বিশেষ প্রতিবেদন :
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এসে দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত। শনিবার দেশের সাত জেলার তাপমাত্রা দশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বা আশপাশে অবস্থান করছিল। এর মধ্যে চার জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। জেলাগুলো হলো-পঞ্চগড়, রাজশাহী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা।
এই শৈত্যপ্রবাহ আরও এলাকায় বিস্তার লাভ করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ২, রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৭, যশোরে ১০, ঈশ্বরদীতে ১০ দশমিক ২, বদলগাছিতে ১০ দশমিক ৩, গোপালগঞ্জে ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। সাধারণত ৮ দশমিক ১ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা বিরাজ করলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। চলতি শীতের মৌসুমে দেশে প্রথম শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে শুক্রবার।
এদিন তিন জেলায় শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও শনিবার এর আওতা বেড়ে হয়েছে চার জেলায়। আবহাওয়া অফিসের নিয়মিত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পঞ্চগড়, রাজশাহী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। এদিকে তীব্র শীতের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সকালে কাজের সন্ধানে বের হওয়া শ্রমজীবী মানুষ। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছেন অনেকে। মানুষের ভিড় বেড়েছে ফুটপাতের গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে। শীতের কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছেন শীতজনিত নানা অসুখ-বিসুখে। টানা শীত ও কুয়াশার কারণে রবিশস্যের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
রাজশাহী : রাজশাহীতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। পরপর দুদিন ভোরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে উত্তরের এই জনপদ। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার ভোর ৬টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এ অঞ্চলে এবারের শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। পরদিন শনিবারও ভোর ৬টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা একই পাওয়া যায়। এর আগে বৃহস্পতিবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ২২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তীব্র শীতের কারণে রাজশাহীতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সকালে কাজের সন্ধানে বের হওয়া শ্রমজীবী মানুষ। ভিড় বেড়েছে ফুটপাতের গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের উচ্চ পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, দুদিন ধরে রাজশাহীতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। আবহাওয়া আরও দু-একদিন এমন থাকতে পারে।’
কুড়িগ্রাম : ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে জেঁকে বসেছে শীত। কনকনে শীতে কাবু হয়ে পড়েছেন জেলার নিম্নআয়ের মানুষরা। পুরো জনপদ কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে। শনিবার কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলা শহরের একাধিক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির মতো ঝরেছে কুয়াশা। ঘন কুয়াশার কারণে জেলা সদরের মোগলবাসা নৌঘাট, যাত্রাপুর নৌঘাট ও চিলমারী নৌবন্দর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত কোনো যাত্রীবাহী নৌকা ও ফেরি ছাড়তে পারেনি। ফলে চিলমারী নৌবন্দরে আটকা পড়েছে পাথর বোঝাই ট্রাকগুলো।
অন্যদিকে যাত্রীরা সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছেন না। ঘন কুয়াশার কারণে প্রায় ৩ ঘণ্টা বিলম্বে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামে এসে পৌঁছায়। রংপুরগামী বাসগুলো ১ ঘণ্টা বিলম্বে কুড়িগ্রাম বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে গেছে।
ট্রাকচালক আয়নাল হক বলেন, শুক্রবার বিকালে সোনাহাট থেকে পাথর নিয়ে এসেছি বন্দরে। কিন্তু কুয়াশার কারণে ফেরি ছাড়ছে না। যাত্রাপুর নৌঘাটের নৌকাচালক আব্দুস ছামাদ বলেন, ‘সকাল ৯টার সময়ও নদীতে কত কুয়াশা। কিছুই দেখা যায় না। নাও চালাব কেমন করি।’
কুমিল্লা : কুমিল্লাজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত। সূর্যের দেখা নেই তিন দিন ধরে। জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আরও দুই থেকে তিন দিন বিরাজ করবে এমন পরিস্থিতি। কুমিল্লায় শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ছিল ১৫.০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। কুয়াশার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের গতি অর্ধেকে নেমে এসেছে। কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে কাজের সন্ধানে আসা ইউসুফ, সোহেল ও গিয়াস উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক বলেন, ঘন কুয়াশা এবং তীব্র শীতে তাদের কাজ কমেছে। কাকডাকা ভোরে হাজির হলেও বেলা ১০টা পর্যন্ত কাজে নেয়নি কেউ। কুমিল্লার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় সর্বনিম্ন ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শেরপুর : শীতের দাপট বেড়ে চলেছে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরে। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর কুয়াশার কারণে তীব্র শীতে মানুষ কষ্টে রয়েছেন। শীত ও কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে।
চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার পদ্মা নদী ঘেঁষে চরাঞ্চলের পরিবারগুলোতে শীতের দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে। ঘরে চাল নেই, শীতবস্ত্র নেই, নুন আনতে পান্তা ফুরায় এ রকম হতদরিদ্র পরিবারের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। এ বছর সরকারি-বেসরকারিভাবে এখনো কোনো শীতবস্ত্র পাননি বলে জানিয়েছেন দুস্থরা।
Leave a Reply