বিশেষ সংবাদ :
মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের একটি বৌদ্ধবিহারে নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবার। দেশটিতে চলমান গৃহযুদ্ধে বাস্তুচ্যুত হওয়া হাজার হাজার মানুষের কাতারে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে তারা।
জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অন্যতম সশস্ত্র দল আরাকান আর্মি গত সপ্তাহে রাখাইন রাজ্যে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালায়। এরই মধ্যে দেশটির উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে সমন্বিত হামলার মুখে পড়া জান্তা শাসকের বিরুদ্ধে আরেকটি রণাঙ্গন খুলল।
আরাকান আর্মিসহ জাতিগত সংখ্যালঘু জোটের অন্তর্ভুক্ত সশস্ত্র বাহিনীগুলো গত মাসে জান্তার বিরুদ্ধে বড় ধরনের আক্রমণ শুরু করে চমক জাগায়। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ক্রমেই বেড়ে চলা সংঘাতে প্রায় তিন লাখ ৩৫ হাজার মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
আরাকান আর্মির যোদ্ধারা অল্প সময়ের জন্য উপকূলীয় শহর পাউকতাও দখল করে নেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার জান্তার সশস্ত্র বাহিনী ২০ হাজার বাসিন্দার শহরটিতে গোলাবর্ষণের জন্য নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠায়। পাশাপাশি হেলিকপ্টার থেকেও গুলি ছোড়া হয় বলে স্থানীয় বাসিন্দারা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে।
জান্তা সেনারা ক্রমেই কাছে এগিয়ে আসায় পাউকতাও শহর ও আশপাশের গ্রামগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন বৌদ্ধবিহারে আশ্রয় নেয়।
শহরের বাইরের একটি বিহারে আশ্রয় নেওয়া এক বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা এএফপিকে বলেন, ‘আমি গুজব শুনেছি সেনা সদস্যরা গ্রামের দিকে এসে বেসামরিক লোকদের গুলি করে মারছে।’
নাম গোপন রাখার অনুরোধ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘পালানোর সময় আমাদের অনেক ধকল সামলাতে হয়েছে। কারণ আমরা ভারী বর্ষণের মধ্যে ছোট নৌকায় নদী পার হচ্ছিলাম।
’গত সপ্তাহে পাউকতাওয়ের কাছের একটি গ্রাম থেকে পালিয়ে আসেন থান থান (৪৫) নামের আরেকজন। তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে আমরা হেঁটে ও নৌকায় এত পথ এসেছি। আমাদের ঠাণ্ডা লেগে গেছে। কেউ কেউ তো বেশ অসুস্থ হয়ে গেছে
শান্ত ওই বিহারে পরিবারগুলোর মেয়েরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে রান্নার তোড়জোড় করছিলেন।
বাচ্চাকে ঘুম পাড়াচ্ছিলেন এক নারী। জান্তা সরকার পাউকতাও শহর পুনর্দখলের দাবি করলেও ওই এলাকায় এখনো সংঘর্ষ চলছে।
গত সপ্তাহে স্থানীয় গণমাধ্যম সেখানকার বাসিন্দাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, সেনারা পৌঁছানোর পর পাউকতাও থেকে প্রায় শখানেক মানুষকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতসংখ্যক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওই এলাকার সঙ্গে অনিয়মিত যোগাযোগের কারণে হতাহতের সংখ্যা যাচাই করা খুব কঠিন। এলাকাটি থেকে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
রাজ্যের জাতিগত রাখাইন জনগোষ্ঠীর জন্য আরো স্বায়ত্তশাসনের জন্য আরাকান আর্মি দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই করে আসছে। ১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইরত বেশ কয়েকটি জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অন্যতম এটি। কয়েকটি গোষ্ঠী বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন চাইলেও অন্যরা নিজের অঞ্চলের দামি খনিজ, মাদক ও কাঠের লাভজনক ব্যবসা পরিচালনা করার অধিকার চায়।
Leave a Reply