বিশেষ প্রতিবেদন :
চট্টগ্রাম নগরের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নাম পরিবর্তন করে শহীদ ওয়াসিম উদ্দিনের নামে করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে যান চলাচল শুরুর আগে এক্সপ্রেসেওয়ের নাম পরিবর্তন করা হলো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে চট্টগ্রামে প্রথম শহীদ হন চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ওয়াসিম উদ্দিন। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নিশ্চিত করেছে।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় এই উড়ালসড়কের পতেঙ্গা প্রান্তে টোল আদায়ের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
এরপর ১০টা ২০মিনিটে প্রথম মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন তার গাড়ির টোল প্রদান করেন। বর্তমানে উড়ালসড়কটির পতেঙ্গা প্রান্তে ৪টি বুথের মাধ্যমের দুদিকের টোল আদায় করা হবে। পরবর্তীতে লালখান বাজারসহ ১০টি পয়েন্টে র্যাম্প স্থাপনের পর সেখানেও টোল আদায় করা হবে।
শুরুতে উড়ালসড়কটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে নামকরণ করা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি এটির নাম বদলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ হওয়া ওয়াসিম আকরামের নামে নতুন করে নামকরণ করা হয়েছে।
প্রকল্পটির পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এক্সপ্রেসওয়ের নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, এর আগে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর টোল নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। পরে তা স্থগিত করা হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্ধারণ করা টোলের হার পরিবর্তন করে গত বছরের ৩ নভেম্বর নতুন প্রস্তাব পাঠায় চউক। ২৭ নভেম্বর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় টোলের হার চূড়ান্ত করে।
চউকের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টোল আদায়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন থেকে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে টাকা দিতে হবে। নগরের পতেঙ্গা প্রান্তে টোল আদায় করা হবে। এখন চউক টোল আদায় করবে। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে।
এর আগে, ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই উড়ালসড়কটি উদ্বোধন করেন। তবে উদ্বোধনের পরও উড়ালসড়কটি পুরোপুরি যানচলাচলের জন্য প্রস্তুত ছিল না। এক্সপ্রেসওয়ে চট্টগ্রাম শহরের যানজট কমানোর পাশাপাশি বিমানবন্দর যাতায়াত সহজ করতে নির্মিত হয়েছে। সড়কটির কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হওয়ায় এখন যানচলাচল অনেক বেশি নির্বিঘ্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জানায়, এক্সপ্রেসওয়েটি দিয়ে ১০ ধরনের গাড়ি চলাচল করতে পারবে। এটিতে মোটরসাইকেল এবং ট্রেইলর ওঠানামার সুযোগ রাখা হয়নি। চূড়ান্ত হওয়া টোলের হার অনুযায়ী, সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ৩০ টাকা, কারজাতীয় গাড়ি ৮০ টাকা, জিপ ও মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, পিকআপ ভ্যান ১৫০ টাকা, মিনিবাস ও ট্রাক (চার চাকা) ২০০ টাকা এবং বাসকে ২৮০ টাকা দিতে হবে। এছাড়া ট্রাক (৬ চাকা) ৩০০ টাকা এবং কাভার্ডভ্যানকে ৪৫০ টাকা টোল দিতে হবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম মূল শহর থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, শহরের যানজট কমিয়ে আনার পাশাপাশি যাত্রাপথের দূরত্ব কমাতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। তবে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী এর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। প্রথমে ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়।
এরপর বিভিন্ন সময় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে তা ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তবে সবশেষ সিডিএর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাজের সময় আরও একবছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এছাড়া সিডিএ ১ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি সাত লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা।
Leave a Reply