গাজীপুর প্রতিনিধি-আনোয়ার:
বিশ্ব মুসলিমদের সবচেয়ে দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় জমায়েত ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা শুরুর তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতি বছর এই বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের টঙ্গী অঞ্চলে। টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে তাবলিগ জামাতের এই বার্ষিক আয়োজন গত বছর গুলোর মতো এবারও দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে।
১৫ নভেম্বর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে এসব তথ্য গণমাধ্যমকে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
ঢাকা থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশাল ময়দানে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা ১৯৬৭ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।এই ইজতেমায় প্রতি বছর হাজির হয় লাখো মানুষ এবং মহান আল্লাহ তায়ালার ইবাদত বন্দেগীতে তারা মশগুল হয় । বাংলাদেশের মানুষের পাশাপাশি এখানে বিভিন্ন দেশ থেকেও হাজার হাজার মুসল্লিরা আসেন ইবাদতের জন্য।
২০১৮ সালে আয়োজকদের মধ্যে মত বিরোধের জন্য তারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়। তাই ২০১৮ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
২০১০ সালে ভারতের বিখ্যাত মাওলানা ও তাবলিগের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা সাদেরের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজকদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে দুই পর্বে ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারতের মাওলানা সাদ অনুসারীরা এবং অপরটির নেতৃত্বে বাংলাদেশের আলেম ওলামাদের মাওলানা জুবায়ের অনুসারী গ্রুপ।
বিশ্ব ইজতেমা ২০২৪ কত তারিখে শুরু হবে
এবারের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার থেকে। তবে ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে প্রথম ধাপের ইজতেমা। নিদ্দিষ্ট কয়েকদিনের জন্য মুসল্লিরা এই জামায়াতে উপস্থিত হবে। ৪ ফেব্রুয়ারি রবিবার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে প্রথম পর্ব ইতি ঘটবে। এরপর ঠিক বিরতি দিয়ে পরবর্তী ৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার থেকে চলবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের কার্যক্রম। সেটিও ১১ ফেব্রুয়ারি রবিবার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে।
যায় সব মুসল্লিরা এখানে যোগদান করবে তাদের জন্য পূর্ব থেকেই বেশ কিছু নিয়ম নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে। এখানে প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে যার কারণে এখানে প্রচুর রাস্তাঘাটে যানজটের সৃষ্টি হয়। একারণে এবার প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা সহ আরো বেশ কিছু নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা হয়েছে। তবে এখানে যানবাহনের ক্ষেত্রে বেশ জটিলতায় পড়তে হয়। সেই কারণে অনেক মুসল্লিরা এই বিষয়টি মাথায় রেখে পর্যাপ্ত সময় এবং সামর্থ্য নিয়ে এখানে উপস্থিত হন।
বিশ্ব ইজতেমা ২০২৪ ১ম পর্ব
এবারের বিশ্ব ইজতেমা শুরু ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখ থেকে এবং শেষ হবে ৪ ফেব্রুয়ারি। সাধারণ নির্বাচনের কারণে এবারের ইজতেমা একটু দেরিতে শুরু হলেও বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে সকল প্রস্তুতি সকল প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছে সরকার।
বিশ্ব ইজতেমা ২০২৪ ২য় পর্ব
বিশ্ব ইজতেমা ২০২৪ এর প্রথম পর্ব 8 ফেব্রুয়ারি শেষ হয়ে চার দিন বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের কার্যক্রম। এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমা ২০২৪ এর দ্বিতীয় পর্ব।
আরো পড়ুন :- হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার এর মধ্যে পার্থক্য
বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি
বিশ্ব ইজতেমা শুরুর আর মাত্র কিছুদিন বাকি। তাই বিশ্ব ইজতেমায় টঙ্গীর তুরাগ তীরের পাশাপাশি এবার নদীর পশ্চিম পার ও উত্তরার দিয়াবাড়িতে প্যান্ডেল তৈরী করা হয়েছে। টঙ্গীর মূল মঞ্চে পাশাপাশি দিয়াবাড়িতে আরেকটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। তবে টঙ্গীতে অবস্থিত মূল মঞ্চ থেকে দিয়াবাড়ি মঞ্চে প্রযুক্তির মাধ্যমে বয়ান প্রচারিত হবে। কিন্তু ইজতেমা ময়দানের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিবছরের মতো এবারের বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এলাকার আশপাশে বসানো হয়েছে সিসি টিভি এবং ওয়াচ টাওয়ার । এবারের ইজতেমা মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মাঠের ভেতর ও বাইরে একযোগে কাজ করে যাবেন। পুলিশের পাশাপাশি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নজরদারি করবেন । দুই গ্রুপের যাতে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা না হয়, সেই দিকে নজর রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে গত সোমবার একটি মিটিংয়ের আয়োজন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মিটিংয়ে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ ছাড়া সেখানে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের আইজি, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বিশ্ব ইজতেমায় কত লোক হয় ২০২৪
আর কয়েকদিন পর বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে। আয়োজকদের মতে এবারের টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে ১০ লাখ, তুরাগ নদীর পশ্চিম পারে ১লাখ ও দিয়াবাড়িতে ২ লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে আখেরি মোনাজাতে প্রায় ৪০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশগ্রহণ করবেন।
আরো পড়ুন :- ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দুই দফা দাবি
বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমার ইতিহাস
১৯৪৬ সালে বাংলাদেশে কাকরাইল মসজিদের ভেতরে প্রথম বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়।পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্প এবং ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।
দিন দিন জনপ্রিয়তা এবং লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে ১৯৬৬ সালে টঙ্গীর পাগাড় গ্রামের কাছে অর্থাৎ টঙ্গীর মনসুর জুট মিলের নিকটে বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়েছিল। সেই ইজতেমায় বিদেশি কয়েকটি জামাতও অংশ নেয়। এরপর থেকেই এর নাম হয় বিশ্ব ইজতেমা।
১৯৬৭ সালে টঙ্গীর তুরাগ নদীর পারে প্রথমবারের মতো বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার তুরাগ নদীর পারের ১৬০ একর জমি বিশ্ব ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়।
ইতিহাস থেকে জানাযায় বাংলাদেশকে বিশ্ব ইজতেমার স্থান হিসেবে লটারির মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয়েছিল।তবে তাবলিগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নমনে করেন, দেশভাগের পর তৎকালীন পূর্ব বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতে পৃথক ইজতেমার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তখন এক সঙ্গে তিন ভূখণ্ডে ইজতেমা চালু হয় ।
তবে স্বল্প ব্যয়ভার, ভিসাপ্রাপ্তির সহজলোভ্যতা, সাধারণ মুসলমানের আন্তরিকতা, অনুকূল পরিবেশ, সামাজিক ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ইত্যাদি কারণে অধিকসংখ্যক লোকের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের ইজতেমাকে সারা বিশ্বের তাবলিগ জামাতের অনুসারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ফলে এটি বিশ্ব ইজতেমায় পরিণত হয়।
Leave a Reply