বিশেষ সংবাদ:
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো নিয়ে সংকটের জন্য সে দেশের সরকার এবং বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দায়ী। এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে কর্মী পাঠানোতে কোনো অনিয়ম হয়নি।
আজ মঙ্গলবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব কনভেনশন হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)। তাদের দাবি, ৩১ মে পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়নি।
শেষ পর্যন্ত যেতে না পারা মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের সমস্যার সমাধান, বাস্তবতার আলোকে রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাতে ১০১টি এজেন্সির প্যানেলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১০১টি এজেন্সির মধ্যে সরকারি এজেন্সি বোয়েসেল ও মো. নূর আলীর এজেন্সি ইউনিট ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডও আছে। নূর আলীর নেতৃত্বাধীন একটি গোষ্ঠী ব্যবসায়িক ফায়দা হাসিল ও নির্বাচনী সুবিধা নিতে গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। নামে-বেনামে তিনি মালয়েশিয়ায় ব্যবসা করার পরও বায়রা নির্বাচনকে সামনে রেখে অপপ্রচারে নেমেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বায়রার সাবেক মহাসচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিন স্বপন বলেন, ‘গত ৩১ মে পর্যন্ত মালয়েশিয়া সরকার ই-ভিসা ইস্যু করেছে। বাংলাদেশ সরকারও অনুমোদন দিয়েছে। ৩০ বা ৩১ মে যদি ই-ভিসা ইস্যু করা হয়, তাহলে আমরা কীভাবে তালিকা করব? যদি গত ১৫ মার্চ অথবা মার্চে বন্ধ হওয়ার ঘোষণার পর ই-ভিসা ইস্যু ও অনুমোদন বন্ধ করা হতো, তাহলে এই সংকট তৈরি হতো না।’
বায়রার এই সাবেক মহাসচিব আরও বলেন, ‘১৬-১৭ হাজার কর্মী যায়নি সেটা আজকের বিষয় না, এটা গত ২২ মাস আগের থেকে বিষয়। এটা অনেক আগে থেকেই সেটেল্ট হচ্ছিল। বছর শেষে যখন ব্যবসা শেষ হলো তখন আমরা বলছি, টোটাল ১৭ হাজার কর্মী যেতে পারেনি।’
বায়রার সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, দুই দেশের সরকার চুক্তি করে মালয়েশিয়াকে এজেন্সি বাছাইয়ের সুযোগ করে দিয়েছে। মালয়েশিয়ার সরকার এজেন্সি বাছাই করেছে আর বাংলাদেশের সরকার চুক্তিতে সম্মতি দিয়ে সেই সুযোগ দিয়েছে। এর মধ্যে সংসদ সদস্যদের রিক্রুটিং এজেন্সিও আছে। তাঁদের ব্যবসা করার অধিকার আছে, তাঁরা ব্যবসা করবেন।
বায়রার সভাপতি আরও বলেন, ‘যে লোকগুলো যেতে পারেনি, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কতজন লোক যেতে পারে নাই, তাঁদের নাম লিপিবদ্ধ করব। এজেন্সিকে কত টাকা দিয়েছে, সেটাও লিপিবদ্ধ থাকবে। সরকার যদি এদের পাঠাতে ব্যর্থ হয়, আমরা এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে টাকা আদায় করে কর্মীদের দেওয়ার জন্য বায়রার পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেব।’
বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, চক্র গঠনে সংসদ সদস্যরা কোনো চক্রান্ত করেননি। এজেন্সি চূড়ান্ত করেছে মালয়েশিয়া। তাতে করে ১০১ এজেন্সি কর্মী পাঠানোর সুযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে এমপিদের এজেন্সিও আছে।
তিনি বলেন, ‘১৫ মে থেকে ভিসা বন্ধ করে দিলে শেষ দিকে এমন চাপ তৈরি হতো না। তারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়নি।’
রুহুল আমিন বলেন, বিশেষ ফ্লাইটের জন্য আগে থেকে সংখ্যা অনুমানের সুযোগ ছিল না। কত কর্মী যাবে, তা ধারণার কোনো সুযোগ ছিল না। কারণ, শেষ পর্যন্ত ভিসা দিয়েছে মালয়েশিয়া, ৩০ মে পেয়েছে কেউ কেউ। তাঁদের তো পাঠানো সম্ভব নয়।
কয়েকটি গণমাধ্যমে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদ বলেন, এ ধরনের অভিযোগ খতিয়ে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এটি একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া ছিল এবং ১০১টি এজেন্সি এই সিস্টেমের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠিয়েছে।
এদিকে আজ এক গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা কর্মীরা চাইলে ৮ জুনের মধ্যে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটির কাছে ই-মেইলে অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নিয়োগানুমতি এবং বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) স্মার্ট কার্ড পাওয়ার পরও না যেতে পারা কর্মীরা এ সুযোগ পাবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু যেসব কর্মী দেশটিতে যেতে পারেননি, তাঁরা প্রয়োজনীয় তথ্যাদিসহ (নাম, পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, রিক্রুটিং এজেন্সির নাম, পাসপোর্ট নম্বর, বিএমইটির স্মার্ট কার্ডের কপি এবং অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণসহ) নিম্নবর্ণিত ই-মেইলে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। এমন অবস্থায়, উল্লিখিত ই-মেইলের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযোগ দাখিলের জন্য অনুরোধ করা হলো।
Leave a Reply