এরই মধ্যে নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের ব্যাপারটি নতুন হলেও অর্থনীতি বা দেশ চালানোর বিষয়টি তাদের কাছে পুরনো। এবার অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রীরা নিয়োগ পেয়েছেন। অর্থ, বাণিজ্য, পরিকল্পনা, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সবাই নতুন মন্ত্রী।
সরকারের জন্য বর্তমান অর্থনীতিতে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে নতুন মন্ত্রীদের জন্য সেগুলো অনুধাবন করা গুরুত্বপূর্ণ। অন্য সময়ে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থনীতি যে পরিস্থিতিতে থাকে এবার ভিন্ন। নতুন সরকারের সামনে অর্থনীতি সবচেয়ে দুর্বলতম অবস্থায় রয়েছে। এ থেকে উত্তরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয়কে।
এই মন্ত্রণালয়ের বড় জায়গা হবে রাজস্ব বৃদ্ধি। এ জন্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে রাজস্ব আদায়ের কৌশল সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ঢেলে সাজাতে হবে। যদি এনবিআরের কার্যক্রমকে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে রাজস্ব আদায় বাড়িয়ে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।
সচরাচর যেটি হয়ে থাকে মন্ত্রণালয়গুলোতে যাঁরা দায়িত্বপ্রাপ্ত হন, তাঁরা এক ধরনের প্রচলিত উপায়ে মন্ত্রণালয় পরিচালনা করে থাকেন। যার কারণে চ্যালেঞ্জের জটিলতা ও সমস্যা-সমাধানের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার মধ্যে যথেষ্ট ছাপ দেখা যায় না। মন্ত্রণালয়গুলোতে যেসব নতুন মন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁদের প্রথম কাজ হবে তাঁদের মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ও অর্থনৈতিক যেসব বিষয় রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে সম্মুখ অনুধাবন করার চেষ্টা করা। এ ক্ষেত্রে যত ধরনের স্টেকহোল্ডার রয়েছে, শুরুতেই তাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করা উচিত এবং বিষয়গুলো বোঝা উচিত। মন্ত্রীদের উচিত হবে, নির্বাচনী ইশতেহারে সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এই আলোকে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমগুলো যাতে যথাযথভাবে করেন।
এগুলোর কার্যকর অপারেশনাল বিষয়গুলোর দিকে যেন তাঁরা নজর দেন।
যদি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কথা বলি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগুলোকে আরো মসৃণ করা এবং রপ্তানির বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি নতুন নতুন বাজারে যাতে পণ্য রপ্তানি করা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করা। আবার একই সঙ্গে আমদানি পর্যায়ে বাজারে যেসব জটিলতা রয়েছে, বিশেষ করে বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা সেটির ক্ষেত্রেও নির্বাচনী ইশতেহারে বলা আছে কিছু কিছু উদ্যোগ নেওয়ার। গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি ইশতেহারে বলা নেই, কিন্তু উদ্যোগ নেওয়া দরকার সেটি হচ্ছে বাজার ব্যবস্থাপাটি এখন অনেক বেশি বড় বড় গ্রুপকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। এসব গ্রুপ তাদের অবস্থান থেকে বাজারে সঠিকভাবে প্রতিযোগিতা কাঠামোতে বাজার পরিচালনা করছে কি না, সেই জিনিসগুলো তদারকির প্রয়োজন রয়েছে। সেই অনুযায়ী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর, প্রতিযোগিতা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠাগুলোকে আরো শক্তিশালী করা জরুরি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে কৃষি ও মৎস্য পশু পালনের ক্ষেত্রে অনেক সময় সাপ্লাই চেইনগুলোতে প্রতিযোগিতা অনুপস্থিত। এগুলোতে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা। কৃষিপণ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির সরকারের যে উদ্যোগ সেটি যাতে বাস্তবায়ন হয়। সেই দিক থেকে সার ও বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়।
লেখক : সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ
Leave a Reply