ডেস্ক রির্পোট:
মিয়ানমারে জাতিগত সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন চলে আসছে প্রায় ৭ দশক ধরে। ৭০ বছর আগে কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের বিপ্লবীরা মিয়ানমারের কারেন জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় আন্দোলন শুরু করেন। তারপর থেকে আজ অবধি ৫০টির বেশি সশস্ত্র মিয়ানমারে লড়াই করে চলেছে।
জাতিসংঘে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত হা দো সুন ১০ অক্টোবর জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনের ষষ্ঠ কমিটিতে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দূরীকরণের ব্যবস্থা’ বিষয়ক আলোচনায় মাত্র একটি বিদ্রোহী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কথাই জোর দিয়ে বলেছেন।
তিনি বলেন, মিয়ানমার সন্ত্রাসবাদের ক্রমবর্ধমান হুমকির সম্মুখীন হয়েছে বিশেষত আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) থেকে। মিয়ানমার বর্তমান সন্ত্রাসবাদী হুমকির বিষয়ে ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন।
মিয়ানমারের শাসকদল আর সেনাবাহিনীতে বর্মি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি। দেশটিতে বর্মি নাগরিকের সংখ্যা মোট জনগোষ্ঠীর ৬৮ শতাংশ। বাকি ৩২ শতাংশের মানুষ ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর।
সংখ্যাগরিষ্ঠ বর্মিরা দেশটির ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর অধিকার দিতে বাধা সৃষ্টি করায় বর্তমানে মিয়ানমারে ৫৩টি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে, যারা গৃহযুদ্ধে লিপ্ত। এদের মধ্য কিছু জনগোষ্ঠী রয়েছে যাদের মিয়ানমার সরকার নিজেদের লোক বলেই স্বীকার করে না। এর মধ্যে আছে—রোহিঙ্গা, অ্যাংলো বার্মিজ, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান এবং বার্মিজ ইন্ডিয়ানসহ আরও বেশকিছু জাতিগোষ্ঠী। ১৩৫টি জাতিকে মিয়ানমার সরকার ৮টি প্রধান ভাগে ভাগ করেছে। এই ভাগাভাগি জাতিভিত্তিক নয়, হয়েছে প্রদেশ অনুসারে। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব মিয়ানমারে কারেনদের বাস। মূলত অনেকগুলো সিনো-তিব্বতীয় ভাষাভাষীদের কারেন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ফেলা হয়।
১৯৪৯ সাল থেকে মিয়ানমার ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের এক বছর পরই দেশটির অসংখ্য নৃগোষ্ঠী সশস্ত্র প্রতিরোধ লড়াই শুরু করেছিল। মূলত বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের জন্যই তারা লড়াই করে। কারেন, কাচিন, পা-ওহ, শান, সোম, কেরেনি, আখা, কোকাং, পালাং, ওয়া, মংলা, লাহু, আরাকান, চিন, কায়ান ও নাগা নৃগোষ্ঠীর মধ্যে কমপক্ষে ৫৩টি বিদ্রোহী বাহিনী ও দল গঠিত হয়, এসব বাহিনী নিজ নিজ জাতিগোষ্ঠীর অধিকার দাবি করেছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ বর্মি সরকার তাদের অধিকার পুরোপুরি দিতে চায়নি।
১৯৫৮, ১৯৬৩, ১৯৮০, ১৯৮৯, ১৯৯০ এবং ২০১১ সালে বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন ও সরকার কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যকার যুদ্ধ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া সত্ত্বেও শান্তি আসেনি মিয়ানমারে। উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গৃহযুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। ২০১১ সালে মিয়ানমারের পশ্চিমে ২ লাখ মানুষ বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্তের প্রায় ১ লাখ মানুষ শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। ২০১৭ সালে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে।
মিয়ানমার দাবি করছে, ২০১৬ সাল থেকে দেশটির একাধিক সুরক্ষা ঘাঁটিতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। রোহিঙ্গা বিতাড়িত হয়েছে বিদ্রোহীগোষ্ঠীর ভয়ে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দৃষ্টিতে এখানে ‘গৃহযুদ্ধ’ শব্দটি প্রযোজ্য নয়। দেশটির সেনাবাহিনী এ বছরের শুরুতে মিডিয়াকে এ শব্দটি ব্যবহারে সাংবাদিক এবং জনসাধারণকে কঠোর পরামর্শ দিয়েছিল।
সেনাবাহিনীর প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল তুন তুন নি ‘গৃহযুদ্ধ’ শব্দটি ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, এটিকে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান বা আঞ্চলিক সশস্ত্র সংঘাত হিসেবে উল্লেখ করা উচিত। নব্বইয়ের দশকে কাচিন, কায়াহ, সোম এবং শান রাজ্যে আংশিক যুদ্ধবিরতির কাল চলে। তবে ২০১০ সালের মধ্যে ২০টি নতুন জাতিগত সশস্ত্র দল তৈরি হয়।
২০১৩ সালে মিয়ানমার পিস মনিটরের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, মিয়ানমারে প্রায় ৫০টির বেশি জাতিগত সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে, যার মধ্যে বিপ্লবী সশস্ত্র দল, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সরকার-সমর্থিত মিলিশিয়া এবং ছোট বিদ্রোহী দল রয়েছে। মিয়ানমার সরকার বর্তমানে ১৮টি গ্রুপের সঙ্গে শান্তি আলোচনা করছে। এদের মধ্যে দেশব্যাপী যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ১০ এবং অন্য ৮টি গ্রুপ স্বাক্ষরকারী নয়। বাকিগুলোর গ্রুপগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।
তথ্যসূত্র-বার্তা24
Leave a Reply