বিশেষ সংবাদ:
পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ এবং রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মতিউর রহমানের স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব জমা দিতে নোটিশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
নোটিশে সম্পদের হিসাব জমা দিতে ২১ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জব্দ হওয়া সম্পদের বাইরে এই দুই পরিবারের সদস্যদের আর কোনো সম্পদ আছে কি না, তা জানতে নোটিশ জারি করা হয়েছে।
বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী এবং দুই কন্যার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব জমা দিতে বলা হয়েছে নোটিশে।
নোটিশগুলোতে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে দুদকের স্থির বিশ্বাস জন্মেছে যে, আপনারা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ/সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। নিজ ও আপনাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে-বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী কমিশনে দাখিল করবেন।
এ আদেশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে সম্পদ বিবরণী দাখিলে ব্যর্থ হলে কিংবা মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দাখিল করলে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ৫(২) ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশ উল্লেখ করা হয়েছে।
দুর্নীতি ও বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে ২৩ ও ২৪ জুন হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে অভিযোগের লিখিত বক্তব্য জমা দেয় বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যরা।
গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ বেনজীর আহমেদ সপরিবারে বিদেশে রয়েছেন, এখনও দেশে ফেরেননি। যদিও দুদক থেকে তাদের বিদেশ যাত্রায় কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি।
অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেনজীর আহমেদকে ৬ জুন এবং স্ত্রী জিসান মীর্জা ও দুই মেয়েকে ৯ জুন প্রথম দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। তবে, ধারণা করা হচ্ছে যে, তিনি বা তারা দেশে নেই।
চাকরির সময় পুলিশে শীর্ষ পদগুলোতে দায়িত্ব পালন করেছেন বেনজীর। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, র্যাবের মহাপরিচালক এবং সবশেষে আইজিপি পদ থেকে অবসরে যান প্রভাবশালী এই কর্মকর্তা।
এরপরই বেরিয়ে আসে বেনজীর, তার স্ত্রী ও কন্যাদের বিপুল সম্পদের তথ্য, যার বাজারমূল্য কয়েকশো কোটি টাকা বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
একজন সরকারি কর্মকর্তার বেতনের টাকায় সম্পদ এই পাহাড় গড়ে তোলা সম্ভব কিনা, তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মাঠে নেমেই তদন্ত কর্মকর্তারা সাবেক আইজিপির বিপুল সম্পদের সন্ধান পান। প্রথমে বেনজীর, তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে থাকা সম্পদ জব্দ করতে আদালতে আবেদন করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা।
সেদিন আদালত ৮৩টি দলিলের ৩৪৫ বিঘা জমি জব্দ এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে তাদের নামে থাকা ৩৩টি হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার আদেশ দেন।
এরপর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আরো সম্পদের হদিস। আদালতে আবার অনুমতি চাওয়া হলে সেসব সম্পদও অবরুদ্ধ ও জব্দ করতে আদেশ দেওয়া হয়। এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে- ঢাকার অভিজাত এলাকায় চারটি ফ্ল্যাট, সাভার ও মাদারীপুরে জমিসহ ১১৯টি দলিলে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানিতে স্ত্রী ও সন্তানদের নামে থাকা শেয়ার ও মালিকানা।
একইভাবে বিদেশে তার কোনো সম্পদ থাকলে সেসবও জব্দের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।
বেনজীরের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট জালিয়াতির আরও একটি অভিযোগ দুদকে চলমান রয়েছে। গত ২৫ জুন এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই করতে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের দুই অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও দুই পরিচালকসহ ১৫ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
বেনজীর-মতিউরের জন্য ‘সুখবর নেই’ দুদকেবেনজীর-মতিউরের জন্য ‘সুখবর নেই’ দুদকে
এদিকে ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমানসহ তার দুই স্ত্রী ও দুই সন্তানের সম্পদের বিবরণ জমা দিতে নোটিশ দিয়েছে দুদক।
দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো পৃথক চিঠিতে তাদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, প্রথম পক্ষের ছেলে আহাম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব, মেয়ে ফারজানা রহমান (ইপসিতা), দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
গেল কোরবানি ঈদের আগে ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনা নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল আলোচনায় আসেন সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যরা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার অঢেল সম্পদের তথ্য প্রকাশিত হয়।
এরপর তার ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের খোঁজে নামে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করতে গত ২৩ জুন তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত ৪ জুন তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ জমা হওয়ার পর কমিশনের পক্ষ থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২৪ জুন মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
এনবিআর সদস্য এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে গত দুই যুগে চারবার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগ পৃথকভাবে অনুসন্ধান করে দুদক। প্রতিবারই দুদক থেকে অব্যাহতি পান তিনি। বর্তমানে তাকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে বদলি করা হয়েছে।
দুদক সচিব খোরশেদা ইসয়াসমিন জানিয়েছে, এর আগে কীভাবে দুদক থেকে মতিউর দায়মুক্তি পেয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।
গত ৩০ জুন মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের তথ্য চেয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছে দুদক।
অভিযোগ ওঠার পর মতিউর রহমানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে। সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকেও সরানো হয়েছে প্রভাবশালী ও আলোচিত এই সরকারি কর্মকর্তাকে।
এক সময় সরকারি তিতুমীর কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন তার স্ত্রী লাকী। চাকরি ছেড়েই রাজনীতিতে এসে ২০২২ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান হন।
তথ্যসূত্র-একাত্তর টিভি
Leave a Reply