বিশেষ প্রতিবেদন :
ব্যাটিং-বোলিং ব্যর্থতায় দীর্ঘ দশ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হারল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
গতরাতে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে ৫ উইকেটে হেরেছিলো টাইগাররা। ফলে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে এক ম্যাচ বাকী থাকতেই সিরিজ হারল মেহেদি হাসান মিরাজের দল। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে হেরেছিলো মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন দলটি।
সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমের ২টি করে চার-ছক্কায় ১৪ বলে ২৪ রানের কল্যাণে প্রথম ৩ ওভারেই ২৬ রান তুলেছিলো বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অভিষিক্ত পেসার মার্কিনো মিন্ডলির করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ১৮ রান নেন তামিম।
তামিমের ঝড়ো শুরুর মাঝে চতুর্থ ওভারে সাজঘরে ফিরেন আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার। ৫ বলে মাত্র ২ রান করে পেসার জেইডেন সিলেসের বলে মিড অনে গুদাকেশ মোটিকে ক্যাচ দেন সৌম্য।
নতুন ব্যাটার হিসেবে ক্রিজে এসে সেট হতে সময় নেন লিটন দাস। ১৯ বল খেলে ৪ রানে বিদায় নেন তিনি। সিলেসের বলে পুল করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে এভিন লুইসকে ক্যাচ দেন লিটন।
সৌম্য-লিটনের মত এ ম্যাচে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন অধিনায়ক মিরাজও। সিলেসের বলে ১ রান করে বোল্ড হন তিনি। ১০ ওভারে ৫৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
দল চাপে থাকলেও ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে ছিলেন তানজিদ। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে হাফ-সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যান তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তানজিদের। পেসার জাস্টিন গ্রেভসের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে রোস্টন চেজের হাতে ধরা পড়েন। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৩ বলে ৪৬ রানে থামেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটার।
দলকে চাপমুক্ত করার চেষ্টা করেন আফিফ হোসেন ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। পঞ্চম উইকেটে ৪৮ বলে ৩৬ রানের জুটিতে দলের রান ১শতে নেন তারা। ৪টি চারে ২৪ রান করা আফিফকে শিকার করে জুটি ভাঙেন স্পিানর মোতি।
এরপর দ্রুত গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। ১১ রানের ব্যবধানে আরও দুই উইকেট পতন হয় টাইগারদের। জাকের আলি ৩ ও রিশাদ হোসেন শূন্যতে আউট হলে ২৬তম ওভারে ১১৫ রানে সপ্তম উইকেট হারায় সফরকারীরা।
এ অবস্থায় পেসার তানজিম হাসান সাকিবকে নিয়ে উইকেট পতন ঠেকিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টায় সফল হন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৩৬তম ওভারে জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তারা।
৮৪ বলে ওয়ানডেতে ৩১তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান প্রথম ওয়ানডেতে অপরাজিত ৫০ রান করা মাহমুদুল্লাহ। সর্বশেষ তিন ইনিংসে অর্ধশতক করেছেন তিনি। সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে পাঁচ ম্যাচে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি পেয়েছেন এই ডান-হাতি ব্যাটার।
৪৪তম ওভারে দলীয় ২০৭ রানে মাহমুদুল্লাহ-তানজিমের রেকর্ড জুটি ভাঙেন চেজ। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬২ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৪৫ রান করে স্পিনার চেজকে ফিরতি ক্যাচ দেন তানজিম।
বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে অষ্টম উইকেটে সর্বোচ্চ ৯২ রানের জুটি গড়েছেন মাহমুদুল্লাহ-তানজিম। আগেরটি ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৪ রানের জুটি গড়েছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।
তানজিম ফেরার পরের ওভারে নবম ব্যাটার হিসেবে আউট হন মাহমুদুল্লাহ। সিলেসের বলে মোতিকে ক্যাচ দেন ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৯২ বলে দায়িত্বশীল ৬২ রান করা এই ডান-হাতি ব্যাটার।
দলীয় ২০৯ রানে মাহমুদুল্লাহর আউটের পর শেষ উইকেটে ১৮ রান তুলে থামেন শরিফুল ইসলাম ও নাহিদ রানা। এতে ৪৫.৫ ওভারে ২২৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। সিলেস ২২ রানে ৪ উইকেট নেন।
সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে ২২৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০ ওভারে ১০৯ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন ব্র্যান্ডন কিং ও এভিন লুইস। অবশ্য ১৪তম ওভারে দলীয় ৭৫ রানে ভাঙতে পারতো ক্যারিবীয়দের শুরুর জুটি। ব্যক্তিগত ২৮ রানে স্পিনার মিরাজের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে সৌম্যকে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান লুইস।
২১তম ওভারের শুরুতে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন স্পিনার রিশাদ। ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৬২ বলে ৪৯ রান করা লুইসকে ফিরতি ক্যাচে আউট করেন রিশাদ।
লুইস ফেরার পর রানের চাকা সচল রেখে ৪৮ বলে ৬৬ রানের জুটি গড়েন কিং ও কেসি কার্টি। ২৯তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন পেসার নাহিদ। ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৭৬ বলে ৮২ রান করা কিংকে ইয়র্কার ডেলিভারিতে বোল্ড করেন নাহিদ।
দলের রান ২শ স্পর্শ করার আগেই থামেন ব্যক্তিগত ৪০ রানে জীবন পাওয়া কার্টি। ৭টি বাউন্ডারিতে ৪৭ বলে ৪৫ রান করে অকেশনাল স্পিনার আফিফের শিকার হন কার্টি।
দলীয় ১৯৭ রানে কার্টি ফেরার পর চতুর্থ উইকেটে ২২ বলে ৩৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৭৯ বল বাকী থাকতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় নিশ্চিত করেন অধিনায়ক শাই হোপ ও প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান শেরফানে রাদারফোর্ড। হোপ ১৭ ও রাদারফোর্ড ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
নাহিদ-রিশাদ-আফিফ ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন সিলেস।
হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে আগামীকাল একই ভেন্যুতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ৪৫.৫ ওভারে ২২৭/১০ (মাহমুদুল্লাহ ৬২, তানজিদ ৪৬, তানজিম ৪৫, সিলেস ৪/২২)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৩৬.৫ ওভারে ২৩০/৩ (কিং ৮২, লুইস ৪৯, কার্টি ৪৫, আফিফ ১/১২)।
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : জেইডেন সিলেস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
সিরিজ : তিন ম্যাচ সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
Leave a Reply