বিশেষ প্রতিবেদন :
যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম ও আরব বিদ্বেষ প্রতিরোধে বহুলপ্রতীক্ষিত এক কৌশলপত্র প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) প্রকাশিত ৬৪ পৃষ্ঠার এই নথিতে নির্বাহী শাখার জন্য শতাধিক পদক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
তিনি লিখেছেন, মুসলিম ও আরবরা মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের পাশাপাশি অন্যান্য আমেরিকানদের মতো সমান অধিকার উপভোগের দাবি রাখেন। পুরো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্য সৃষ্টি হয় যে-সব নীতিতে, সেগুলো ভুল। সেসব নীতি আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে না।
ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটিতে উল্লেখযোগ্য হারে বিদ্বেষমূলক অপরাধ বেড়ে গেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মেয়াদ শুরুর আগে বাইডেনের কৌশল প্রকাশিত হলো। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কিছু দেশের নাগরিকের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই বাইডেন সেগুলো বাতিল করেন।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে হোয়াইট হাউজ কর্তৃক প্রকাশিত ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশলের মতোই ব্যাপক সদ্য প্রকাশিত কৌশলপত্র। ছয় বছর বয়সী ওয়াদিয়া আল-ফাইয়ুমের মৃত্যুর এক বছরেরও বেশি সময় পর এটি প্রকাশিত হলো। ফিলিস্তিনি-আমেরিকান ওই শিশু ও তার মাকে একজন মার্কিন ব্যক্তি ছুরিকাঘাত করেছিলেন।
কৌশলপত্রের ভূমিকায় শিকাগোর ওই ঘটনাকে ‘বর্বর’ বলে তার নিন্দা জানিয়েছেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান মুসলিম ও আরব বিদ্বেষ সংক্রান্ত অপরাধ, বৈষম্য ও লাঞ্ছনার প্রবণতাকে ভুল ও অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অবশ্য তার এই কৌশলপত্রকে সবাই আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেনি। মুসলিম নাগরিক অধিকার সংস্থা কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর) হোয়াইট হাউজের সমালোচনা করে বলেছে, ফেডারেল ওয়াচ লিস্ট ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তালিকায় পরিবর্তন এবং গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটানোর কোনও প্রতিশ্রুতি এই ঘোষণায় নেই।
এদিকে, আরব আমেরিকান ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা জিম জোগবি এই কৌশলপত্রের প্রশংসা করে বলেন, এটি কেবল মুসলিমবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের পরিবর্তে আরব বিদ্বেষকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে। তবে হবু ট্রাম্প প্রশাসন এই কৌশল গ্রহণ করবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
কৌশলপত্রে সমর্থন দেওয়ার পক্ষে বা বিপক্ষে কোনও মন্তব্য করেনি ট্রাম্প শিবির।
গাজা যুদ্ধে বাইডেনের অবস্থানের কারণে ক্ষুব্ধ ছিলেন অনেক মার্কিন মুসলিম ভোটার। ট্রাম্প তাদের অনেকের সমর্থন পেয়েছেন। ভিন্ন এক বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকার প্রশ্নবিদ্ধ করে এমন ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করবেন তিনি। এছাড়া ইহুদি বিদ্বেষী বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা হবে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে প্রবেশ করে হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনপন্থি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে চলেছে। ইহুদিবিদ্বেষ, আরব বিদ্বেষ ও ইসলামভীতির উত্থান নিয়ে সতর্ক করে আসছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
Leave a Reply