বিশেষ প্রতিবেদন:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র তিনিদিন বাকি। তাই শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালীগঞ্জ আংশিক) আসনের প্রার্থীরা। ছুটছেন নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন গ্রামের অলিগলিতে। উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের পাশাাপাশি দিয়েছেন উন্নয়নের নানা আশ্বাস। একই সাথে চলছে কেন্দ্রে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ভোটার উপস্থিতি বাড়নোর প্রচেষ্টা।
খুলনা প্প্প্শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী কালীগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৪ আসন। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লক্ষ ৪২ হাজার ১৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লক্ষ ২৩ হাজার ৪৩৪ জন এবং মহিলা ভোটার ২ লক্ষ ১৮ হাজার ৭৫৯ জন। মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪২টি এবং ভোট কক্ষের সংখ্যা ৯২৭টি।
ভোট গ্রহণের দিন ঘনিয়ে আসায় পুরো নির্বাচনী এলাকার উপজেলা সদর থেকে গ্রাম এখন সরব হয়ে উঠেছে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায়। ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিততে বাড়াতে প্রার্থীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা বিভিন্ন এলাকায় উঠান বৈঠক, আলোচনা সভা, প্রচারপত্র বিতরণ, গণসংযোগসহ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। দিয়েছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ। আছে খাবার পানির সংকট সমাধানের আশ্বাসও। এ ছাড়া বেলা দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে শ্যামনগর ও কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী গান পরিবেশন ও মাইকিং করছেন আওয়ামী লীগ, বিএনএমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা।
শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ উপজেলার কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, সাতক্ষীরা-৪ আসনে বিভিন্ন দলের মোট সাতজন প্রার্থী এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও অওয়ামী লীগের নৌকা ও বিএনএম এর নোঙ্গর প্রতীকের প্রার্থীর মধ্যে মূল লড়াই হবে। তবে মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রচারণা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত এ আসনের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি (জাপা) ও জামায়াতের একাধিক প্রার্থী সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হয়েছেন। পূর্বের নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে তৎকালীন খুলনা-১১ আসনে (শ্যামনগর) আওয়ামী লীগের মোঃ মোহাসীন, ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে খুলনা-১২ আসনে বিএনপির ডা. আফতাবুজ্জামান, ১৯৮৬ সালে সাতক্ষীরা-৫ আসনে জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন, ১৯৮৮ সালে পুনরায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন, ১৯৯১ সালে জামায়াতের গাজী নজরুল ইসলাম, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির অধ্যক্ষ জিএম আব্দুল হক, ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ.কে ফজলুল হক, ২০০১ সালে জামায়াতের গাজী নজরুল ইসলাম, একই সালে তৎকালীন সাতক্ষীরা-৪ আসনে (দেবহাটা-কালিগঞ্জ) কাজী আলাউদ্দিন, ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টির এইচ.এম গোলাম রেজা এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এস.এম জগলুল হায়দার পরপর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি টানা ১০ বছর ক্ষমতায় রয়েছেন। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি।
এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান সাবেক সাংসদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এ.কে ফজলুল হকের ছেলে শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম আতাউল হক দোলন। এই আসনে তার সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয়াবাদী আন্দোলন (বিএনএম) প্রার্থী সাবেক এমপি জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এইচ.এম গোলাম রেজা।
বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালানোর সময় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আতাউল হক দোলন সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দিয়েছেন নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি। স্থানীয় জনগণের জানমাল রক্ষায় দিয়েছেন উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের আশ্বাস। অন্যদিকে বিএনএম এর নোঙ্গর প্রতীকের প্রার্থী এইচ.এম গোলাম রেজা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত, উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সুপেয় পানি সংকট নিরসনের পাশাপাশি এই এলাকার উন্নয়নে ভোট দিতে অনুরোধ করছেন ভোটারদের কাছে।
নৌকা ও নোঙ্গর ছাড়াও এই আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মোঃ মাহাবুবুর রহমান লাঙ্গল প্রতীক, তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ড. আসলাম আল মেহেদী সোনালি আঁশ প্রতীক, বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী মোঃ শফিকুল ইসলাম ডাব প্রতীক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) মনোনীত প্রার্থী শেখ ইকরামুল আম প্রতীক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মিজানুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে এস.এম আতাউল হক দোলন ও এইচ.এম গোলাম রেজা ছাড়া বাকি পাঁচজন প্রার্থীর প্রচারণা তেমন চোখে পড়ারমত নয়।
Leave a Reply