বিশেষ প্রতিবেদন :
গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে বিদ্রোহী এম টোয়েন্টিথ্রি গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষে জাতিসংঘের ১৩ শান্তিরক্ষীর মৃত্যুর খবর দিয়েছে বিবিসি।
দক্ষিণ আফ্রিকার সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গোমা শহরে বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে গিয়ে তাদের নয় সেনা নিহত হয়েছে। এ সময়ে মালাউইয়ের তিন সেনা এবং উরুগুয়ের একজন মারা গেছে।
সেখানে সহিংসতার অবসান ঘটাতে বৈশ্বিক আহ্বানের মধ্যে কঙ্গো ও রুয়ান্ডার নেতাদের সঙ্গে কথা বলার কথা জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ।
সহিংসতা তীব্র হয়ে ওঠায় জাতিসংঘের তরফে অপ্রয়োজনীয় কর্মীদের গোমা শহর থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মধ্য আফ্রিকার দেশটির এই শহরে দশ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস।
উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় প্রাণক্ষয়ী সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পূর্বনির্ধারিত সোমবারের বৈঠক একদিন এগিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিদ্রোহী এম টোয়েন্টিথ্রি গোষ্ঠী রক্তপাত এড়াতে কঙ্গোর সেনাদের গোমায় আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে বিদ্রোহের পেছনে মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে রুয়ান্ডার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে কঙ্গো।
বিবিসি লিখেছে, পরিস্থিতি দেখতে বের হওয়া কঙ্গো সামরিক বাহিনীর এক গভর্নর বৃহস্পতিবার এম টোয়েন্টিথ্রি যোদ্ধাদের হাতে নিহত হওয়ার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জানুয়ারির শুরুতে তারা কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় শহর মিনোভা ও মাসিসির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট কার্যালয় জানিয়েছে, সংঘাতের অবসান ঘটাতে কঙ্গো ও রুয়ান্ডার নেতাদের সঙ্গে আলাদাভাবে ফোনে কথা বলেছেন মাক্রোঁ।
রুয়ান্ডা সীমান্ত সংলগ্ন কঙ্গোর গোমা শহরে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করেন। ছবি: রয়টার্স
রুয়ান্ডা সীমান্ত সংলগ্ন কঙ্গোর গোমা শহরে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করেন। ছবি: রয়টার্স
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কালাস এম টোয়েন্টিথ্রির অগ্রযাত্রা থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির প্রতি রুয়ান্ডার সমর্থনের নিন্দা জানিয়েছেন।
শান্তিরক্ষী হতাহতের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন অ্যাঙ্গোলার প্রেসিডেন্ট জোআং লুরেসু, যিনি আফ্রিকান ইউনিয়নের রুয়ান্ডা ও কঙ্গোর মধ্যস্থাকারীর দায়িত্বে রয়েছেন।
এম টোয়েন্টিথ্রি ও এর সমর্থকদের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডের’ নিন্দা জানিয়ে তিনি বেসামরিক মানুষের জীবন রক্ষার স্বার্থে অবিলম্বে লড়াই বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবিসি লিখেছে, এম টোয়েন্টিথ্রি ও কঙ্গো সেনাবাহিনীর মধ্যকার লড়াই বছরের শুরুতে তীব্রতর হয়ে উঠেছে, বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি আগের চাইতে আরও বেশি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সংঘাতের মধ্যে এবছরই চার লক্ষাধিক মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন।
স্থানীয় নেতারা গত সপ্তাহে বলেছিলেন, এম টোয়েন্টিথ্রি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় দুই শতাধিক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। গোমার হাসপাতালগুলোতে শতাধিক রোগীর চিকিৎসা চলছে।
গোমার অ্যাংলিকান বিশপ মার্টিন গর্ডন বিবিসিকে বলেন, দেশটিতে লড়াই ‘অনেক দীর্ঘ’ হয়ে গেছে এবং জনগণ ‘শান্তির জন্য সবকিছু করতে পারে’।
গত কয়েকদিন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশ নিজেদের নাগরিকদের গোমা ছাড়তে বলেছে।
কঙ্গোর সেনাদের সঙ্গে এম টোয়েন্টিথ্রি বিদ্রোহীদের লড়াইয়ের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকদের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। মানবাধিকার সংস্থাটি উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের গুরুতর নির্যাতনের অভিযোগ করেছে।
জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, চলমান সংঘাত এই অঞ্চলের মানবিক সংকটকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে।
বিবিসি লিখেছে, এম টোয়েন্টিথ্রি খনিজ সমৃদ্ধ পূর্ব কঙ্গোর বিস্তীর্ণ অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ২০২১ সালে। তাতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
কঙ্গো ও জাতিসংঘ বলে আসছে, এম টোয়েন্টিথ্রিকে সমর্থন দিয়ে আসছে রুয়ান্ডা। এই বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার- কোনোটাই করেনি রুয়ান্ডা কর্তৃপক্ষ।
রুয়ান্ডা এর আগে বলে আসছিল, ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, সেই তুতসি ও মধ্যপন্থি হুতুদের গণহত্যার জন্য দায়ী কয়েকজনের সঙ্গে কাজ করছে কঙ্গো।
দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়ন ও বৈষম্যের অভিযোগ করে আসা পূর্ব কঙ্গোতে তুতসি জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষার কথা বলে ২০১২ সালে আরেকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর শাখা হিসেবে এম টোয়েন্টিথ্রি গঠিত হয়।
তবে সমালোচকদের অভিযোগ, কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের স্বর্ণ, কোবাল্ট ও ট্যানটালামের মতো খনিজ সম্পদ লুট করতে এম টোয়েন্টিথ্রিকে ব্যবহার করছে পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডা।
Leave a Reply