বিশেষ প্রতিবেদন :
ইসরায়েলের এক সময়কার রাজধানী তেল আবিবে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হেডকোয়ার্টার্স লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। আজ বুধবার সকালে হিজবুল্লাহ জানায়, তারা কাদের-১ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে মোসাদ হেডকোয়ার্টার্স লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল।
লেবাননের সম্প্রচারমাধ্যম আল-মায়েদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহ আজ বুধবার সকালে ঘোষণা করেছে, তাদের যোদ্ধারা তেল আবিবের শহরতলিতে মোসাদের সদর দপ্তর লক্ষ্য করে একটি কাদের-১ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। হিজবুল্লাহ বলেছে, এই অপারেশনটি ছিল গাজা উপত্যকায় আমাদের অটল ফিলিস্তিনি জনগণ এবং তাদের বীরত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক প্রতিরোধের সমর্থনে এবং লেবানন ও এর জনগণের প্রতিরক্ষার জন্য।
মোসাদের হেডকোয়ার্টার্স লক্ষ্য করে হিজবুল্লাহর এই হামলা নজিরবিহীন। কারণ এই প্রথমবার লেবাননভিত্তিক প্রতিরোধ গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তেল আবিবের শহরতলিতে অবস্থিত কোনো লক্ষ্যবস্তুকে হামলা চালিয়েছে। এর আগে, হিজবুল্লাহ ঘোষণা দিয়েছিল ‘হামলার বদলে হামলা’ করা হবে এবং ‘বৈরুতে হামলা জবাব তেল আবিবে দেওয়া হবে’। এই হামলা মূলত তারই ইঙ্গিত।
এদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাবাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে—তারা ডেভিডস স্লিং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে ক্ষেপণাস্ত্রটি ঠেকিয়ে দিয়েছে। আহত বা ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এক ঘণ্টা পর আইডিএফ জানায়, তারা দক্ষিণ লেবাননের নাফাখিয়াহতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে ব্যবহৃত হিজবুল্লাহ লঞ্চারে আঘাত করেছে।
অপর দিকে, লেবাননকে আরেক গাজায় পরিণত হওয়ার সুযোগ না দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই আহ্বান জানান তিনি।
গত সোমবার থেকে লেবাননে নির্বিচার বিমান হামলা চালিয়ে নারী, শিশুসহ অন্তত ৫৬৯ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী (আইডিএফ)। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১ হাজার ৮৩৫ জন। প্রায় দুই দশকের মধ্যে দেশটিতে এটিই এত কম সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা। সিএনএনের সঙ্গে আলাপকালে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, লেবাননের হিজবুল্লাহর পক্ষে একা এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না।
মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, ‘হিজবুল্লাহ এমন একটি দেশের বিরুদ্ধে একা দাঁড়াতে পারবে না, যার রক্ষাকবচ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো।’ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংযমের আহ্বান জানাতে ইরান হিজবুল্লাহর সঙ্গে তার প্রভাব ব্যবহার করবে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘লেবাননকে আরেকটি গাজায় পরিণত হওয়ার সুযোগ করে না দেওয়ার’ আহ্বান জানান ইরানের প্রেসিডেন্ট।
নিউইয়র্কে গত সোমবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের সাইডলাইনে ন্যামভুক্ত দেশগুলোর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম গরিবাবাদি। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল যে বর্বরতা ও অপরাধযজ্ঞ চালাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীর চুপ থাকা উচিত নয়; বরং দখলদার এ শক্তির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ও ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’
Leave a Reply