বিশেষ প্রতিবেদন :
মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবিতে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাগপুর শহরে বিক্ষোভের ফলে সৃষ্ট সহিংসতায় ৩৩ পুলিশ আহত হয়েছে। এই ঘটনায় ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বর্তমানে শহরটিতে কারফিউ জারি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ দাবি করেছেন, এই সহিংসতা পূর্বপরিকল্পিত ছিল। তিনি এর জন্য ‘ছাবা’ নামের বলিউডের একটি সিনেমাকে দায়ী করেছেন। এই সিনেমা মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শিবাজীর জ্যেষ্ঠ পুত্র সম্ভাজি মহারাজের জীবন কাহিনী নিয়ে তৈরি। এতে সম্ভাজির ওপর আওরঙ্গজেবের তথাকথিত নৃশংস অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
সোমবার রাতে নাগপুরের পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হতে শুরু করে। শহরটির একাধিক এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে এবং একাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে ৩৩ জন পুলিশ আহত হয়েছে।
মঙ্গলবার মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে ফড়নবিশ বলেন, ‘সহিংসতায় তিনজন ডেপুটি কমিশনার সহ ৩৩ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন এবং একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর কুড়াল দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নাগপুর শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে।’
এদিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আটওয়ালে বলেছেন, ‘ছাবা সিনেমাটি ১৭ শতকের মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে মানুষের অনুভূতি উস্কে দিয়েছে। এর ফলে আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবি নিয়ে একটি আন্দোলন চলছে। ৫০০ বছর ধরে কবরটি সেখানে রয়েছে। কিন্তু এই সিনেমাটিতে তিনি যেভাবে সম্ভাজি মহারাজকে হত্যা করেছিলেন বলে দেখানো হয়েছে, তাতে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছে।’
সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি অপসারণের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করছে বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো কট্টর ডানপন্থী সংগঠনগুলো। নাগপুরের পুলিশ কমিশনার রবীন্দর কুমার সিংহল জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নাগপুরের সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মিলিন্দ পারান্ডে এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছেন, ‘একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের একটি অংশ এই আক্রমণ এবং অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে। তারা আমাদের যুব শাখা বজরং দলের কর্মীদের বাড়িতেও হামলা করেছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এই সমস্ত কিছুর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।’
কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি (এএপি) এবং তৃণমূল কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো এই সহিংসতার জন্য বিজেপিকে দায়ী করেছে। এএপির সাংসদ সঞ্জয় সিং বলেছেন, ‘বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে নাগপুর এবং সমগ্র মহারাষ্ট্রে ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টা করে আসছে। যতক্ষণ বিজেপি আছে, ততক্ষণ ভারতে শান্তি থাকতে পারে না।’
উল্লেখ্য, সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি মহারাষ্ট্রের সম্ভাজিনগর জেলার খুলদাবাদে অবস্থিত। আগে এই জেলার নাম ছিল আওরঙ্গাবাদ। সম্ভাজির নামে বর্তমানে এটির নাম সম্ভাজিনগর রাখা হয়েছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা দীর্ঘদিন ধরেই এই কবরটি সরানোর দাবি জানিয়ে আসছে।
Leave a Reply