বিশেষ প্রতিবেদন :
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে চাকরিচ্যুত ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা তিন দফা দাবিতে ঢাকার জাহাঙ্গীর গেইটের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
তাদের এ অবরোধের কারণে রোববার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে বলে তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন জানান।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে চাকরিচ্যুত ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্ল্যাটফর্ম ‘সহযোদ্ধা’র ব্যানারে রোববার সকাল ৮টার দিকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। তাদের পরিবারের সদস্যরাও কর্মসূচিতে যোগ দেন।
পরে বেলা ১১টার দিকে তারা রাস্তা আটকে বসে পড়লে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বনানীর দিকে যাওয়া আসা এবং সেনানিবাসে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আশপাশের এলাকায় তৈরি হয় ব্যাপক যানজট।
কর্মসূচি চলার সময় তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন বলেন, “তারা সড়কে অবস্থান নেওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার তানিয়া সুলতানা বলেন, “জাহাঙ্গীর গেইট এলাকায় যান চলাচল বন্ধ থাকায় চারপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশের ক্রাইম ডিভিশন ও সেনাবাহিনী রয়েছে। আমরা অন্যান্য সড়কগুলোতে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করছি।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান বলেন, “জাহাঙ্গীর গেট ছাড়াও শাহবাগ মোড়ে চিকিৎসকরা অবস্থান নিয়েছে। ফলে ট্রাফিক ব্যবস্থা স্বাভাবিক নেই। ডাইভারশন করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
এক পর্যায়ে সেনানিবাস থেকে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা বিক্ষোভস্থলে এসে ‘সহযোদ্ধার’ প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন।
তাদের আশ্বাস পেয়ে বেলা ১টার দিকে আন্দোলনকারীরা রাস্তা ছেড়ে দিলে আবার যানবাহন চলাচল শুরু হয় বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।
সহযোদ্ধার তিন দফা দাবি হল-
১. বিগত সরকারের আমলে যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের চাকরিচ্যুতির সময় থেকে বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে।
২. যদি কাউকে কোনো কারণে চাকরিতে পুনর্বহাল করা না যায়, তাহলে সকল সরকারি সুযোগ সুবিধা দিয়ে তাকে পেনশনের আওতায় আনতে হবে।
৩. যে আইনি কাঠামো ও বিচার ব্যবস্থায় তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তার সংস্কার করতে হবে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন সাবেক সেনাসদস্য বলেন, সামরিক বাহিনীর কিছু কর্মকর্তা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে একতরফা বিচারের মাধ্যমে শত শত সদস্যকে চাকরিচ্যুত করেছে। তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কাউকে কাউকে আয়নাঘরে বন্দি করে অমানবিক নির্যাতনও করা করেছে।
সেনাবাহিনীতে যে এখনো ব্রিটিশ আমলের আইন বলবৎ রয়েছে, তা তুলে ধরে আইন সংস্কারের দাবিও জানান বিক্ষোকারীরা।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে স্মারকলিপি দেন চাকরি হারানো সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা, যারা গত ১৫ বছরে বিভিন্ন সময়ে সরকারের ‘রোষানলে পড়ে’ চাকরি হারানোর অভিযোগ করছেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, “মিথ্যা অভিযোগ এনে পর্যাপ্ত প্রমাণাদি ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অনৈতিক কোনো কাজের প্রতিবাদসহ পারিবারিক-রাজনৈতিক কারণেও কাউকে কাউকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।”
এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মাববন্ধন করে বকেয়া বেতন-ভাতাসহ চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানান ৫০ জনের বেশি চাকরিচ্যুত সেনাসদস্য।
Leave a Reply