বিশেষ প্রতিবেদন :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলি করে গৃহকর্মী লিজা আক্তার হত্যা মামলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. জুয়েল রানাকে চার দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে পুলিশ।
এছাড়া খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে বালুর ট্রাক রাখার ঘটনায় গুলশান থানায় করা মামলায় গুলশান থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলামকেও চার দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ।
শুক্রবার বিকালে আলাদা দুটি মামলার শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালত এ অনুমতি দেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগে কর্মরত অবস্থায় গতকাল গ্রেপ্তার করা হয় এএসপি জুয়েল রানাকে। এদিন তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. পায়েল হোসেন।
অন্যদিকে গুলশান থানার সাব-ইসপেক্টর রায়হানুল ইসলাম সৈকত আসামিকে রফিকুল ইসলামকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। তাকেও গ্রেপ্তার করা হয় ১৭ অক্টোবর।
এএসপি জুয়েল রানার বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৮ জুলাই রমনা থানাধীন এলাকায় আসামীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণে গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। এতে ছাত্রজনতা ও সাধারণ মানুষ আহত হয়। তখন বাড়ির নিচে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন লিজা আক্তার। পরে গত ২২ জুলাই বিকেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
গত ৫ সেপ্টেম্বর নিহতের বাবা মো. জয়নাল শিকদার বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ১৭৪ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন।
এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, “ঘটনার সময় ডিবিতে ছিলেন জুয়েল রানা। তিনি ডিবির নামকরা ব্যক্তি হারুনের কাছের। আন্দোলন দমাতে জুয়েল রানার দায়িত্ব ছিল। তারা শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলি করে, পরিকল্পিত হামলা চালায়। এতে ১৯ বছরের মেয়ে লিজার প্রাণ যায়।”
এদিকে খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে ট্রাক রাখা ও অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও নাগরিক অধিকার হরণের দায়ে শেখ হাসিনাসহ ১১৩ জনকে আসামি করে গত ৪ অক্টোবর গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লতিফ হল শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য শরিফুল ইসলাম শাওন।
মামলার অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া ও সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেয় তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিএনপি আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের রূপরেখা হিসেবে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিএনপি মার্চ অব ডেমোক্রেসি সমাবেশের ডাক দেয়। সেখানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্য দেয়ার কথা। এর আগেই ২৮ ডিসেম্বর দিবাগত গভীর রাতে বালু ভর্তি পাঁচ-ছয়টি ট্রাক খালেদা জিয়ার ফিরোজা বাসভবনের গেটের সামনেসহ আশপাশে রেখে আসামিরা রাস্তার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। খালেদা জিয়া যেন সমাবেশে যোগ দিতে না পারে সে জন্য রাস্তার উপরে ত্রাস সৃষ্টি করে গণতন্ত্র অধিকারকে হরণ করে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, মামলার আসামিরা গোপন বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর যেকোনোভাবে খালেদা জিয়াকে বাসা থেকে বের হয়ে সমাবেশে অংশ নিতে দেওয়া যাবে না। পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আসামিরা মারণাস্ত্র, লাঠি, বন্দুক, টিয়ারশেলসহ যুদ্ধক্ষেত্রের মতো সজ্জিত হয়ে গুলশান-১ ও ২, বনানী, বারিধারা ডিওএইচএস ও আমেরিকান দূতাবাসসহ আশপাশের এলাকায় র্যাব, পুলিশ ও ডিবিসহ ২৮ ডিসেম্বর থেকে অবস্থান নেয়। সঙ্গে অস্ত্রের মহড়া দেয় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। সে সময় আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর ও গণহারে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলায় আরও বলা হয়, এভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ রেখে ২০১৪ সালে একটি একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। বলা হয়, ওই ঘটনার পরই কার্যত দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ফেলে তারা। ওই সময় পেপার স্প্রে দিয়ে খালেদা জিয়াকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন বাদী।
তথ্য সূত্র -সকাল সন্ধ্যা
Leave a Reply