বিশেষ প্রতিবেদন :
মিয়ানমারে গত ২৮ মার্চ ২০২৫ তারিখে সংঘটিত ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ৫৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি উদ্ধারকারী ও মেডিকেল দল প্রেরণ করা হয়। পাশাপাশি, ৩০ মার্চ ২০২৫ থেকে ১২ এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত তিন ধাপে পাঁচটি বিমান ও একটি নৌযানের মাধ্যমে সর্বমোট ১৫১.৫ টন মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে । এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য, ওষুধ, তাঁবু, বিশুদ্ধ পানী, কম্বল, পোশাক, স্বাস্থ্যবিধি সামগ্রীসহ বিভিন্ন জরুরি সামগ্রী।
মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশ উদ্ধারকারী দলকে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তিনটি আংশিক ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী উদ্ধার করার দায়িত্ব প্রদান করে, যা তারা সফলভাবে সম্পন্ন করে। পাশাপাশি, নেপিডোর বিভিন্ন এলাকায় ৪৫টি ক্ষতিগ্রস্ত আবাসিক ভবন, ক্লিনিক, শপিং মল ইত্যাদির ঝুঁকিপূর্ণ ও নিরাপদ স্থান চিহ্নিত করতে সহায়তা করে। এছাড়া, নেপিডো সেন্ট্রাল ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনে যৌথ উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ দল একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে এবং উক্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী পরবর্তীতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ উদ্ধার কাজ পরিচালনা করে। এছাড়াও, সামরিক ও অসামরিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশের মেডিকেল টিমটি ১৭টি জটিল অস্ত্রোপচারসহ সর্বমোট ৮৮৫ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে।
সফল অভিযান শেষে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ‘বানৌজা সমুদ্র অভিযান’ এর মাধ্যমে উদ্ধারকারী ও মেডিকেল দলটি গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের এই উদ্ধারকারী ও চিকিৎসা সহায়তাকারী দলটিকে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ কর্তৃক আজ (১৬ এপ্রিল ২০২৫) বিশেষ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। উক্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান, বিএসপি, এনডিসি, এইচডিএমসি, পিএসসি, পিএইচডি উদ্ধারকারী ও চিকিৎসক দলের প্রত্যেক সদস্যকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন।
মিয়ানমারের ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ সরকারের প্রেরিত মানবিক সাহায্য এবং বাংলাদেশ উদ্ধারকারী ও চিকিৎসক দলের মানবিক কার্যক্রম বাংলাদেশের জনগণের তাদের প্রতিবেশীর প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ এবং সংস্কৃতির পরিচায়ক। এই সংকটকালে বাংলাদেশের সহানুভূতিশীল ও মানবিক ভূমিকা দুই দেশের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে। ভবিষ্যতেও দেশ-বিদেশে যেকোনো দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সরকারের নির্দেশে সদা প্রস্তুত ও অঙ্গীকারবদ্ধ।
Leave a Reply