বিশেষ প্রতিবেদন :
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশের দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আলোচনা শুরু হয় দেশ নতুন করে গঠনের। গত পনেরো বছরেরও বেশি সময়ে দেশের প্রশাসন, নির্বাচন ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক খাত কিংবা বিভিন্ন জায়গায় যে সব সংকট তৈরি হয়েছে সেগুলো সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করে সরকার। সংস্কার কমিশনগুলো পুরোদমে কাজ শুরুর আগে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করেছেন।
দেশের সংস্কার ও মেরামতের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা, নির্বাচন ব্যবস্থা, সংসদ, শিক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান প্রধান সেক্টরের সংস্কারের প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ৯ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন দলের আমির ডা. মুহাম্মদ শফিকুর রহমান।
অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমান অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের আমলে বহু মানুষ নির্যাতন, গুম,খুনের শিকার হয়েছে। দেশে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত দলের নাম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বলে অভিযোগ করেন শফিকুর রহমান। তিনি অভেযোগ করেন তাদের শীর্ষ এগারজন নেতাকে মিথ্যা অভিযোগে সাজানো আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে। শুধু তারাই বিদায় হয় নি। অপশাসনের প্রতিবাদ করেছে এমন হাজার হাজার মানুষকে দুনিয়া থেকে তুলে নেয়া হয়েছে”।
সংস্কার প্রস্তাবনায় দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, নির্বাচনকে অবাধ,সুষ্ঠু ও অর্থবহ করার জন্য নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। সংস্কার ব্যতীত নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রভাব মুক্ত রাখতে হবে।
বিচার বিভাগের সংস্কার প্রস্তাবনায় বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার সুপারিশ করেন মি. তাহের।
উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগের জন্য সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন,আইন মন্ত্রনালয় থেকে আলাদা করে সুপ্রিম কোর্টের পৃথক অফিস স্থাপন, দেওয়ানী মামলা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর এবং ফৌজদারি মামলা সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা সংস্কারের মধ্যে পুলিশের ব্রিটিশ আইন বাতিল, নিয়োগে দলীয় হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং পুলিশের ট্রেনিংয়ে ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব, নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতির জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেয় জামায়াতে ইসলামী। রিমান্ড চলাকালে আসামিপক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা, পুলিশের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাবও তুলে ধরে দলটি।
র্যাব ও অন্যান্য বিশেষায়িত বাহিনীর প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে স্থায়ীভাবে যক্ত করা, কোন সরকারি চাকরিজীবী চাকরি ছাড়ার পর কমপক্ষে তিন বছরের মধ্যে কোন ধরনের নির্বাচনে অংশ না নেয়া, সংসদের বিরোধী দল থেকে একজন ডেপুটি স্পিকার মনোনয়নের পরামর্শও দেয় দলটি।
সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পদের মধ্যে ভারসাম্য রাখা, একই ব্যক্তি পর পর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না রাখার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন, বিগত সরকারের আমলে পাচার করা টাকা ফেরানোর উদ্যোগ এবং শিক্ষার সংস্কারের বিষয়ে প্রতি শ্রেণিতে মহানবী (সা.) – এর পাঠ যুক্ত করে কারিগরি শিক্ষাকে মূল ধারায় আনার প্রস্তাব তুলে ধরেণ। এছাড়াও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়।
Leave a Reply