সরেজমিন প্রতিবেদন:
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মাহমুদ আলী স্মরণে স্মরণ সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ। গতকাল শুক্রবার ৭ জুন ২০২৪ প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম মিলনায়তনে এই স্বরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পিকার জনাব ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ডা: এজে জাহিদ হোসেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।তাদের আলোচনায় এজে মোহাম্মদআলীর কর্মময় জীবন ফুটে উঠে।
আব্দুল জামিল মোহাম্মদ আলীর জন্ম ১৫ই ডিসেম্বর ১৯৫১ বগুড়া বাংলাদেশ। উনার পিতা জনাব এম এইচখন্দকার বাংলাদেশের প্রথম অ্যাটর্নি জেনারেল। এ.জে. মাহমুদ আলী ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন ঢাকার লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে । তিনি ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে সপ্তম শ্রেণী থেকে পড়াশোনা শুরু করেন । ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাস করেন । ১৯৭০ সালে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স পাশ করেন । ১৯৭৪ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ধানমন্ডি ল কলেজ থেকে এলএলবি পাস করেন। ১৯৭৮ সাল থেকে তিনি সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে পেশা শুরু করেন । ১৯৮০ সালে তিনি অ্যাডভোকেট হিসেবে ঢাকা জজ কোর্টে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে নথিভূক্ত হন ১০ মার্চ ১৯৮৫ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে নথিভুক্ত হন । তিনি সুপ্রিম কোর্টের সকল বিভাগে মামলা পরিচালনা করতেন। ২৩ অক্টোবর ২০০১ এটর্নি জেনারেল পদে নিযুক্তি পান । ৩০ এপ্রিল ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত ছিলেন। তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক নির্বাচিত সভাপতি। তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে নির্বাহী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ছিলেন । এ জে মোহাম্মদ আলী জিয়া অর্পানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আইনজীবী হিসাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মওদুদ আহমদের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । তিনি ২ মে ২০২৪ সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মৃত্যু কালে এক ছেলে ও মেয়ে এবং সহধর্মিনী রেখে যান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, জনাব আব্দুল জামিল মোহাম্মদ আলী খুবই বিনয়ী এবং একজন ভদ্রলোক ছিলেন। তিনি ছিলেন বিএনপি’র জন্য নিবেদিত প্রাণ। তিনি সব সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি এই সরকারের আমলে বিএনপি’র কারা নির্যাতিত নেতাদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে বিনা পয়সায় আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি সব সময় বিএনপির নেতাদের কর্মীদের খবর নিতেন তিনি বেগম খালেদা জিয়ার সবকটি মামলার আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি জাতির সূর্যসন্তানদের মধ্যে অন্যতম। তিনি যে এত তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন এটা কখনোই ভাবতে পারিনি। তার এ ক্ষতি কখনই পূরণ হওয়ার নয়। জাতি আজ ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করছে। এই ক্রান্তি লগ্নে উনার মত একজন দক্ষ আইনজীবের বড়ই প্রয়োজন ছিল। আপনারা সবাই জানেন গতকালকে বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। এ বাজেটে জনগণের সাথে তামাশা করা হয়েছে। এ বাজেটে জনগণের জন্য কিছুই রাখা হয়নি। সাধারণ জনগণের উপর ইচ্ছে মতো করের বোঝা চাপানো হয়েছে। সবচাইতে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পরিবহন খাতে। রাস্তাঘাট নির্মাণের সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে তারা। আপনারা সবাই জানেন, এক খাতে দুর্নীতি করা সবচেয়ে সহজ। আর এ কারণেই তারা জনগণের টাকা এ খাতে সবচেয়ে বেশি খরচ করছে। যে বাজেট তারা দিয়েছে তার প্রায় ২০ ভাগ সরকার ব্যয় করবে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে। যার কারণে এ বাজেট জনগণের কোন কাজেই আসবে না। জনগণের জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে পড়বে।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে জনাব ডাক্তার জাহিদ হোসেন বলেন, জনাব এজে মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশের পেশাজীবী মানুষদের জন্য একজন আইকন ছিলেন। তিনি আমাদেরকে যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন তা দিয়ে আমাদের আগামী দিনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সবাই যে আলোচনা করেছে আমার আর বলার কিছু নাই তার সম্বন্ধে। তাই আমি আজকে আপনাদেরকে বাজেট সম্বন্ধে দুটি লাইন বলতে চাই। আপনার লক্ষ্য করেছেন যে। মানুষের সাধারণ আয় এর উপর সরকার ৩০ ভাগ কর আরোপ করেছে। অথচ যে সমস্ত অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী তাদের এই সম্পদের উপর মাত্র ১৫ ভাগ কর দিয়ে অবৈধ সম্পদকে বৈধ করা যাবে। এর মাধ্যমে তারা দুর্নীতিবাজদের কে উৎসাহিত করছেন । তাদের এই নীতি ঘরে ঘরে বেনজিরদের তৈরি করবে। তাই আসুন আমরা এ সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। যেকোনো মূল্যে আমরা এ সরকারের পতন ঘটাবো ইনশাআল্লাহ।
Leave a Reply