বিশেষ প্রতিবেদন :
সঞ্চয়কারীদের মধ্যে আস্থা কমে যাওয়ায় ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানত ক্রমাগত কমছে। ব্যাপক ঋণ অনিয়মের কারণে শরিয়াহভিত্তিক কয়েকটি ব্যাংক এখন চরম তারল্য সংকটে ভুগছে। আস্থার সংকটে ব্যাংকগুলো থেকে আমানত তুলে নিচ্ছেন গ্রাহকেরা। গত জুলাই মাসে এসব ব্যাংকের আমানত কমেছে মোট সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। ইসলামি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আসাও কমেছে। তবে আমানত কমলেও ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ বেড়েছে। আর এগুলোর মাধ্যমে রপ্তানি আয় আসাও বেড়েছে কিছুটা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুলাই শেষে দেশের পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানত ছিল ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা। পরের মাস আগস্ট শেষে ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানত দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। এক মাসে ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে ৬ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২৪ সালের জুলাই শেষে দেশের পূর্ণাঙ্গ ১০টি ইসলামি ব্যাংক, কয়েকটি প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ইসলামিক শাখা ও উইন্ডোগুলোর আমানতের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৩৭ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। আর এক মাস পর অর্থাৎ চলতি বছরের আগস্ট শেষে ইসলামি ব্যাংক, প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ইসলামি শাখা ও উইন্ডোগুলোর আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩১ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে ১০টি ইসলামি ব্যাংক, প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ইসলামি শাখা ও উইন্ডোগুলোর আমানত কমেছে ৫ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা।
এদিকে প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ইসলামিক উইন্ডোগুলোতে জুলাই শেষে আমানত ছিল ১৭ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। আর পরের মাসে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। এক মাসে প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ইসলামিক উইন্ডোগুলোতে আমানত বেড়েছে ৩৫১ কোটি টাকা।
অপরদিকে চলতি বছরের জুলাই শেষে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ইসলামী ব্যাংকিং শাখাগুলোতে আমানত ছিল ২৫ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। আর পরের মাসে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার কোটি টাকা। এক মাসে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ইসলামী ব্যাংকিং শাখাগুলোতে আমানত বেড়েছে ৫৯৩ কোটি টাকা।
এদিকে ইসলামি ব্যাংকগুলো চলতি বছরের জুলাইয়ের চেয়ে আগস্টে ঋণ বিতরণ বেশি করেছে ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। তথ্য বলছে, জুলাই শেষে ইসলামি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের স্থিতি ছিল ৫ লাখ ১৪ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। আর আগস্টে শেষে ইসলামি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১৬ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। সেহিসাবে এক মাসে ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ বেশি হয়েছে ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে আমানত কমছে আর অপরদিকে ঋণ বিতরণ বাড়ছে—এটা প্রমাণ করে ইসলামি ব্যাংকগুলোর অবস্থা ভাল না। তাদের আয় হচ্ছে কম, ব্যয় বেশি। সুশাসনের অভাবে ইসলামি ব্যাংকগুলোতে এসব সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এদিকে আমানতের সঙ্গে কমেছে ইসলামি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আসা প্রবাসী আয়ও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই শেষে শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ৭ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। আর পরের মাস আগস্ট শেষে ইসলামি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ৬ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আগস্টে ইসলামি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় কম এসেছে ১ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে ইসলামি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রপ্তানি আয় এসেছিল ৭ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। আর পরের মাস আগস্টে রপ্তানি আয় এসেছে ৮ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আগস্টে ইসলামি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রপ্তানি আয় বেশি এসেছে ৬৬৭ কোটি টাকা।
Leave a Reply