন বেনেট।
ক্রিজে মারুমানির নতুন সঙ্গী অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। ক্রিজে নেমেই তাসকিনের ওভারের শেষ বলে চার মেরেছেন রাজা।
দ্বিতীয় ওভারে পেসার তানজিম হাসানকে তিনটি চার মেরেছেন রাজা। এই ওভারে ১৪ রান দিয়ে বাজে শুরু করলেন তানজিম।
৭ বলে ১৬ রানে অপরাজিত রাজা। মারুমানি অন্য প্রান্তে ১ বলে ১ রানে অপরাজিত।
আক্রমণে এসে প্রথম তিনটি বল লেগ স্টাম্পের ওপর করেছিলেন সাকিব আল হাসান। প্রথম ও দ্বিতীয় বলে চার মেরেছেন মারুমানি। নিজের প্রথম ওভারে ৮ রান দিয়ে বোলিং শুরু করলেন সাকিব।
বলটা পিচ করে একটু ভেতরে ঢুকেছিল। সিকান্দার রাজার পা যেন অসাড়! সামনে পা নিয়ে খেললে হয়তো ব্যাটে পেতেন। কিন্তু জায়গায় দাঁড়িয়ে বলটা ঠেকাতে গিয়ে বোল্ড হন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। ১০ বলে ১৭ রানে ফিরলেন রাজা। এর মধ্য দিয়ে রাজা এবং মারুমানির ২৮ রানের জুটিও ভাঙল।
নিজের দুই ওভারে ১টি করে উইকেট নিলেন তাসকিন।
১৩ বলে ১৪ রান করা মারুমানিকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে আউট করলেন সাকিব। সুইপ করতে গিয়ে বল ব্যাটে পাননি জিম্বাবুয়ে ওপেনার। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর রিভিউ নিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। কিন্তু লাভ হয়নি। পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলেই উইকেট পেলেন সাকিব।
পরের বলেই ক্লাইভ মাদান্দের বিপক্ষে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করেছিলেন সাকিব। আম্পায়ার নাকচ করে দেওয়ায় রিভিউও নিয়েছিলেন। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার আউট দেননি।
পাওয়ার প্লে–র ৬ ওভারে ৩৭ রান তুলেছে জিম্বাবুয়ে। উইকেট হারিয়েছে ৩টি। রান তাড়ায় খুব ভালো শুরু বলা যায় না।
ষষ্ঠ ওভারে বোলিংয়ে এসে ৫ রান দিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
লেগ স্পিনার রিশাদের বলে রিভার্স সুইপ খেলতে চেয়েছিলেন মাদান্দে। ব্যাট বলে হয়নি। এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেছেন ১৮ বলে ১২ রান করে। তাতে ২৫ রানের জুটি ভাঙে জিম্বাবুয়ের।
রিশাদের করা ইনিংসের দশমের ওভারের প্রথম বলে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে জোনাথন ক্যাম্পবেলের ক্যাচ ছাড়েন হৃদয়। এরপর পরের ওভারেই তানজিমের বলে রায়ার্ন বার্লের ক্যাচ ফেলেন উইকেটকিপার জাকের। যদিও হৃদয়ের তুলনায় জাকেরের ক্যাচটি কিছুটা কঠিন ছিল।
ওভারের প্রথম বলে ছক্কা, পরেরটিতে চার। এর পরের দুই বলে এল ৩ রান, পরেরটিতে আবার ছক্কা। সব মিলিয়ে তানজিমের করা ইনিংসের ১৩ ওভারে ২০ রান নিয়েছেন ক্যাম্পবেল ও বার্ল।
ভালোই জবাব দিচ্ছিল জিম্বাবুয়ে। ৬ ওভারে জিম্বাবুয়ের ৫২ রান প্রয়োজন, এমন সময়ে বোলিংয়ে আসেন মোস্তাফিজ। ওভারের প্রথম দুই বলে ডট খেলা বার্ল তৃতীয় বলে খেলতে চান বড় শট। মোস্তাফিজের স্লোয়ারে ঠিকভাবে টাইমিং করতে পারেননি। মিড অনে ক্যাচ দিয়েছেন সৌম্যর হাতে। এই ওভারের শেষ বলে রিশাদের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লুক জঙ্গুয়েও।
মিডল ওভারে সাকিবকে দেখা যায়নি। পাওয়ার প্লেতে দুই ওভারে ১৩ রান দেওয়া সাকিব আবার বোলিংয়ে এলেন ইনিংসের ১৭তম ওভারে। বোলিংয়ে এসেই ওভারের প্রথম বলে আউট করেছেন ক্যাম্পবেলকে। ২৭ বলে ৩১ রান করেছেন এই বাঁহাতি। ৩ ওভারে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ২৭ রান।
২ ওভারে ২১ রান। সমীকরণটা খুব কঠিন নয়। জিম্বাবুয়ের এমন সমীকরণ আরও একটু সহজ হয় ১৯তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি হলে। তবে ওভারেই তৃতীয় বলে ফারাজ আকরামকে ফিরিয়ে আবারও বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন মোস্তাফিজ। দুর্দান্ত ক্যাচ নেন তানজিদ হাসান। স্লোয়ারে উইকেট পাওয়ার পরের দুটি বলও মোস্তাফিজ করেন স্লোয়ার। দুটি বলেই ব্যাটে লাগাতে পারেননি মুজারাবানি। ওভারের শেষ বলে মুজারাবানির নিশ্চিত ছক্কা বাঁচিয়ে দেন অধিনায়ক নাজমুল। তাতে শেষ ওভারে জিম্বাবুয়ের দরকার ১৪।
শেষ ওভারে জিম্বাবুয়ের দরকার ১৪ রান। সাকিবের করা ওভারের প্রথম বলে মাসাকাদজার ক্যাচ মিস করেন তানজিদ। পরের বল মুজারাবানি মিস করলেও তৃতীয় বলে মারেন ছক্কা। ৩ বলে ৭ রানের সমীকরণটা মোটেই কঠিন কিছু নয়!
তবে এমন সমীকরণে মুজারাবানিকে ফেরান সাকিব। এরপর এনগারাভাকে প্রথম বলে বোল্ড করে বাংলাদেশকে ৫ রানের জয় এনে দেন এই অলরাউন্ডার। এই জয়ে সিরিজে ৪–০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছে আগেই। আজকের ম্যাচে ৫ রানে জয়ে পাঁচ ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজে ৪–০ ব্যবধানে এখন এগিয়ে বাংলাদেশ। তবে এমন জয়ে বিশ্বকাপের আগে কতটা তৃপ্তিতে থাকতে পারবে বাংলাদেশ, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়।
টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে আজ প্রথম দল হিসেবে ওপেনিং জুটিতে ১০০ রান তোলার পর অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। শেষ ৪২ রানে বাংলাদেশ হারিয়েছে ৯ উইকেট। ৫ রানের জয়ে এমন বিভীষিকাময় ব্যাটিং কী ভোলা যায়!
Leave a Reply