বিশেষ সংবাদ:
বাংলাদেশে ২৫ বছর আগে খুন হওয়া চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অরুণাভ চক্রবর্তী এ রায় দিয়েছেন। বাকি ছয় আসামিকে খালাস দিয়েছে আদালত।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলো আবদুল আজিজ ওরফে আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকী। পাশাপাশি তাদের দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে আরও একমাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আসামিরা সবাই পলাতক থাকায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।
এছাড়া মামলার আসামি আশীষ রায় চৌধুরী ও সানজিদুল ইসলাম ইমনসহ বাকি ছয় আসামিকে খালাস করে রায় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, এ মামলার সাক্ষীরা গা বাঁচিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষীদের মধ্যে পক্ষপাতদুষ্টতা ছিল। অনেক সাক্ষী মারাও গিয়েছেন। দীর্ঘকাল একটা মামলার বিচার চলতে পারে না। প্রতিটি মৃত আত্মাই তার বিচার চায়।
মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু। রায়ের পরে তিনি বলেন, “২৫ বছরের পুরোন মামলায় আদালত সাক্ষীদের সাক্ষ্যে যতটুকু পেয়েছেন সেই ভিত্তিতে রায় হয়েছে। এটি ভালো রায় হয়েছে।”
এ মামলার পলাতক আসামি আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন ইমামুল হোসেন ফিরোজ।
রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “এ মামলার সাক্ষীরা কেউই আজিজ মোহাম্মদের নামে কিছু বলেনি। ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে যাদের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে তারা সরাসরি তাকে কেউই অভিযুক্ত করেনি। ফলে এ রায়টি সঠিক হয়নি।”
আইনানুযায়ী পলাতক ব্যক্তিরা আপিল করতে হলে আত্মসমর্পণ করতে হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করতে হলে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে আত্মসমর্পণ করতে হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
মামলার চার্জশিটে বলা হয়েছে, ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
বনানীর ১৭ নম্বর রোডে অবস্থিত আবেদিন টাওয়ারের সাত তলায় ছিল এই ট্রাম্পস ক্লাবের অবস্থান। ঘটনার দিনই তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্লাবের নিচের দরজার সামনে উপুড় হয়ে পড়া ছিল নায়ক সোহেল চৌধুরীর লাশ।
সোহেল চৌধুরী খুন হওয়ার পর চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে।
পরের বছর আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ আরো নয়জনকে এ মামলার আসামি করা হয়।
ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে চার্জশিটে বলা হয়েছে, ১৯৯৮ সালের ২৪ শে জুলাই ট্রাম্পস ক্লাবে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর একটি ঘটনায় বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়।
এরই প্রেক্ষিতে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এবং ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশীষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর বিরোধ শুরু হয়। সেদিন রাতে সোহেল চৌধুরীকে ক্লাব থেকে বের করে দেন আশীষ রায় চৌধুরী। ক্লাবে আর না আসার জন্যও হুমকি দেয়া হয়। প্রতিশোধ নিতে হত্যা করা হয় নায়ক সোহেল চৌধুরীকে।
চব্বিশে জুলাই ছাড়াও কয়েকবারই সোহেল চৌধুরীর সাথে ট্রাম্পস ক্লাবের অতিথি এবং কর্মীদের “গোলমাল” হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে চার্জশিটে।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, ক্লাবটিতে “অসামাজিক কার্যকলাপ, নাচ গান, মদ্যপান” করা হতো। এই ক্লাবের পশ্চিম পাশে ছিল একটি জামে মসজিদ। ক্লাবের কার্যক্রম বন্ধে মসজিদের মুসল্লিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন সোহেল চৌধুরী।
মসজিদ কমিটির লোকজন নিয়ে তিনি ক্লাব বন্ধ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন বলে মামলাটির অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। সে সময় ক্লাবের কাজ ব্যাহত হলে তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় আসামিরা।
সূত্র-বিবিসি
Leave a Reply